মাথাব্যথা হলেই নানা রকম দুশ্চিন্তা এসে ভর করে। কারণ, মাথাব্যথার জন্য টিউমার থেকে শুরু করে চোখের নানা সমস্যা, সাইনাসের ইনফেকশন, উচ্চরক্তচাপ, এমনকি নানা দুশ্চিন্তা দায়ি থাকতে পারে। তবে সমস্যাটি যদি মাইগ্রেন হয়ে থাকে তবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। মাইগ্রেন এমন একটি রোগ যা চিরতরে নির্মূল করা যায় না। তবে, চিকিৎসায় এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ব্যথা কমাতে নেয়া যেতে পারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
মাইগ্রেন
এটি এমন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা, যা প্রায়ই আঘাত হানে। সাধারণত মাথার যে কোনো এক পাশের একটি স্থান থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে সেই পাশের পুরো স্থানেই বিস্তৃত হতে থাকে। মাথাব্যথার সঙ্গে রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম এবং বমি বা বমির ভাব থাকতে পারে।
কারণ
মাইগ্রেনের সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত পুরোপুরি উদ্ধার সম্ভব হয়নি। তবে রক্তে সেরোটোনিন অথবা ফাইভ এইচটির মাত্রা পরিবর্তিত হলে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে থাকা ধমনীগুলোর ভেতরের পথ সংকুচিত হয় এবং বহিরের আকার ফুলে যায়। তবে এটি বংশগত হতে পারে। পুরুষের তুলনায় নারীদের মাইগ্রেনের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। দুশ্চিন্তা ও মাসিক চলাকালীন সময়, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য এই রোগকে বাড়িয়ে দেয়।
লক্ষণ
মাইগ্রেন বয়ঃসন্ধিকালে শুরু হয়ে মাঝবয়স পর্যন্ত বারবার আঘাত হানে। রোগীকে কিছুদিন পরপরই এই সমস্যা পোহাতে হয়। মাথাব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটি রোগীকে দুর্বল করে ফেলে। মাইগ্রেনের কয়েকটি ধরনের মধ্যে ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেনের শুরুটা অধিকাংশ সময়েই রোগী বুঝতে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হয়। রোগী চোখের সামনে আলোর ঝলকানি, চোখে তারা দেখে। হাত-পা, মুখের চারপাশে ঝিনঝিনে অনুভূতি হয়। শরীরের এক পাশে দুর্বলতা বা অবশভাব হতে পারে। এরপর শুরু হয় মাথাব্যথা। মাথার একপাশের একটি স্থান থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে সেই পাশের পুরো স্থানেই বিস্তৃত হয়। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা রোগীকে কাহিল করে ফেলে। রোগীর প্রচুর ঘাম হয়। বমি কিংবা বমি ভাব হয়। আলো, শব্দের কোনোটা একদম সহ্য করতে পারে না। কারো সঙ্গে কথা বলতেও ইচ্ছা করে না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। চুপচাপ অন্ধকার ঘরে থাকতেই রোগী বেশি পছন্দ করে।
ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেন ছাড়া মাইগ্রেনকে হেমিপ্লেজিক, অপথালমোপ্লেজিক, কমন মাইগ্রেন ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কমন মাইগ্রেনে সাধারণত দৃষ্টিবিভ্রম থাকে না। ব্যাসিলার আর্টারি মাইগ্রেনে ব্যথা সাধারণত পেছন থেকে শুরু হয়। এর সঙ্গে মাথাঘোরা ভাব থাকে, দৃষ্টিবিভ্রম থাকতে পারে। আবার নাও থাকতে পারে। হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেনের ব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এটি সারতে বেশ কিছুদিন সময় নেয়।
করণীয়
* যাদের এ রোগ আছে, তাদের দিনে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক।
* অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।
* কড়া রোদ বা তীব্র ঠাণ্ডা পরিহার করতে হবে।
* উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।
* বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা।
* সে সব খাবার খেলে মাইগ্রেন শুরু হতে পারে সে সব খাবার যেমন কফি, চকলেট, পনির, আইসক্রীম, মদ ইত্যাদি বর্জন করা উচিৎ।
* অধিক সময় উপবাস থাকা যাবে না।
* জন্মবিরতীকরণ পিল সেবন না করা শ্রেয়। প্রয়োজনে অন্য পদ্ধতি বেছে নেয়া ভালো।
* পরিশ্রম, মানষিক চাপ এবং দীর্ঘ ভ্রমণ বর্জনের মাধ্যমে মাইগ্রেনের আক্রমণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
মাইগ্রেন সমস্যার প্রতিরোধকারী খাবার
* ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- ঢেকি ছাঁটা চালের ভাত ও এ চালের বিভিন্ন পদ, আলু ও বার্লিমাইগ্রেন প্রতিরোধক।
* বিভিন্ন ফল বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে।
* সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়।
* পর্যাপ্ত খাবার পানি বা গ্রিন টি উপকার করতে পারে।
* ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডিমাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমান ক্যালশিয়াম রয়েছে।
* আদার টুকরো বা রস দিনে ২ বার জিঞ্চার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।