স্কুলছাত্রী মণি বক্তব্য দেবে জাতিসংঘ অধিবেশনে
নূরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
দশম শ্রেণীর ছাত্রী মণি বেগম। কুলাউড়া তথা মৌলভীবাজার জেলার অহঙ্কার। যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হচ্ছে সে। জাতিসংঘের সেভ দ্য চিলড্রেন প্রোগ্রামের আওতায় কুলাউড়ার সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবে। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর আনন্দে ভাসছেন সুলতানপুর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কুলাউড়া উপজেলার মানুষ।
মণি বেগম মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ঘড়গাঁও গ্রামের গৃহপরিচারক মরম মিয়া ও হাওয়া বেগম দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ। সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী সে। পারিবারিক চাপে পঞ্চম শ্রেণীতেই পড়ালেখায় ইতি ঘটতে যাচ্ছিল অভাবী পরিবারের সন্তান মণির। কিন্তু তখন তার মানসিক দৃঢ়তা ও তেজোদীপ্ত মনোবলের কাছে হার মানে পারিবারিক দৈন্য। পরিবার ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় লেখাপড়া চালিয়ে যায় সে।
মেধার স্ফুরণ ঘটিয়ে সুলতানপুর বালিকা
উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ফার্স্ট গার্ল মণি। কুলাউড়ায় সেভ দ্য চিলড্রেন প্রকল্পে শিশু অধিকার বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিতরা পর্যবেক্ষণ করে মণির নাম ঢাকায় পাঠায়। সেখানকার কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে মণির নাম বাছাই করে বলে জানা যায়।
গতকাল রোববার মণি জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে সেভ দ্য চিলড্রেন প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশের একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে যোগদানের জন্য চিঠি পেয়েছে। সেখানে সে শিশুর অধিকার বিষয়ে বক্তব্য রাখবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদ রানা আব্বাস জানান, এ শুধু মণির গর্ব নয়, কুলাউড়াবাসীর জন্য আনন্দ ও খুশির বিষয়। মণি জাতিসংঘের অধিবেশনে যাবে তাই এলাকার বিত্তবানরা চাঁদার মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা তুলে তাকে পোশাক-পরিচ্ছদ কিনে দিয়েছেন।
মণি বেগম বলে, কখনও ভাবিনি রাজধানী ঢাকায় যাব। সেখানে সবার দোয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছি, যা কখনও কল্পনা করিনি।
সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু জাবেদ পাপ্পু মণি বেগমের জাতিসংঘের অধিবেশনে বক্তব্য রাখার তথ্য নিশ্চিত করে জানান, রোববার রাতের ট্রেনে মণিকে নিয়ে ঢাকা যাবেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ঢাকায় তিন দিন তাকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বলেন, আমরা অনেক আনন্দিত। আমাদের মণি উপজেলাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে। দরিদ্র এক দিনমজুরের সন্তান হয়ে মেধা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে মণি যোগ্যতার প্রমাণ করেছে।