সাকিব–মুশফিকদের প্রেরণা হয়ে আছেন একজন শহীদুর !!

Author Topic: সাকিব–মুশফিকদের প্রেরণা হয়ে আছেন একজন শহীদুর !!  (Read 703 times)

Offline habib

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 112
  • Test
    • View Profile
সাকিব–মুশফিকদের প্রেরণা হয়ে আছেন একজন শহীদুর !!

সব প্রথমের আলাদা একটা আবেদন থাকে। আলাদা আবেগ থাকে। স্মৃতির ডানায় ভর করে সেই প্রথমে ফিরে গেলে অপার্থিব আবেশ ভর করে মনে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে দারুণ এক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে তিনি। যে প্রথম চিরদিনই অনুপ্রেরণা হয়ে থেকে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। আজ মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-সাকিব-সৌম্যরা যত কীর্তি গড়েন, সেগুলোর পথপ্রদর্শক হয়ে থাকেন একজন শহীদুর রহমান। হ্যাঁ, দেশের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার তিনি।


শহীদুর রহমান এখন। ছবি: রানা আব্বাস

শহীদুর রহমান নামটি খুব পরিচিত হয়তো নয় এই প্রজন্মের কাছে। আজ থেকে ২৯ বছর আগে ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ এশিয়া কাপের ম্যাচে ইমরান খান, আবদুল কাদির, ওয়াসিম আকরামদের পাকিস্তানের বিপক্ষে শহীদুরের ব্যাট থেকে এসেছিল সর্বোচ্চ ৩৭ রান। সে সময়কার প্রেক্ষাপট বিচার করুন। দেশের প্রথম ওয়ানডে, প্রতিপক্ষে ইমরান, কাদির, আকরামদের মতো বোলার। দলের ইনিংসই শেষ হয়ে গেছে ৯৪ রানে, সে বিচারে ৩৭ রান কিন্তু অনেক কিছুই। সেদিন সেই বড় ব্যাপারটিই করে দেখিয়েছিলেন এই শহীদুর। বিশ্ব সেরা বোলারদের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়ে পথ দেখিয়েছিলেন বাকিদের। পথ দেখিয়েছিলেন আগামী প্রজন্মকেও। দুনিয়াকে জানিয়ে এসেছিলেন এদেশের ক্রিকেটের আগমনী বার্তা। আজ অনেকটুকু পথ এগিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের ক্রিকেট শ্রদ্ধাবনত চিত্তে পেছনে ফিরে তাকায় তার শুরুর নায়কদের দিকে।

শুরুর অন্যতম নায়ক শহীদুর রহমানের আবাস চট্টগ্রামে। তাঁর কাছে প্রথম ওয়ানডের স্মৃতিগাথা শুনতে চাইলে বেশ খুশিই হলেন। আমন্ত্রণ জানালেন এমএ আজিজ স্টেডিয়াম-সংলগ্ন নিজের মালিকানাধীন রেস্তোরাঁ রয়েল হাটে। আড্ডার জন্য অসাধারণ সেই রেস্তোরাঁয় বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় স্মৃতির ঝাঁপি মেলে দিলেন তিনি। বললেন, শামীম কবির ভাই, রকিবুল ভাই, আশরাফুল ভাইদের হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের পথচলার শুরু। এরপর মশালটা এল আমাদের হাতে। পরে আকরাম-আমিনুলদের হাত ঘুরে বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি পেয়েছে পরিপূর্ণতা। আজকের ক্রিকেটের উন্নতি নাকি এক অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দেয় তাঁর নিজের মনে।

২৩ বছর বয়সে ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে। তাও আবার ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের সঙ্গী হয়ে। শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ায় এশিয়া কাপের ওই ম্যাচটির অংশ হতে পারার গৌরব ছিল অন্যরকমই, দেশের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। এর অংশ মানেই ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া। রোমাঞ্চও কম ছিল না। নিজেই বললেন, ইমরান খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, আবদুল কাদির, মহসিন খান, মুদাস্‌সর নজররা তখন বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত তারকা। সেই দলে ওয়াসিম আকরাম উঠতি তারকা। আমরা খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম এই ম্যাচটা নিয়ে।

সে ম্যাচে ইমরান খান-ওয়াসিম আকরামদের মতো বোলারদের খেলতে এতটুকু বুক কাঁপেনি? কীভাবে ডাকাবুকো সব বোলারদের সামলে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করলেন? শহীদের চোখে-মুখে তারুণ্যের অজেয় ভাবটা ফুটে উঠল ভালোভাবেই, ‘ভয় পাব কেন? যদিও ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান তখন এশিয়ার জায়ান্ট। আমরা পুঁচকে একটা দল। এখন একজন বোলার-ব্যাটসম্যানকে নিয়ে কতভাবে বিশ্লেষণ হয় ম্যাচের আগে। অথচ কোনো ধারণা ছাড়াই সরাসরি ইমরান-ওয়াসিমের মতো বোলারদের সামলাতে হলো। তবে ভেতরে কোনো স্নায়ুচাপ বা ভয় কাজ করেনি। বয়সও কম ছিল। লক্ষ্য ছিল বল আসবে, খেলব। হলে হবে, না হলে নেই। হারানোর যেহেতু কিছুই ছিল না, ভয় পাওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না।’ সেদিন ব্যাটিংয়ের সময়ে শহীদকে নাকি কিছুটা স্লেজিং করেছিলেন জাভেদ মিয়াদাঁদ, ‘যখন ব্যাটিং করছিলাম স্লিপ থেকে জাভেদ মিয়াঁদাদ উর্দুতে কিছু বলছিল। তবে ভাষাটা ঠিক বুঝিনি।’

বর্তমান সময়ে একজন উঠতি ক্রিকেটারদের সামনে যেমন আদর্শ হিসেবে থাকেন মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকরা; তখন শহীদুর রহমানদের সামনে ছিলেন না কেউ। ছিল না তেমন অবকাঠামোগত সুবিধা, অ্যাকাডেমির ব্যবস্থা। ছিল না টিভিতেও অন্য দলের খেলা দেখারও খুব একটা সুযোগ।


বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে স্কোয়াডে শহীদুর রহমান (দাঁড়ানো বাম দিক থেকে প্রথম)। ছবি: ফাইল ছবি

কঠিন সেই দিনগুলোর কথা যেন জীবন্ত হয়ে উঠল শহীদুর রহমানের চোখে, ‘আশির দশকে ম্যাটিং উইকেটে খেলতাম। আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো ম্যাটিং উইকেটে হয় না। আসলে ক্রিকেট খেলতাম শখের বশেই। পড়াশোনার পাশাপাশি সময় কাটাতেই ক্রিকেট চালিয়ে নেওয়া। ফুলটাইম কাজ হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নেওয়া কঠিনই ছিল। সিরিয়াস ক্রিকেটে খেলেছি অনেক পরে এসে।’

খেলোয়াড়ি জীবনে নিয়মিত নামতেন চারে। আক্রমণাত্মক খেলতে ভালোবাসতেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সে ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট ছিল তাঁরই। তবে ইনিংসটি নিয়ে খানিকটা আক্ষেপ শহীদের কণ্ঠে, ‘রক্ষণাত্মক খেলা আমার ধাঁচে ছিল না। ইনিংসটা ফিফটি ছাড়িয়ে যেতে পারত। আগের দিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় এখনকার মতো স্টেডিয়ামে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত ছিল না। আউটফিল্ড ছিল কিছুটা ভেজা, কর্দমাক্ত। আমার ছয়-ছয়টা পুল শট ডিপ মিডউইকেটে পড়ে আটকে গিয়েছিল। ওই পজিশনে কোনো ফিল্ডারও ছিল না। আউটফিল্ড শক্ত থাকলে নিশ্চিত চার। চার গুলো হলে আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহটা ৬০-৬৫ রান হয়ে যেতো। হয়তো সেদিনই দেশের হয়ে প্রথম ফিফটিটা হয়ে যায় আমারই।’

স্মৃতিচারণা করতে করতেই শহীদুর জানিয়ে দিলেন অন্যরকম একটি তথ্যও। দেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে কোনো ম্যাচ ফি পাননি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। আইসিসির দেওয়া অ্যাপিয়ারেন্স মানি ৫০ হাজার ডলারের প্রায় পুরোটাই নিজেদের কোষাগারে জমা করেছিল সে সমকার বোর্ড। এটা ছাড়া তাদের কোনো উপায়ও ছিল না। সরকারি অনুদানের দয়ায় চলত সে সময়কার বোর্ড। এশিয়া কাপের ঠিক দুমাস পরই ইংল্যান্ডে আইসিসি ট্রফি খেলতে যাওয়ার কথা ছিল। বোর্ড সেই ৫০ হাজার ডলারের পুরোটাই কাজে লাগিয়েছিল ইংল্যান্ড যাওয়ার খরচ সামলাতে।

শহীদুর রহমান অবশ্য একদিক দিয়ে বেশ ভাগ্যবানই। তিনি নিজেই জানালেন সেই সৌভাগ্যের কথা, ‘দলের অন্য খেলোয়াড়দের কেউই কোনো ম্যাচ ফি পায়নি। তবে সর্বোচ্চ ৩৭ রানের ইনিংসটি খেলায় তৎকালীন বোর্ড সভাপতি কে, জেড ইসলাম আমাকে ৩০০ ডলার দিয়েছিলেন। আমি সেই টাকাটা সবার মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলাম।’

পরের ওয়ানডেতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিলেন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান। ওই দুটো ওয়ানডের পর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি শহীদের। ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হয়েছে একটু আগেভাগেই। স্বপ্নের সীমা কেন এতটুকু সীমাবদ্ধ থাকল? দুই সন্তানের জনক, বর্তমানে সফল এ ব্যবসায়ী বললেন, ‘স্বপ্ন বড় হবে কী; দেখার আগেই তো শেষ! আসলে সামনে কোনো লক্ষ্য ছিল না। এখন একজন খেলোয়াড় লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে। ভাবে, দুই তিন বছর নিয়মিত জাতীয় দলে খেলতে পারলেই কোটি টাকা আয় করা যাবে। আমাদের সময় তা ছিল না। নিজের চলার টাকাটা জোগাড় হলেই খুশি। ক্রিকেট খেলেছি কেবল ভালোবাসা থেকেই। তবে একটা সময় মনে হলো ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ গড়া কঠিন। এ কারণে খেলা ছেড়ে ব্যবসায় যুক্ত হলাম। এখন ক্রিকেটকে পৃষ্ঠপোষকতা করি। ক্রিকেটের সঙ্গে নানাভাবেই আছি।’

আলাপ জমে ওঠে দারুণভাবে। বৃষ্টিমুখর বিকেলটা কীভাবে দ্রুত যেন কেটে যায়। সোনালি অতীতের নানা গল্প শেষে শহীদুর রহমানকে উঠতে হয়। ছুটতে হয় সামনের দিকে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটও এখন ছুটছে সামনের দিকে। তবে ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শহীদুর রহমানরা বিস্মৃত হন না কখনোই, তাঁদের বিস্মৃত হওয়া মানে যে নিজেদের শিকড়কেই অস্বীকার করা।

Source: http://www.prothom-alo.com/sports/article/586210/
             জুলাই ২৭, ২০১৫
« Last Edit: July 27, 2015, 04:01:03 PM by habib »
Md. Habibur Rahman
Officer, Finance & Accounts
Daffodil International University (DIU)
Corporate Office, Daffodil Family
Phone: +88 02 9138234-5 (Ext: 140)
Cell: 01847-140060, 01812-588460