খাদ্য সংরক্ষণে সঠিক পদ্ধতি

Author Topic: খাদ্য সংরক্ষণে সঠিক পদ্ধতি  (Read 1236 times)

Offline Ishtiaque Ahmad

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 136
  • Test
    • View Profile

সংরক্ষণ করার জন্য নানান কৌশল ও খাদ্য সম্পর্কীয় যথেষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

খাবারের মধ্যে এনজাইমের ক্রিয়া, জীবাণুর বৃদ্ধি, পোকামাকড়ের আক্রমণ, আলো, অক্সিজেন, তাপমাত্রা, শুষ্কতা এমনকি কাটা, ফাটা, ও থ্যাঁতলানো ইত্যাদি কারণে খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা উচিত।

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ফারাহ মাসুদা সঠিক উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ করার উপায় সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, “খাদ্য সংরক্ষণ করার সঠিক উপায় নির্ভর করে ওই খাদ্যের পচনশীলতার বৈশিষ্টের উপরে। তাই সংরক্ষণের পদ্ধতি নির্বাচনের আগে খাদ্যের গুণগত মান ও পচনশীলতার বৈশিষ্ট সম্পর্কে ভালো ভাবে ধারণা রাখা দরকার।”

ফারাহ মাসুদা জানান, খাদ্য পচনশীলতার ভিত্তিতে তিন রকমের হয়ে থাকে।

১. দ্রুত পচনশীল: মাংস, দুধ, পাকাফল।

২. আংশিক পচনশীল: মাটির নিচে জন্মানো ফসল-আলু। কলা, সবজি, বেকারির খাদ্য।

৩. অ-পচনশীল খাদ্য: শস্যজাতীয় খাদ্য- ডাল, চিনি, মসলা, শুকনা খাবার ইত্যাদি।

পচনকাজে সাহায্য করে এমন সব বিষয়কে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে খাদ্য অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই ক্ষেত্রে কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। যেমন-

* খাদ্য থেকে পানি অপসারণ করে, বায়ুশূণ্য পরিবেশে রাখলে বা বরফে জমিয়ে রাখলে খাদ্যের ভেতরের জীবাণু ও এনজাইম নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

* ফুটানো, সিদ্ধ বা টিনজাত করে খাদ্যের জীবাণু ধ্বংস করা যায়।

* সংরক্ষক দ্রব্য যেমন- চিনি, লবণ, সিরকা, মসলা ও নানান রাসায়নিক সংরক্ষক দ্রব্য ব্যবহার করে খাদ্য পচন, গাঁজন ও জারণ রোধ করা যায়।

* রন্ধন পদ্ধতির পরিবর্তন এনেও খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়।

ঘরের সাধারণ যন্ত্রপাতি ও সংরক্ষক দ্রব্য ব্যবহার করে খাদ্য সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে ফারাহ মাসুদা বলেন, “হাতের নাগালে পাওয়া যায় এমন কিছু উপাদান ও কৌশল অবলম্বন করে এক মৌসুমের খাদ্য অন্য মৌসুম পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।”

এমনই কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে জানান তিনি।

শুষ্ককরণ: খাদ্যবস্তু থেকে পানি শুকিয়ে নিয়ে তা সংরক্ষণ করা যায়। এতে খাদ্যের ছত্রাক, জীবাণু ও এনজাইম প্রতিহত হয় এবং কোনো বিশেষ ব্যবস্থা ছাড়াই খাদ্য অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে বড়ই, খেজুর, আঙুর ইত্যাদি সংরক্ষণ করা যায়।

হিমায়িতকরণ: সঠিকভাবে ঠাণ্ডা করলে খাদ্যের পুষ্টিমান, রং ও গন্ধ অটুট থাকে। তবে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হলে খাদ্য দ্রব্যকে প্রথমে ভালো ভাবে পরিষ্কার করা দরকার। জীবাণু বৃদ্ধি ও এনজাইমের ক্রিয়া রোধ করার জন্য তিন,চার মিনিট ফুটন্ত পানিতে ভাপিয়ে নিয়ে তারপর ঠাণ্ডা পানিতা তা কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখতে হবে এরপর পানি ঝরিয়ে তা বায়ুশূন্য পলিথিন ব্যাগে মুড়ে বরফের মধ্যে রাখতে হবে।

রেফ্রিজারেশন ও ফ্রিজিং: রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রা ৪.৪ থেকে ১২.৮ সেলসিয়াসে থাকে। এতে খাদ্যের পানি ও রস বরফে পরিণত হয়না। তাই খাদ্য স্বল্প মেয়াদে ভালো থাকে।

ফ্রিজিংয়ের ক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে এই পদ্ধতি স্বল্প সময়ের জন্য প্রযোজ্য। বেশি দিন ফ্রিজিংয়ে রাখলে মাছ, মাংস ও চর্বির গন্ধ পরিবর্তন হয়। মাংসের হাড়ের রঞ্জক পদার্থ বাদামি রং ধারণ করে।

ফারাহ মাসুদা বলেন, “ফ্রিজে ছয় মাস পর্যন্ত মাছ ও মাংসের গুণ ঠিক থাকে। তাই বেশি দিন মাছ মাংস ফ্রিজে না রাখাই ভালো বলে মনে করি আমি।”

তিনি আরও বলেন, “ফ্রিজ থেকে মাছ-মাংস একবারই বের করা ভালো। একটি প্যাকেট থেকে মাছ বা মাংস খানিকটা বের করে আবার বাকিটা ফ্রিজে রেখে দেওয়া ঠিক না। প্রয়োজনে ছোটো ছোটো প্যাকেট করে রাখা যেতে পারে।”

উচ্চতাপ প্রয়োগ: দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য সংরক্ষণ করতে চাইলে উচ্চতাপ প্রয়োগ পদ্ধতি অবলম্বন করা সবচেয়ে ভালো। এতে জীবাণু কোষ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়।

পাস্তুরণ: এই পদ্ধতিতে অল্প তাপে খাদ্যবস্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয়। রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করা ও খাদ্যের বিশেষ পরিবর্তন ছাড়া কিছু সময় ধরে খাদ্য সংরক্ষণ করা পাস্তুরণের মূল উদ্দেশ্য। দুধ, জুস, বিয়ার ইত্যাদি পানীয় এই পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত করা হয়।

ধুমায়িতকরণ: মাছ, মাংস ও এর থেকে তৈরি খাদ্য ধোঁয়ার মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করা হয়। কাঠ, তুষ, খড় ইত্যাদির ধোঁয়ায় জীবাণুনাশক উপাদান থাকে। স্মোকড ফিস, কাবাব ইত্যাদি খাবার মসলা মিশিয়ে ধুমায়িত করলে স্বাদ ও গন্ধে পরিবর্তন আনে এবং কিছু দিন সংরক্ষণ করা যায়।

বোতলজাতকরণ: কম অম্লযুক্ত খাদ্য একশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রাখলে টিনজাত খাদ্যের জীবাণু ধ্বংস

হয়। এতে একটি মাধ্যম। ব্যবহার করা হয়- ফলের রস, চিনির সিরা, তেল, লবণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে।

চিনি ও লবণের দ্রবণে সংরক্ষণ: ঘন চিনির সিরায় খাদ্যের পানির ক্রিয়া হ্রাস পায়, ফলে জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে জ্যাম, জেলি, মারমালেড ইত্যাদি তৈরি করে অনেকদিন পযর্ন্ত রেখে দেওয়া যায়।

লবণের সাহায্যে খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণ করা যায়। যেমন- ইলিশ, লবণ মাংস, লবণ সবজি ও নানা রকমের আচার।

এই সকল পদ্ধতি ছাড়াও ফারমেন্টেশন ও পিকলিং, এলকোহলের গাঁজন, ইরাডিয়েশন বা গামা-রশ্মি ব্যবহার করেও খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়।

খাদ্য সংরক্ষণের সময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরমর্শ দেন ফারাহ মাসুদা। -

* সংরক্ষণের আগে টাটকা ও নিখুঁত খাদ্য বাছাই করে নিতে হবে।

* মাছ মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তা কাটা থেকে শুরু করে প্যাকেট করা পর্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

* তামা, কাঁসা, পিতল বা লোহার হাঁড়ি বা চামচ দিয়ে টক ফল নাড়াচাড়া করা ঠিক না। কাঠের চামচ ব্যবহার করা ভালো।

* সংরক্ষক পাত্র ঠিক ভাবে আটকানো উচিত ও সঠিক তাপমাত্রায় রাখা উচিত।

Offline Md. Rasel Hossen

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 299
  • Test
    • View Profile
Re: খাদ্য সংরক্ষণে সঠিক পদ্ধতি
« Reply #1 on: November 10, 2015, 10:22:51 AM »
Thanks for sharing
Md. Rasel Hossen
Senior Lecturer in Physics
Department of Natural Sciences
Daffodil International University,
Sukrabad, Dhanmondi, Dhaka-1207, Bangladesh