থমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজারই প্রধান শিক্ষক, ১০ হাজার সহকারী। এছাড়া এদের প্রশিক্ষণের জন্য আরও ২৩২ জন ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ করা হবে।
এই তিনটি পদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ও ইন্সট্রাক্টর নিয়োগের লক্ষ্যে পৃথক বিজ্ঞাপন দেয়া হবে শিগগিরই। আর আদালতের রায়ের বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নিয়োগ করা হবে সহকারী শিক্ষক।
উল্লিখিত পদের বাইরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের আরেকটি প্রক্রিয়া বর্তমানে অব্যাহত আছে। দেশের পুরনো প্রায় ৩৮ হাজার বিদ্যালয়ে ১৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। প্রশ্ন ফাঁসের ঝুঁকির কারণে এই বিজ্ঞাপনের নিয়োগ পরীক্ষা সারা দেশে একযোগে না নিয়ে আলাদা করে নেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে দুই ধাপে ২২ জেলার পরীক্ষা নেয়া হয়। এই দুই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ৩ পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলার নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। সেই হিসেবে বাকি থাকে ৩৯ জেলা। এসব জেলার মধ্যে আগামী ১৬ অক্টোবর ২২টিতে এবং ৩০ অক্টোবর অবশিষ্ট ১৭ জেলার পরীক্ষা নেয়া হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আগের রাতে প্রশ্ন তৈরি করে ও সকালে তা ছাপিয়ে এই নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বৃহস্পতিবার বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক এবং ইন্সট্রাক্টর নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা পাচ্ছেন। আইন অনুযায়ী সরকারের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগ করে পিএসসি। আমরা পিএসসিকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণের জন্য রিকুইজিশন পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। দেশে বর্তমানে ৬৩ হাজার ৯৬টি সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৩৮ হাজার ৮৮টি পুরনো এবং ২৫ হাজার ৮টি নতুন জাতীয়করণকৃত। এসব বিদ্যালয়ে একটি করে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে। কিন্তু ২০ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এসব বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, যে ২০ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ খালি আছে, তারমধ্যে ১৫ হাজারই নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারি বিদ্যালয়। বাকি ৫ হাজার পুরনো।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী মোট পদের ৬৫ ভাগ পূরণ করতে হবে পদোন্নতির মাধ্যমে। বাকি ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগ করা হবে। পদোন্নতির শর্ত অনুযায়ী ন্যূনতম ৭ বছর সহকারী শিক্ষক হিসেবে সন্তোষজনক চাকরি, স্নাতক পাস এবং সিইনএড (সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন) ও ডিপইনএড (ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন) সনদ এবং ডিগ্রিধারী হতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পদে পদোন্নতি এবং নতুন নিয়োগ দুটিই পিএসসির মাধ্যমে করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরি করে তা পিএসসিতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
নাম প্রকাশ না করে মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এতদিন মামলার কারণে এই পদে নিয়োগ করা যায়নি। সম্প্রতি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। পরে শূন্যপদ দ্রুত পূরণে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগেই নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর জন্য সরকারি নীতিনির্ধারণী মহলের সম্মতি চাওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরও এ ব্যাপারে নির্দেশনা চাওয়া হয়। কিন্তু তারা পিএসসির মাধ্যমেই নিয়োগ সম্পন্নের নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) শিগগিরই রিকুইজিশন (শূন্য পদের তালিকা) পাঠানো হবে। মোট দুটি ভাগে এটি পাঠানো হবে। একটি ভাগে সরাসরি নিয়োগ, অপর ভাগে পদোন্নতির তালিকা পাঠানো হবে। পদোন্নতির তালিকায় ফিট লিস্টে শূন্য পদের বেশিসংখ্যক শিক্ষকের তালিকা দেয়া হবে। এটা এজন্য যে, প্রায় প্রতিদিনই প্রধান শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন। সেই হারে খালিও হচ্ছে। এই খালি পদ পূরণে যাতে বিলম্ব না হয়, সে জন্য পদোন্নতির তালিকা উল্লিখিতভাবে করা হবে।
প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষকরা। শিক্ষক নেতা শাহিনুর আলআমিন বলেন, প্রায় ৭ বছর ধরে এই পদে পদোন্নতি বন্ধ আছে। অনেক শিক্ষকই পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু পদোন্নতি না হওয়ায় বুকের ভেতরে কষ্ট চেপে রেখে তারা সহকারী শিক্ষক হিসেবে বিদায় নিয়েছেন। নতুন এই উদ্যোগে সিনিয়র শিক্ষকদের বঞ্চনার দিনের অবসান হবে।
প্যানেল থেকে ১০ হাজার : এদিকে দেশে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। এসব পদ পূরণের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে সরকার একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। এই বিজ্ঞাপনে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধে গত বছর রিট মামলা করেন সাবেক রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য প্যানেলভুক্ত শিক্ষকরা। এতে তারা তাদেরকে নিয়োগ সম্পন্ন না করে অন্য কোনো ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণের বিরুদ্ধে নির্দেশনা প্রত্যাশা করেন। জানা গেছে, উচ্চ আদালত তখন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করার নির্দেশ দেন। ফলে এ নিয়োগের কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।
বিপরীত দিকে প্যানেলভুক্ত শিক্ষকরা এরপর পরই নিয়োগের জন্য রিট মামলা দায়ের করেন। প্রথমে ২০১৪ সালের ১৮ জুন একটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট নওগাঁ জেলার ১০ জনকে নিয়োগের নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগে আবেদন করলে তাও ৭ মে খারিজ হয়ে যায়। এই খারিজের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে সরকার কোনো রিভিউ দায়ের করেনি। জানা গেছে, এভাবে প্রায় ১০ হাজার প্যানেলভুক্ত শিক্ষক নিয়োগ প্রত্যাশী পক্ষে রায় পেয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, আদালতের রায় বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তারা এই ১০ হাজার প্রার্থীকে নিয়োগের উদ্যোগ নেবেন। তবে তার আগে এ ব্যাপারে আইনি কোনো লড়াই অবশিষ্ট থাকলে তাও করা হবে বলে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান।
উল্লেখ্য, রেজিস্ট্রার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শেষে ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল উত্তীর্ণ ৪২ হাজার ৬১১ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এদের মধ্য থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১৪ হাজারকে নিয়োগও দেয়া হয়। এরই মধ্যে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব রেজিস্ট্রার্ড বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে ২৫ হাজার বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আর কোনো রেজিস্ট্রার্ড বিদ্যালয় নেই, তাই নিয়োগ দেয়ার জায়গা নেইÑ এমন অজুহাতে প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছিল না। অবশিষ্ট ২৮ হাজারের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার মামলা করে ইতিমধ্যে নিয়োগের রাস্তা সুগম করে এসেছেন।
২৩২ ইন্সট্রাক্টর : ওদিকে দেশের বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এবং উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ২৩২টি ইন্সট্রাক্টরের পদ খালি রয়েছে। এসব শূন্য পদ পূরণেরও উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
অতিরিক্ত সচিব ড. জ্ঞানেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ বিষয়ে জানান, আমরা ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ পাননি, তাদের মধ্য থেকে ইন্সট্রাক্টর পদে নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছি। এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পিএসসিকে অনুরোধ করাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে।