মহাশূন্যে অভিযানে নভোচারীর সঙ্গী হয়ে যাবে রোবট। নাম তার ‘মার্স রোভার’। এ রোবটের বৈশিষ্ট্য হতে হবে অনন্য। এটি হবে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন, উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর ও টেকসই। বিশেষ ধরনের এই রোবটগুলোর নকশা তৈরির রোমাঞ্চকর কাজটা করছেন বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মার্স রোভারের নকশা সংগ্রহের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ‘রোভার চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতা। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘ইউরোপীয় রোভার চ্যালেঞ্জ (ইআরসি)’। আগামী ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো পোল্যান্ডে হবে এ প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের ৩৪টি দল এ প্রতিযোগিতায় লড়বে। এতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশি রোবট নির্মাতাদের দুটি দল। প্রতিযোগী দলগুলো সেখানে মঙ্গল গ্রহের আদলে তৈরি কৃত্রিম পরিবেশে রোবট চালাবে, কাজ দেখাবে। বাংলাদেশ থেকে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ‘আইইউটি মার্স রোভার’ দল এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ‘বুয়েট ইন্টারপ্লানেটারস’ দল।
যা থাকবে প্রতিযোগিতায়
প্রতিযোগিতার বিষয়টি এবং প্রতিযোগিতা দুটিই ভিন্ন রকমের। মঙ্গল গ্রহের আবহে একটি কৃত্রিম গ্রহ থাকবে। সেখানকার সবকিছুই থাকবে মঙ্গলপৃষ্ঠের মতো। এবড়োখেবড়ো ভূমি, উঁচু-নিচু পথ—এসবই পাড়ি দেবে রোভার রোবট। প্রতিযোগিতার স্থান থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে থাকবে একটি স্টেশন (পৃথিবী) থাকবে। রোভার রোবট মঙ্গল গ্রহে (তৈরি করা) নামবে, চারদিকে ঘুরবে, মঙ্গলপৃষ্ঠের মাটি সংগ্রহ করবে। সেখানের মাটি পর্যবেক্ষণ করে পৃথিবীতে সংকেত ও প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠাবে। প্রতিযোগীরা তাঁদের নির্মিত রোবট নিয়ে এমনই প্রতিযোগিতায় নামবেন। রোবটগুলোয় থাকবে টেলিমেটরি সুবিধা। এগুলো হবে স্বনিয়ন্ত্রিত। সঙ্গে থাকবে চারপাশের পরিবেশ দেখার ক্যামেরা, মাটি খোঁড়া ও নমুনা সংগ্রহের সুযোগ, তাপমাত্রা পরিমাপ, তাৎক্ষণিক মাটি পরীক্ষা ও তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা।
আইইউটি মার্স রোভার
আইইউটির মার্স রোভার রোবটসেপ্টেম্বরের ১ তারিখে পোল্যান্ড যাবেন আইইউটি মার্স রোভার দলের সদস্যরা। এখন তাঁরা মার্স রোভারকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য পরীক্ষা করে দেখছেন। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু ঠিক আছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছেন এ দলের সদস্যরা। কিছু কাজের হালনাগাদ করছেন। রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য এ দলের সদস্যরা গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকেই কাজ শুরু করেছেন। এরপর কয়েকটি ধাপে অনলাইনে রোবটের বিস্তারিত উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় নিবন্ধিত হয়েছেন। দলের সদস্য জায়েদ আহমেদ বলেন, ‘বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেই আমরা রোবটটা বানিয়েছি। এটি একেবারে বিশ্বমানের না হলেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো।’ এ দলের অন্য সদস্যরা হলেন আরাফ ফারায়েজ, টি এম মনিরুজ্জামান, মাহমুদুল আলম, আবু সাইদ, ফাহরিয়াল আলম, মো. ইনতিসার নূর, মির্জা মুনতাসির, নাজমুস সাকিব, রায়হানুল ইসলাম, মিনহাজ-উস-সালেকীন, মো. উসামা ইসলাম ও আসিফ ইকবাল।
বুয়েট ইন্টারপ্লানেটারস
ইন্টারপ্লানেটারস দলের সদস্যরা ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়বেন। ইন্টারপ্লানেটারস রোবটের নির্মাণকাজ শুরু করে মাস তিনেক আগে। তাড়াহুড়ো থাকায় দলের পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি, কিছু কারিগরি কাজ বাকি আছে। পোল্যান্ড রওনা হওয়ার আগেই সব কাজ শেষ হবে, এমনই প্রত্যাশা দলের সদস্যদের। অনলাইনে কয়েকটি ধাপে রোবটের বিস্তারিত উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় নিবন্ধিত হয়েছেন তাঁরা। বুয়েট ইন্টারপ্লানেটারস দলের সদস্য আবুল-আল আরবি বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবই, এমন না! অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারছি, এটাই বড় পাওয়া।’ এ দলের অন্য সদস্যরা হলেন এস এম শায়াক ইবনে ফারুকী, ফজলে এলাহী খান, নওয়াব মো. আমিনুল হক, খালেদ বিন মঈনউদ্দিন, মেহেদী হাসান, মুহাইমিন রহমান, আসিফ রেজা চৌধুরী, আশিক-ই-রাসুল, শওমিক ইসলাম, শাহ জামান অনু, তানভীর আলম, কুমার দীপায়ন তূর্য, নাবিদ মুস্তফা, রেজা রশিদ, আবু আশরাফ ও সাখাওয়াত হোসেন।