বর্তমান প্রযুক্তির বাজারে অ্যাপল আর মাইক্রোসফটের মধ্যকার তীব্র প্রতিযোগিতার কথা কারোরই অজানা থাকার কথা নয়। যদিও স্মার্টফোনের বাজারে অ্যাপলের তুলনায় বেশ পিছিয়েই আছে মাইক্রোসফট। বিভিন্ন সময়ই প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলতে বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নিতে দেখা গেছে কোম্পানি দুটিকে। কিন্তু কোম্পানি দুটির ইতিহাসে একবার এমন এক ঘটনা ঘটেছিলো যার জন্য তারা সবসময়ই একে অপরের নিকট কৃতজ্ঞ থাকতে বাধ্য।
প্রায় দুই দশক আগের কথা। ১৯৯৭ সালে অ্যাপলের অবস্থা হয়ে পড়েছিলো খুবই করুণ। অ্যাপল থেকে স্টিভ জবসকে অপসারণের এক যুগ হয়ে গেছে ততদিনে। আর এরপর থেকেই অ্যাপলের ব্যবসা ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী হচ্ছিলো। কোনো উপায় না দেখে অ্যাপল আবার দ্বারস্থ হয় স্টিভ জবসের। জবসও যোগ দেন তার চিরচেনা কোম্পানিতে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে, অ্যাপলকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে দরকার প্রযুক্তির প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কারো অর্থ সাহায্য।
জবস ঠিক তা-ই করলেন। তিনি দ্বারস্থ হলেন ঠিক তেমনই এক লোকের। সেই লোকটির নাম কী শুনবেন? বিল গেটস! জ্বি, ঠিকই পড়েছেন। সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছেই হাত পেতেছিলেন জবস। কিন্তু এখানে তিনি যে ব্যবসায়িক বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন তা এককথায় অতুলনীয়।
বিল গেটসকে প্যাটেন্ট ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন অ্যাপলের আইনজীবিরা। আর অন্যদিকে মাইক্রোসফটের আইনজীবিরাও ব্যাপারটাকে যতটা সম্ভব মোকাবেলা করে আসছিলেন। তবে এমন যুদ্ধ আর কতদিন চালানো যায়? তাই জবস গেলেন গেটসের কাছে। প্রস্তাব দিলেন, অ্যাপলে ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে মাইক্রোসফটকে। সেই সাথে অ্যাপল ওএসের জন্য মাইক্রোসফটকে অফিস সফটওয়্যারও ডেভলপ করতে হবে। কেবল তাহলেই মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তুলে নেবে অ্যাপল। বিল গেটসও ছিলেন ঝানু ব্যবসায়ী। তিনি নিজেও জানতেন যে, মাইক্রোসফট ধোয়া তুলসী পাতা নয়। আর একবার আদালতে এ ব্যাপারটা প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে যে বিরাট অংকের লোকসান গুণতে হবে তা তিনি ভালোমতোই জানতেন। তাই তিনিও আর আপত্তি জানালেন না। গেটস রাজি হয়ে গেলেন জবসের প্রস্তাবে।
আর এভাবেই সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোসফটের সাহায্য নিয়েই সেই ক্রান্তিকালটি অতিক্রম করেছিলো অ্যাপল।
