জয়ের সেঞ্চুরি ছোট বাঘদের

Author Topic: জয়ের সেঞ্চুরি ছোট বাঘদের  (Read 708 times)

Offline Tofazzal.ns

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 314
  • Test
    • View Profile


    প্রচ্ছদ
    খেলা
    আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

জয়ের সেঞ্চুরি ছোট বাঘদের
ফাহিম রহমান | আপডেট: ০৩:২৭, জুলাই ০৯, ২০১৫
১ Like
১১
 
 
 

যুব পর্যায়ে সেরা দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সিরিজ জেতার পর। বড়রা এখনো করতে পারেনি। তবে ছোটরা করে ফেলল এরই মধ্যে। ডারবানে জেতা গত ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের শততম যুব ওয়ানডে জয়! এই অর্জন থেকে মাশরাফিরা এখনো সাতটি জয় দূরে।

ওয়ানডে না হলেও এই যুব ওয়ানডেরও আছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এর সব রেকর্ডই রাখা হয়। বাংলাদেশের যুবারা এখন পর্যন্ত ১৬২টি যুব ওয়ানডে খেলেছে। হেরেছে ৫৭টি, একটি ম্যাচ টাই। বাকি চারটি পরিত্যক্ত। বলাই বাহুল্য, যুব পর্যায়ে বাংলাদেশের তরুণদের সাফল্যের হার সত্যিই ঈর্ষণীয়।
বাংলাদেশের চেয়ে বেশি জয় পেয়েছে শুধু ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড। নামগুলো পড়েই বুঝতে পারছেন কী ক্রিকেট ঐতিহ্য কী অবকাঠামোগত সুবিধা—সব দিক দিয়েও এই চারটি দেশ অনেক এগিয়ে। চার নম্বরে থাকা ইংল্যান্ডই যেমন বাংলাদেশের চেয়ে ৯৭টি ম্যাচ বেশি খেলে জয় বেশি পেয়েছে মাত্র ৬টিতে। বাংলাদেশের পরে থাকা শ্রীলঙ্কা ২১০ ম্যাচে জয় পেয়েছে ৯৮টিতে। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ডেরও চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে বাংলাদেশের যুবারা।
সহজাত প্রতিভার উর্বর ভূমি হয়ে ওঠা বাংলাদেশ ধীরে ধীরে শক্তির ব্যবধান কমিয়ে আনছে। বাংলাদেশের যুবদলটি হয়ে উঠছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দল।
এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭টি দেশের অনূর্ধ্ব ১৯ দল যুব ওয়ানডে খেলছে। এদের মধ্যেই জয়-পরাজয়ের অনুপাতে বাংলাদেশের আগে আছে শুধু ভারত এবং পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭-০ তে বাংলাওয়াশ (জুনিয়র) করতে পারলে পাকিস্তানকেও টপকে যাওয়ার সুযোগ আছে । ছোটদের ক্রিকেটে র‍্যাঙ্কিং নেই। থাকলে বাংলাদেশ ওপরের একটা দল হয়েই থাকত।
যুবারা কী টগবগিয়ে ছুটছে সেটা রেকর্ডেই দেখুন। সর্বশেষ ১২ ম্যাচের ১১টিতেই জয়! যুবারা এখন পর্যন্ত ২১টি দলের বিপক্ষে খেলেছে। এর মধ্যে ২০টি দলের বিপক্ষেই জয় পেয়েছে। হারেনি ১১ দলের বিপক্ষে।

এখন পর্যন্ত ১৪টি দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে যুবারা। জিতেছে ১২টিতেই! এই যুবাদের মানসিক শক্তি অন্য ধাতের। সেই প্রমাণ দেবে আরেকটি তথ্য। সিরিজে পিছিয়ে পড়ে জেতা খুবই কঠিন। যুব ওয়ানডে সিরিজে এমন কীর্তি আছে মাত্র ১৬টি। এর ছয়টিই বাংলার যুবারা করে দেখিয়েছে। অবশ্য দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে বড় বড় নামগুলোকে ঘোল খাইয়ে ছাড়লেও এখনো কেন জানি বিশ্বকাপে নিজেদের শক্তি অনুযায়ী তারা খেলতে পারেনি।
এই যে দক্ষিণ আফ্রিকার যুবারা বাংলাদেশের তরুণদের কাছে সর্বশেষ নয় ম্যাচের আটটিতেই হারল, তারা কিন্তু মাত্র গত বছরই হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। যুব বিশ্বকাপের নয়টি আসরে খেলে চারবারের প্লেট চ্যাম্পিয়নের সান্ত্বনা। সর্বোচ্চ অর্জন ২০০৬ আসরে পঞ্চম হওয়া। তবে আগামী বিশ্বকাপে নতুন কিছু আশা করাই যায়। কে জানে, হয়তো যেকোনো ধরনের বিশ্ব আসরে প্রথম কোনো বিশ্বকাপ এনে দেবে বাংলার যুবারাই!

এই অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকেই উঠে এসেছেন সাকিব, তামিম, মুশফিক, রুবেলরা। ওঁরাই গত ৭-৮ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে আছেন। এখনকার ক্রিকেটারদের মধ্যে যেমন ভালো পারফর্ম করে উঠে এসেছেন মুমিনুল, এনামুল, সাব্বির, সৌম্য, লিটন, মুস্তাফিজরা। এঁরা প্রত্যেকেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে নিজেদের প্রমাণ করে এসেছেন। বর্তমান যুবদলে নাজমুল হোসাইন শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজ, সাইফউদ্দিনের মতো অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটাররাও উঠে আসছে। মিরাজ তো নেতৃত্ব দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন এরই মধ্যে।
গত ১৭ বছরে দলীয় অর্জনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অনেক অর্জন পেয়েছে বাংলাদেশ। যুবাদের ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ১ হাজার ৩২৬ রান করে চারে আছেন এনামুল হক। ২০১২ যুব বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানের মালিকও ছিলেন এনামুল। এর পর তো জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে ২০ ওয়ানডেতেই ৩টি সেঞ্চুরি করেছেন।
যুব ওয়ানডে খুব বেশি খেলা হয় না ক্রিকেটারদের। দলটাও অভিন্ন থাকে না। কেউ জাতীয় দলের দিকে এগিয়ে যান, কেউবা হারিয়ে যান। এই ফরম্যাটে তাই হাজার রান আছে মাত্র ১৪ জন ব্যাটসম্যান। আশার কথা, এর মধ্যে সর্বোচ্চ চারজনই বাংলাদেশের। যুবাদের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি জয় পাওয়া অধিনায়কও বাংলাদেশেরই—মাহমুদুল হাসান। ৫০ উইকেট আছে মাত্র ৭ বোলারের, দুজনই বাংলাদেশের। মাহমুদুল হাসানই একমাত্র অলরাউন্ডার যাঁর যুব ওয়ানডেতে হাজার রান ৫০ উইকেটের ‘ডাবল’ আছে। ক্যারিয়ারে ৫০০ রান এবং ৩০ উইকেট আছে মাত্র ১০ অলরাউন্ডারের, ৫ জনই বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের এই কম বয়সী ক্রিকেটাররাই আমাদের সোনালি দিনের স্বপ্ন দেখায়। তাদের এই ছোট্ট কাঁধই একসময় পুরো জাতির ভার বহন করবে। এক সময়ের ছোট্ট সাকিব-মুশফিকই এখন পুরো জাতিকে উৎসবের উপলক্ষ এনে দেয়। সামনে এই ভারটা নেবে সাব্বির-সৌম্য-মুস্তাফিজরা। ওদের হাত থেকে পতাকাটা বয়ে নেবে মিরাজরা। সোনালি সুদিনের আশার অপেক্ষা করতে দোষ কী। মানুষ তো তার আশার সমানই বড়!
Muhammad Tofazzal Hosain
Lecturer, Natural Sciences
Daffodil International University