স্থাপত্যের জোড়া প্রাণ

Author Topic: স্থাপত্যের জোড়া প্রাণ  (Read 1021 times)

Offline Md. Rashadul Islam

  • Newbie
  • *
  • Posts: 29
  • Test
    • View Profile
বসুন্ধরা সিটি, গ্রামীণফোন হেডকোয়ার্টার, চট্টগ্রামের রেডিসন হোটেলসহ বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সুরম্য ভবনের স্থপতি মুস্তাফা খালীদ পলাশ ও শাহজিয়া ইসলাম অন্তন দম্পতির প্রতিষ্ঠান ভিস্তারা আর্কিটেক্টস। তাঁদের নিয়ে আজকের প্রচ্ছদ। লিখেছেন নাদিম মজিদ, ছবি তুলেছেন সাজেদুল ইসলাম শুভ্র

মুস্তাফা খালীদ পলাশ

১৯৬৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে জন্ম। সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক, বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বুয়েট থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। ১৯৮৮ সালে যোগ দেন প্রস্থাপনা লিমিটেডে। ১৯৯৪ সালে বুয়েটে শিক্ষকতায়। একই বছর ভিস্তারা আর্কিটেক্টসের যাত্রা শুরু।

 

শাহজিয়া ইসলাম অন্তন

১৯৬৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ওয়ারি র‌্যাংকিং স্ট্রিটে জন্ম। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ঢাকা থেকে মাধ্যমিক, হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বুয়েট থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। ১৯৮৮ সালে যোগ দেন প্রস্থাপনা লিমিটেডে। ১৯৯৪ সালে তাঁদের প্রতিষ্ঠান ভিস্তারা আর্কিটেক্টস যাত্রা শুরু করে।

স্থাপত্যের জোড়া প্রাণগ্রামীণফোন হেডকোয়ার্টার

চাচা ড. সিরাজুল ইসলাম ছিলেন বিজ্ঞান জাদুঘরের পরিচালক আর বাবা কে এম জি মুস্তাফা এবং মা আফরোজ মুস্তাফা ছিলেন চিত্রকলার মানুষ। বিজ্ঞান ও চিত্রকলা দুটোই তাঁকে টানত। আর ভালো লাগা দুটো বিষয়কে সমন্বয় করতে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার কদিনের মধ্যেই বিভাগের শিক্ষক ও ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নজর কাড়েন মুস্তাফা খালীদ পলাশ। বুঝতে পারেন, তাঁর চিন্তাভাবনা আলাদা। দারুণ ছবি আঁকতে পারেন। সেতার বাজানোতে হাত পাকা। সহপাঠী শাহজিয়া ইসলাম অন্তন বলেন, 'ক্লাসের ৪৯ জন একভাবে চিন্তা করত, আর পলাশ চিন্তা করত আলাদাভাবে। তার চিন্তাটাকেই আমার মনে হতো সেরা।'

স্ত্রীর প্রশংসা শুনে হাসলেন পলাশ-'অন্তন নিজের কথা কিছু বলছে না। সে ভালো রবীন্দ্রসংগীত গায়। তার রয়েছে মাতৃসুলভ আচরণ।'

১৯৮৮ সালে বুয়েট থেকে পাস করে বের হয় এ দম্পতি। পলাশ প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয়। যোগ দেন 'প্রস্থাপনা লিমিটেড' নামে একটি আর্কিটেকচার ফার্মে। তখনো আর্কিটেকচার ফার্মের ক্ষেত্র আমাদের দেশে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিভিন্ন জন তাঁকে দিয়ে ডিজাইন করিয়ে নিত কিন্তু পয়সাপাতি দিত না। আয় হচ্ছিল না। চলতে হচ্ছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ১৯৯৪ সালে নিজের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষকতার ডাক আসে। নিজের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে যোগ দেন প্রভাষক হিসেবে।

১৯৮৮ সালে অন্তন যোগ দেন প্রস্থাপনা লিমিটেডে। তিন বছর কাজ করার পর বড় ছেলে নৈঋতের জন্ম হলে এক বছর বিরতি নেন। পরের বছর একই প্রতিষ্ঠানে আবার কাজ শুরু করেন।

স্থাপত্যের জোড়া প্রাণ হোটেল রেডিসন

ভিস্তারা আর্কিটেক্টস

১৯৯৪ সালে ছোট পরিসরে ভিস্তারা আর্কিটেক্টসের যাত্রা শুরু। অফিস গুলশান-১-এ। ১৯৯৭ সালে পান্থপথে নির্মাণ করেন ইউটিসি বিল্ডিং। পরের বছর বসুন্ধরা সিটি নির্মাণের জন্য ডাক পান। সে শপিং মল নির্মাণ শেষ হয় ২০০৪ সালে। প্রতিষ্ঠা হলে শুরু হয় চারদিকে হইচই। ভবনের পরিকল্পনা দেখে সবাই খুশি। ভবনের সামনে ফোয়ারা। দুই লেনের রাস্তা। বসুন্ধরা সিটি নির্মাণে পলাশের সঙ্গে ছিলেন আরেক জন স্থপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ। তারপর ভিস্তারা আর্কিটেক্টসকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নির্মিত হয়েছে ওয়েস্টিন ঢাকা, গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংকের সদর দপ্তর, গ্র্যান্ড ডেলভিস্তা, ইউনিক ট্রেড সেন্টার, আবদুল মোনেম ফিন্যান্সিয়াল ডিসট্রিক্ট, রেডিসন বে ভিউ হোটেল (চট্টগ্রাম), হিলটন (ঢাকা), ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল ইত্যাদি।

২০০৫ সালে গ্রামীণফোন তাদের সদর দপ্তরের নির্মাণ নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আহ্বান করে। প্রতিযোগিতায় তিনটি দেশীয়, ব্রিটিশ এবং নরওয়ের প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবনা প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়। এর মধ্যে নরওয়ের প্রতিষ্ঠান এনবিবিজে ছিল গ্রামীণফোনের মূল মালিক টেলিনরের সদর দপ্তরের নির্মাতা। সব প্রতিষ্ঠান পেছনে ফেলে ভিস্তারা আর্কিটেক্টস কাজটি পেয়ে যায়। পলাশ জানান, 'আমরা আন্তর্জাতিক মানের কাজ করে থাকি। পাশাপাশি আমাদের ছিল দেশীয় উপাদান নিয়ে অভিজ্ঞতা। ভবনের নকশায় আমরা দেশজ ঐতিহ্য, জীবনধারা, অফিসরীতি এবং সবুজকে প্রাধান্য দিয়েছিলাম।'

 ডেলভিস্তা ফাউন্ডেশন

ভিস্তারা আর্কিটেক্টস সামাজিক কাজে অংশ নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করে ডেলভিস্তা ফাউন্ডেশন। এ প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করেন স্থপতি শাহজিয়া ইসলাম অন্তন। ৩০ জন গরিব শিক্ষার্থীর পড়াশোনার পূর্ণ খরচ বহন করছে এ প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে বাসার কাজের বুয়া, দারোয়ান কিংবা গাড়ির ড্রাইভারের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার বিষয়ে সহযোগিতা করা হয়। 'আমাদের বাসার দারোয়ানের ছেলেকেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছি,' জানান অন্তন।

প্রতি মাসে চারজন দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়মিত অনুদান দেওয়া হয়। এ প্রতিষ্ঠানের আওতায় সংগীত এবং চিত্রকলার প্রসারের কাজও হচ্ছে। স্থাপত্য, চিত্রকলা, সংগীত এবং জীবনীভিত্তিক ১০টি বই ও সংগীতের ১৩টি সিডি প্রকাশিত হয়েছে।

বিদেশে বাংলাদেশকে উপস্থাপনের কাজ করে যাচ্ছে ডেলভিস্তা ফাউন্ডেশন। গেল বছরের ২৫-২৬ এপ্রিল কলকাতায় প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এতে স্থান পায় বাংলাদেশের পত্রিকা, বিলবোর্ড এবং ৬০টি প্রকল্পের নকশা। সাড়া পড়ে বেশ। মুস্তাফা খালীদ পলাশ জানান, প্রতিবছর এ ধরনের প্রদর্শনী বিভিন্ন দেশে আয়োজন করতে চাই। এতে বাংলাদেশের স্থাপত্যশৈলী ফুটে উঠবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।'

স্থাপত্যের জোড়া প্রাণ মুস্তাফা খালীদ পলাশের চিত্রকর্ম

হচ্ছে স্থাপনার আর্কাইভ

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থাপনার আর্কাইভ তৈরির কাজ করছে এই দম্পতি। এতে স্থাপত্যবিদ্যায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জ্ঞান বিনিময়ের কাজ সম্ভব হবে। অন্তন জানান, 'আমাদের তৈরি ভবনগুলোর বিষয়ে স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীদের আগ্রহ আছে। নকশার পাশাপাশি বর্ণনাগুলোর গুরুত্ব রয়েছে তাদের কাছে। আমাদের ভবনগুলোর তথ্য সহজলভ্য করতে বনানীতে একটি আর্কাইভ তৈরি করছি।'

তাঁদের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। অফিস শেষ হলে দুজনে বসে যান সংগীত সাধনায়। সময় পেলে পলাশ ছবি আঁকেন। তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনী কনফ্লিক্ট অব টিয়ার্স অ্যান্ড হারমনি প্রদর্শিত হয় ২০০৯ সালে ঢাকার এশিয়াটিক সোসাইটির চিত্রশালায়। পলাশের একটি একক, একটি যৌথ গানের অ্যালবাম এবং অন্তনের একটি একক, দুটি যৌথ গানের অ্যালবাম রয়েছে। তাঁদের দুই ছেলে নৈঋত এবং ঈশান। মুস্তাফা খালীদ পলাশ বেশ কিছু স্বীকৃতি পেয়েছেন। ২০০৭ সালে 'বার্জার অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স-ইন-আর্কিটেকচার', ২০০৩ সালে ভারত থেকে পাওয়া 'আর্কিটেকচার অব দ্য ইয়ার' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
Md. Rashadul Islam
Sr. Administrative Officer
Brand & Marketing Section