ফটোগ্রাফীর পুরো কারিগরী ব্যপারটাকে খুব সহজ দুটো ধারনায় ভেঙ্গে ফেলা যায়। এক: যেকোন একটা দৃশ্য হতে যেই আলো আসছে, সেটাকে কোন ভাবে ধরে ফেলে একটা পর্দায় প্রতিফলিত করা। দুই: সেই প্রতিফলিত দৃশ্যকে স্থায়ীভাবে একটা মাধ্যমে ধারন করা। প্রথম ব্যপারটি, তথা কোন একটা বিষয়বস্তুকে পর্দায় প্রতিফলিত করার বিষয়টি বহু আগে থেকেই জানা ছিল। একটি অন্ধকার চারকোনা বাক্সের সামনে তলে একটি সুইয়ের খোঁচার সমান ছিদ্র থাকলে এবং ঠিক বিপরীত দিককার তলে একটা সাদা পর্দা দেয়া হলে সেই পর্দায় উল্টোভাবে সামনের দৃশ্য ধরা পড়ে। ছিদ্রটার যায়গায় যদি একটা কাচের লেন্স বসিয়ে দেয়া যায়, তাহলে যে এই ছবি আরো স্পষ্ট হয়ে আসে, সেটা সেই ১৪০০ সালের দিকেই মানুষ জানতে পেরেছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এই ছবিকে স্থায়ীভাবে ধরার প্রযুক্তি আবিস্কার করতে লেগে যায় ৪০০ বছরেরও বেশী। ১৮০০ সালের শুরুর দিকে আবিষ্কৃত হল যে কোন একটি প্লেটকে ‘আলোক সংবেদী (light sensetive)’ রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে কোটিং করে সেখানে ছবি প্রতিফলিত করলে ছবির বিভিন্ন অংশের আলোর তীব্রতার উপর নির্ভর করে ওই প্লেটের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন মাত্রায় বিক্রিয়া হয়। ফলশ্রুতিতে ছবিটা ফুটে ওঠে প্লেটের উপর। সমস্যা হল অন্য যায়গায়…এই ছবিকে স্থায়ী রুপ দেয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে ১৮০০ সালের গোড়ার দিকে লুই ডাগের (Louis Duguerre) এবং জোসেফ নিয়েপ (Joseph Niepce) এর যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরী হয় ‘ডাগেরোটাইপ (Duguerrotype)’ প্রসেস, যেখানে সিলভার হ্যালাইড নামের আলোক সংবেদী একটা যৌগের প্রলেপকে ব্যবহার করা হয় ছবি ধারনের মাধ্যম হিসেবে। তবে ছবি তোলার শখ হলে মিনিট পনেরো মাথা না নাড়িয়ে বসে থাকা লাগতো ক্যামেরার সামনে! যাই হোক। এই মুল প্রসেসগুলোতো আয়ত্ত্বে চলে আসলো। এরপর শুরু হল প্রযুক্তির উন্নয়ন। ডগেরোটাইপ ছিল পজিটিভ প্রসেস, অর্থাৎ সরাসরি মুল ছবিটিই চলে আসতো পর্দায়, যদিও এক্সপোজার টাইম ছিল অনেক বেশি। পরবর্তীতে দেখা গেল, ছবির উল্টো ছবিটা (অর্থাৎ নেগেটিভ) অনেক দ্রুতগতিতেই পর্দায় ধরা পড়ে। এটা জানার পর, এক্সপোজার টাইম অনেক কমে গেল, একটা ছবি তোলার জন্য কাউকে আর ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হতো না ক্যামেরার সামনে। ১৮০০ সালের শেষের দিকে জর্জ ইস্টম্যান উদ্ভাবন করলেন একধরনের ফিল্ম যেটাকে রোল আকারে পেঁচিয়ে ক্যামেরায় ভরে ফেলা যেত। ব্যাস! ক্যামেরা হয়ে গেল এইবার মানুষের হাতের নাগালের বিষয়, পোর্টেবল। জগতখ্যাত ‘ইস্টম্যান কোডাক’ তারই গড়া কোম্পানী।