শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন: অন্তরায় ও প্রতিকার

Author Topic: শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন: অন্তরায় ও প্রতিকার  (Read 2438 times)

Offline sharifmajumdar

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 108
  • You have to control your emotion to get success
    • View Profile
শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের বিষয়টি সুধীজন, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সুশীল সমাজকে বেশ উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সরকার মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বমহলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি যুগান্তকারী জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে এ শিক্ষানীতি অনুসারে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন সাধন। এই শিক্ষানীতি-২০১০ বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুসারে শিক্ষার মাধ্যমে যুগোপযোগী জনশক্তি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শিক্ষাক্রমের উন্নয়ন এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন। এর বাস্তবায়নের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে এ শিক্ষানীতি অনুসারে শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন এবং এজন্য প্রয়োজন সে অনুসারে শিক্ষাক্রম উন্নয়ন।

বাংলাদেশের রূপকল্প-২০২১ Vision-2021 এর লক্ষ্য হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। এর প্রধান উপায় হচ্ছে, শিক্ষার মাধ্যমে তা করার জন্য প্রয়োজন উপযোগী শিক্ষাক্রম। এই লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ প্রণীত হয়।

শিক্ষাক্রম উন্নয়নের নীতিমালা:

মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশপ্রেম বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি; নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের উপর গুরুত্ব প্রদান; অনুসন্ধিত্‍সা, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি বিজ্ঞানমনস্ক ও কর্মমুখী করার উপর গুরুত্ব আরোপ; আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি; তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে বাস্তবমুখী ও প্রয়োগমুখী শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি; জীবনদক্ষতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি; সব ধরনের বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে মানবাধিকারের উপর গুরুত্ব প্রদান; বৈশ্বিক চাহিদা অনুসারে মানবসম্পদ সৃষ্টির উপর গুরুত্ব প্রদান।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য পাঠকের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরছি:
 
এক) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা সংযোজনের পাশাপাশি প্রচলিত সামাজিক বিজ্ঞানের পরিবর্তে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয় সংযোজন।

দুই) জলবায়ু পরিবর্তন, প্রজনন স্বাস্থ্য, তথ্য অধিকার, অটিজম ইত্যাদি বিষয়বস্তু সংযোজন।

তিন) ধর্ম শিক্ষাসহ সকল বিষয়ে নৈতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান।

চার) যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক কাজ আজ, যেমন বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ইত্যাদি বিষয়ের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং শিক্ষাকে জীবন ও বাস্তবমুখী করার প্রয়াস।
 
পাঁচ) শিক্ষাকে জীবন ও বাস্তবমুখী করার প্রয়াস এবং দেশীয় প্রেক্ষাপটে উন্নয়নক্ষম জনশক্তি সৃষ্টির উপর গুরুত্ব প্রদান।

ছয়) শিক্ষার মাধ্যমে সর্বপ্রকার বৈষম্য দূর করে সক্ষমতা বিধানের সুযোগ সৃষ্টি। লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, পেশাগত ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে একীভূত শিক্ষায় গুরুত্ব প্রদান।

সাত) বৈশ্বিক চাহিদা অনুসারে মানব সম্পদ সৃষ্টির প্রয়াস। তবে কার্যক্ষেত্রে শিক্ষার  উন্নতির পথে কিছু অন্তরায় লক্ষ্যণীয়। যেমন, দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকের অভাব। প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের অভাব (পাঠাগারে বই, বিজ্ঞানাগারে যন্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম, মাল্টি মিডিয়া শ্রেণিকক্ষে প্রয়োজনীয় উপকরণ ইত্যাদি), শিক্ষকের সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব। ব্যবহারিক পরীক্ষা সঠিকভাবে না নিতে পারে সেই সাথে বিজ্ঞান শিক্ষার অবনতি ও দৈন্যদশা। শিক্ষার্থীর পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা। বাল্যবিবাহ। শিশুশ্রম।

শিক্ষার মানোন্নয়নে বিদ্যমান অন্তরায়গুলো দূরীকরণে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা যেন উচ্চশিক্ষার দিকে অগ্রসর হতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার ডিগ্রি/স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে, প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই অপ্রতুল।

বিজ্ঞান শিক্ষায় আমাদের দেশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। গত আট বছরে বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা ৩২% কমে এসেছে। ’৯০ দশকের  শেষের দিকে ৪১.১৫% ছাত্র-ছাত্রী বিজ্ঞান শাখায় অধ্যয়ন করতো। কিন্তু ২০০৮ সালে তা ২৩.৭৬% এ নেমে আসে। শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ, ব্যবহারিক গবেষণাগার ও মানসিক উদ্বুদ্ধকরণের অভাবে বিজ্ঞান শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার ব্যয় এই অনিচ্ছাকে উন্নততর করছে। অথচ শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুসারে শিক্ষাকে জীবন ও বাস্তবমুখী করার প্রয়াস বিদ্যমান যা বিজ্ঞান শিক্ষায় অগ্রগতি ব্যতীত অসম্ভব। ব্যবহারিক বিষয়সমুহের প্রতি অধ্যায়ে ব্যবহারিক কাজ সন্নিবেশিত হয়েছে হাতে-কলমে শিক্ষা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে।

কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই। গবেষণাগারের সমৃদ্ধির জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন; তা না হলে শুধু ভবন নির্মাণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন অসম্ভব। দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক যেন এই পেশায় যোগদান করতে আগ্রহী হয় সেজন্য তাঁদের বেতন কাঠামোর সংস্কার অপরিহার্যভাবে প্রয়োজন। তাছাড়া সময়োপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যদিও সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শিক্ষার উন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই। এজন্য দরকার সময়, সুযোগ ও অর্থায়ন।

সবশেষে বলা যায়, জ্ঞানভিত্তিক উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে না পারলে রাস্তাঘাট ও সেতু জাতীয় উন্নয়ন ধরে রাখতে পারবে না। যথোপযুক্ত ও যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে অবকাঠামোর চাকচিক্য ও জৌলুস সমৃদ্ধ জাতি বলে আমাদেরকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করাতে সক্ষম হবে না। শিক্ষার গুণগত মান অর্জনে ব্যর্থ হলে অবকাঠামো অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়বে।

source: banglanews24.com
Shariful Islam Majumdar
Lecturer, Department of MCT
Daffodil International University

Offline Tofazzal.ns

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 314
  • Test
    • View Profile
Muhammad Tofazzal Hosain
Lecturer, Natural Sciences
Daffodil International University