সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলিতে অবস্থিত মাধবকুণ্ডু ইকোপার্ক। মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী থানা বড়লেখার আট নম্বর দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের গৌরনগর মৌজার পাথারিয়া পাহাড়ের গায়ে দুটি ঝরনাকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই উদ্যান সিলেট সদর থেকে ৭২ কিলোমিটার, মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার, কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার এবং কাঁঠালতলী থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এখানকার অন্যতম আকর্ষণ হল মাধবকুণ্ডু জলপ্রপাত, পরিকুণ্ডু জলপ্রপাত, শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের মন্দির এবং কিছু চা বাগান। পাহাড়ের ঢালে ঢালে নানান গাছগাছালিতে ঢাকা মাধকুণ্ডু ইকোপার্কের সৌন্দর্যও অতুলনীয়।
এই ইকোপার্কের প্রধান আকর্ষণ মাধবকুণ্ডু জলপ্রপাত। পাথারিয়া পাহাড়ের উপর থেকে অবিরাম বয়ে চলে গঙ্গামারা ছড়া। এই ছড়ার পানি মাধবকুণ্ডু জলপ্রপাত হয়ে নিচে পড়ে। প্রায় ২৭০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া এই জলপ্রপাত সারা বছরই একটি মূল ধারায় বহমান থাকে। তবে বর্ষার শুরুতে পাশে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি ধারার তৈরি হয়। ভরা বর্ষায় দুটি ধারাই মিশে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। জলপ্রপাতের ধারাটি যেখানে পড়ে সে জায়গায় বেশ গভীর একটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখান থেকে মাধবের ছড়া হয়ে পশ্চিমে বয়ে চলা পানির ঠাঁই হয় হাকালুকি হাওরে।
মাধবকুণ্ডু জলপ্রপাতের নামকরণ নিয়ে নানান কাহিনী প্রচলিত আছে লোকমুখে। কথিত আছে রাজা গঙ্গাধ্বজ পাথারিয়া পাহাড়ে বিশ্রামাগার নির্মাণ শুরু করলে সেখানে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় একজন সন্ন্যাসীকে দেখতে পান। তখন তিনি ওই সন্ন্যাসীর পদবন্দনা করলে সন্ন্যাসী তাকে নানা উপদেশসহ মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশ তিথিতে এ কুণ্ডে বিসর্জন দিতে নির্দেশ দেন। সন্ন্যাসী বিসর্জিত হওয়া মাত্র তিনবার মধাব নামে দৈববাণী হয়। এ থেকেই মাধবকুণ্ডু নামের উৎপত্তি বলে প্রচলিত আছে।
আবার কারও কারও মতে, মহাদেব বা শিবের পূর্বনাম মাধব এবং এর নামানুসারে তার আবির্ভাব স্থানের নাম মাধবকুণ্ডু। এ কুণ্ডুর পাশেই আছে শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের শিবমন্দির। যে পাহাড় থেকে মাধবকুণ্ডু ঝরনা প্রবাহিত হচ্ছে। এর রয়েছে দুটি অংশ। উপরের অংশের নাম গঙ্গামারা ছড়া আর নিচের অংশের নাম মাধবছড়া।