কি ভাবে বুঝবেন আপনার স্ট্রোক হতে পারে ? স্ট্রোক সম্পর্কে A-Z জেনেনিন

Author Topic: কি ভাবে বুঝবেন আপনার স্ট্রোক হতে পারে ? স্ট্রোক সম্পর্কে A-Z জেনেনিন  (Read 928 times)

Offline imran986

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 375
  • If you don't try, Allah will not help you too
    • View Profile
চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্ট্রোক-এর অর্থ হলো প্রকট স্নায়ু রোগ। মস্তিষ্কের কোষগুলোর কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিরবচ্ছিন্ন রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মস্তিষ্কই পুরো দেহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং গ্লুকোজের সরবরাহ পায়। কোন কারণে এই সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে সে অংশের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটিই ব্রেইন স্ট্রোক নামে পরিচিত।

স্ট্রোকের কারণে শরীরের কোন একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঐ অংশ শরীরের যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে চালিত করত তা অবশ হয়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কের ডান অংশ শরীরের বাম অংশকে পরিচালিত করে, আর বাম অংশ শরীরের ডান অংশকে পরিচালিত করে। কাজেই স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের কোন একটি অংশ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরের বিপরীত অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে।

শরীরের এক দিক অচল হয়ে গেলে বলা হয় হেমিপ্লেজিয়া (hemiplegia) আর অবশ হলে তাকে হেমিপেরেসিস (hemiparesis) বলা হয়। তবে শরীরের কোন অংশ স্ট্রোকের কারণে অচল হয়ে গেলেও তা আবার ধীরে ধীরে সেরে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ নিউরোলজিস্টের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপীও নেবার প্রয়োজন হতে পারে।

ব্রেইন স্ট্রোক কোন ভাবেই হৃদরোগ নয়। তবে রোগীর যদি উচ্চরক্তচাপ থাকে, ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগ থাকে তবে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি বেড়ে যায়

রক্ত জমাট বেঁধে কিংবা রক্তনালি সরু হয়ে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে এই ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আবার রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাতের মাধ্যমেও স্ট্রোক হতে পারে।

প্রকারভেদ

মোটাদাগে স্ট্রোক দু’প্রকার। একটি ইসচেমিক (Ischemic) স্ট্রোক এবং অন্যটি হেমারোজিক (Hemorrhagic) স্ট্রোক। ইসচেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোন একটি অংশের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় আর হেমারোজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্তক্ষণ ঘটে।

লক্ষণ

দু’ধরনের স্ট্রোকের ক্ষেত্রেই একই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। মস্তিষ্কের কোন এলাকায় রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলো, কতটা এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হল ইত্যাদি বিষয়ের ওপর লক্ষণগুলো পরিবর্তিত হয়। যে কোন ধরনের স্ট্রোকের ক্ষেত্রেই দ্রুত চিকিৎসককে দেখানো উচিত। দেরি করলে নতুন নতুন লক্ষণ দেখা দেয় এবং এক পর্যায়ে সেটি সারিয়ে তোলা কঠিন হতে পারে।

    মাথা ঘোরা, হাটতে অসুবিধা হওয়া, ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হওয়া
    কথা বলতে সমস্যা হওয়া
    অবশ, দুর্বলতা লাগা, শরীরের এক পাশ অকেজো হওয়া
    চোখে ঘোলা লাগা, অন্ধকার লাগা বা ডাবল দেখা, হঠাৎ চোখে কিছু না দেখা
    হঠাৎ খুব মাথা ব্যথা

কারণ

স্ট্রোক এবং হৃদরোগ আলাদা হলেও ঝুঁকির কারণগুলো প্রায় একই। সাধারণত ৫৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষের স্ট্রোক বেশি হয়।

    উচ্চ রক্তচাপ
    বেশি কোলেস্টেরল
    ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ
    ধুমপান
    স্থূলতা
    মদ্যপান
    পারিবারিক ইতিহাস

সতর্কতা:

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর পাঁচ লাক লোক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় এবং দেড় লাখ লোক মারা যায়। বেঁচে যাওয়া অনেকেই পঙ্গুত্বের শিকার হয়। করোনারী হার্ট ডিজিজ এবং ক্যান্সারের পর স্ট্রোকই মৃত্যুর বড় কারণ। ঝুঁকির কারণগুলো এড়িয়ে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্ট্রোকের সম্ভবনা বা আশঙ্কা আনেকটা কমিয়ে আনা যায়।

করণীয়:

    রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
    সম্পৃক্ত চর্বি যেমন যেমন প্রাণীজ তেল, ডিমের লাল অংশ, ঘি, মাখন, অথবা জমে যায় এমন ধরনের যে কোন তেল খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।
    ধূমপান একেবারেই করা যাবে না।
    পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন সয়াবিন তেল খাওয়া যাবে। মাছ এবং মাছের তেলও উপকারী।
    এন্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন সি, ই এবং বিটা ক্যারেটিন সমৃদ্ধ খাবার স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
    একবার স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের জন্য লো ডোজ অ্যাসপিরিনও বেশ উপাকারী, আবার স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
    নিয়ম মাফিক খাবার খাওয়া
    সতর্ক ভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
    নিয়ম করে হাটা বা হালকা দৌড়ানো
    দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা
    মাদক না নেয়া , মদ্যপান না করা

রোগ নির্ণয়:

স্ট্রোক মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ঘটে, এখানে যেকোন ধরনের রক্তপাত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। কাজেই দ্রুত রোগ নির্ণয় করে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। মস্তিষ্কে জমাট বাঁধা রক্ত ৩ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে অপসারণ করতে না পারলে অনেক সময় স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়। রোগী স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগস্ত হয়ে পড়তে পারে এমনকি মারাও যেতে পারে।

স্ট্রোক হয়েছে কিনা বোঝার সাধারণত জন্য যেসব পরীক্ষা করা হয়:

    রক্তচাপ, কোলস্টেরল, ডায়াবেটিস, এমিনো এসিড ইত্যাদি মাপা
    আলট্রা সাউন্ডের মাধ্যমে ঘাড়ের আর্টারির ছবি নিয়ে রক্তনালি সরু হয়েছে কিনা সেটা দেখা
    এনজিওগ্রাফি: এক ধরনের রং শরীরে প্রবেশ করিয়ে এক্স-রে-এর মাধ্যমে শরীরে রক্ত চলাচলের চিত্র নেয়া হয়।
    এছাড়া সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই-এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
    ইকোকার্ডিওগ্রাফির মাধ্যমে হৃদপিন্ডের ছবিও নেয়া হয়।

স্ট্রোক রক্তপাতজনিত কারণে নাকি রক্তপ্রবাহে বাধা জনিত কারণে হল সেটা নির্ণয় করাটা জরুরি। কোলস্টেরল বা অন্য কোন কারণে রক্তপ্রবাহে বাধাজনিত কারণে স্ট্রোকের ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন উপকারী, কিন্তু রক্তপাতজনিত কারণে স্ট্রোকের ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন ক্ষতিকর। সিটি স্ক্যান করে এটি জানা যায়।

স্ট্রোক বিভিন্নভাবে হতে পারে। ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক বা ক্ষণস্থায়ী স্ট্রোকের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগী ভালো বোধ করতে পারে। আবার আরও কিছুটা সময় নিয়ে রোগী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে ২৪ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হলে তাকে ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক বা ক্ষণস্থায়ী স্ট্রোক বলা যায় না।
...........................
Md. Emran Hossain
Coordination Officer
Department of Nutrition and Food Engineering (NFE)
Daffodil International University