বাংলাদেশের একটি শহরকে সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ‘সার্ক কালচারাল সেন্টার ২০১৬’ ঘোষণা করা হবে আগামী বছর। ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় আছে তিনটি শহর—বগুড়া, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লা।
আগামী কিছু দিনের ভেতরে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সেমিনার কক্ষেÿঅনুষ্ঠিত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
এতে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন চৌধুরীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের সচিব, সার্ক কালচারাল সেন্টারের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন সার্ক কালচারাল সেন্টারের ডিরেক্টর বসন্তে কুতুয়েল্লা ও ডেপুটি ডিরেক্টর সুন্দরীয়া দেবী।
সভায় সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কোন শহরটিকে বাছাই করা হবে, তা সরেজমিনে দেখতে ২৯ জুলাই বুধবার থেকে সার্ক কালচারাল সেন্টারের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাওয়া হবে। এ প্রতিনিধিদলটি প্রথমে যাবে মহাস্থানগড়। এরপর ময়নামতি, শিলাইদহ প্রভৃতি স্থানে যাওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, ইতিহাস-ঐতিহ্য ছাড়াও ঢাকা থেকে যাতায়াত, আবাসন, মিলনায়তন, আপ্যায়ন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নানা দিক বিবেচনা করে বগুড়াকে চূড়ান্তভাবে বিবেচনার সম্ভাবনা রয়েছে। বগুড়াতে নেওয়ার কারণ, প্রায় আড়াই হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল সভ্যতার নিদর্শন মহাস্থানগড়। এ ছাড়া রয়েছে আরও অনেক ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা, যা সব ধর্মের অনুসারীদের কাছে পবিত্র। বগুড়া দইয়ের জন্যও খুব বিখ্যাত।
কুষ্টিয়াকে সার্ক সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণার জোর তৎপরতা চলছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ জন্য ওই এলাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সামনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাচীন ঐতিহ্য, সুর-সংগীত, সাহিত্য-সংস্কৃতির এক পীঠস্থান কুষ্টিয়া। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য কুঠিবাড়ি, বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহর আখড়াবাড়ি, বাংলা লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক, সাংবাদিক, বাউলসংগীতের অন্যতম পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথ, বাউল গগন হরকরা, সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন প্রমুখের স্মৃতি বহন করে চলেছে এ অঞ্চল। পার্শ্ববর্তী মেহেরপুরের মুজিবনগরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজধানী ও মুজিবনগর সরকারের স্মৃতিস্মারক।
কুমিল্লারও রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য। শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা। ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধ সংস্কৃতির অন্যতম তীর্থভূমি ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও জাদুঘর, লালমাই বৌদ্ধবিহার, শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, লালমাই পাহাড়, ময়নামতি পাহাড়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শহীদদের সমাধি প্রভৃতি। প্রাচীন সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে খাদিশিল্প, তাঁতশিল্প, কুটিরশিল্প, মৃৎ ও কারুশিল্প, ময়নামতির শীতল পাটি ইত্যাদি।