বাংলাদেশ ফলমূলে সুসমৃদ্ধ । সারা বছরই বিভিন্ন রকমের ফল আমাদেরকে তৃপ্ত করে। আর সুস্বাদু ফল খেতে ছোট-বড় কে না পছন্দ করে! প্রতিদিনের খাবারের একটা বড় অংশ ফলমূল থাকা উচিত। তবে আমারা যদি একটু জেনে ও বুঝে ফল খাই তাহলে আমরা অনেক রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে পারবো। কোন ফলে কি উপাদান আছে এবং কোনটি খেলে কি উপকার হবে তা জেনেই ফল আহার করা উচিত। কোনো কোনো ফল আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী, আবার কোনো কোনোটি বিশেষ বিশেষ রোগের জন্য ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নিয়েই ফল খাওয়া উচিত। ফলে সব চেয়ে বেশি যে উপাদানটি থাকে তা হলো পানি। এছাড়া ফলের উল্লেখযোগ্য উপাদানগুলো হল ভিটামিন, মিনারেলস(খনিজ লবন) এবং ফাইবার(খাদ্য আঁশ)। যেহেতু ফল কাঁচাই খাওয়া যায় তাই ফলের ভিটামিন গুলো অক্ষত অবস্থায় আমাদের দেহে প্রবেশ করে। ভিটামিনের সব চেয়ে বড় উপকারিতা হলো তা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বেশিরভাগ ফলের ভিটামিনেই(যেমন- ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই) রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত ফলের মধ্যে লেবু, কমলালেবু, আম, আমড়া, পেয়ারা, আমলকী, আপেল অন্যতম। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর আরেকটি গুরুত্বপুর্ন কাজ হলো এটি বার্ধক্য কে বিলম্বিত করে, অর্থাৎ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত ফল খেলে বহু দিন তারুন্য ধরে রাখা যায় এবং সতেজ থাকা যায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের স্কিনকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে। সর্বপরি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের দেহে ক্যান্সার কে প্রতিরোধ করে। এবারে আসুন ফাইবার এর কথায়! ফলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফাইবার বা খাদ্যাশ। আমাদের হজম প্রক্রিয়া সচল রাখার জন্য ফাইবার এর জুড়ি নেই। প্রতিদিনের খাবারে কমপক্ষে ২৫ গ্রাম ফাইবার থাকা উচিত। এই ফাইবার আমাদের দেহের ক্ষতিকারক অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমায়, ফলে হৃদ রোগের ঝুঁকি কমে। যেহেতু ফলে ক্যালোরি মূল্য কম তাই এগুলো আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য দেশীয় কিন্তু কম ক্যালোরি মূল্যের ফলমূল অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া কিছু কিছু ফলে কার্বোহাইড্রেট থাকলেও প্রোটিন ও ফ্যাটের পরিমান কম থাকে। ফলের অন্যতম আরেকটি উপাদান হলো খনিজ লবন (যেমন-সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, কপার ইত্যাদি)। এগুলো আমাদের খুব কম পরিমানে দরকার হয়, তবে গ্রহণ না করলে ক্ষতি হয়। আবার কিছু কিছু রোগে কয়েকটি খনিজ লবন নিষিদ্ধ, যেমন- কিডনীর রোগে সোডিয়াম, পটাশিয়াম কে নিয়ন্ত্রিত কিংবা নিষিদ্ধ করা হয়। কাজেই ফলের উপাদান গুলো সম্পর্কে জেনে নিয়ে সঠিক ফলমূলই গ্রহণ করতে হবে, তানাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ফলমূল নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশীয় ফলগুলোকেই বেশী প্রাধান্য দেয়া যায়। রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই ফল গ্রহণ করা ভালো। আর সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষেরা সব ধরনের ফলমূলই গ্রহণ করতে পারেন। তাই প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য পরিমানে ফল গ্রহণ করুন, রোগমুক্ত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন।
• মুনমুন হক