সারা রাত যদি ঘুম না আসে, চোখ জ্বালা–জ্বালা করে৷ তখন বিষাদ–কালো চোখদুটো জুড়িয়ে নেওয়ার জন্যে রাত নিজে–নিজেই অনেক ভেতরের দিকে চলে যায় আর আকাশে–বাতাসে ছড়িয়ে এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে৷
একটু পরেই কচি সোনারঙা সূর্য পুব আকাশে ছটফট করে উঠবে৷ আকাশের কোন নরম জায়গাটা যে আজ পছন্দ, কোথা থেকে শুরু করবে, বুঝতে একটু সময় নেবে৷ তারপর স্থির হয়ে বসবে৷
বসবার কি ফুরসত আছে? ওদিকে, ওই জলট্যাঙ্কের ওপাশে একতলার সবাই ঘুমে কাদা৷ ওদের পুঁচকে বাচ্চাটা ততক্ষণে উঠে গড়িয়ে খাট থেকে নামে আর ভোরে খুলে–রাখা দরজা পেরিয়ে বারান্দায় চলে আসে৷ বাইরে রাস্তা৷ ফুটপাথে তেঁতুলগাছে শালিকের দল৷ ছোট্ট চড়ুইয়ের ফুড়ুৎ৷ সে ঘোরে৷ রেলিঙে মুখ ঠেকায়৷ তুলতুলে হাত বের করে কচি গলায় ডাকে— আকুম! আকুম! খা, খা৷
পাখি, কুকুর, কাঠবেড়ালি— সবাই আকুম৷
তাকে চোখে–চোখে রাখতে হয়৷ এই রেলিং বেয়ে উঠছে, এই রেলিঙের বাইরে পা গলিয়ে শরীর এগিয়ে দিচ্ছে, এই মাথা বের করার চেষ্টা করছে৷
প্রতিটি বিপজ্জনক মুহূর্তে ছটফটে রোদ এসে বাচ্চাটিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়৷ আর প্রতিবারই আকাশ হেসে ওঠে৷ যেন সে দর্শক৷ সমর্থকও৷ তার রক্ষণভাগ নিখুঁত খেলছে৷
কিন্তু একদিন সূর্য পারল না৷ বাচ্চাটি তিনফুট উঁচু বারান্দা থেকে রেলিং গলে নিচে পড়ে গেল৷
সে কিন্তু রেলিং গলে বেরিয়ে বাইরে যেতে চেয়েছিল৷ পড়ে যেতে চায়নি৷
দু’বছরের কচি হাড়৷ ককিয়ে উঠল৷ তার কান্না আর চিৎকার শুনে সবার ঘুম ভেঙে যায়৷ ছুটে আসে৷
সূর্য তখন লজ্জায় মুখ লুকোবার জন্যে একটুকরো মেঘ খুঁজছে৷ মার্চের মেঘ অভিমানে নিজেকে সরিয়ে নিল৷ আকাশের নীল ততক্ষণে ক্ষোভে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে৷
সবাই বাচ্চাটিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল৷ অত সকালে ডাক্তারবাবু বসেন না৷ তবু পাড়ার কেস৷ জানলায় বাসি মুখ এনে তিনি হাসপাতালে যেতে বললেন৷ এক্স-রে দরকার৷ কোথাও ভেঙেছে কিনা জানতে হবে৷
হাসপাতালে গেলে সূর্য কি আর নিচের আকাশে চুপটি করে বসে থাকতে পারে! চড়চড় করে ওপরে উঠল৷ আর অপরাধীর মতো দেখতে লাগল চারদিক৷
আউটডোর, ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, বেড— এত হইচইয়ে বাচ্চাটি কখন যেন থম মেরে মায়ের কোলে নেতিয়ে পড়েছে৷
একটা নার্স, মাথায় গম্ভীর–সাদা পায়রা, কাছে এল৷ ইঞ্জেকশন দেবে৷ ঝুঁকে দেখল বাচ্চাটিকে৷ ডানপায়ে আলতো হাত দিতেই ফের ককিয়ে উঠল বাচ্চাটি, যদিও আকাশ আগেই ওর পায়ে পুরু নীলের পুলটিস লাগিয়ে দিয়েছিল৷
বিকেলে তাকে নিয়ে যাওয়া হল চৌকো অন্ধকার একটা ঘরে৷ সে–ঘরে বিরাট এক যন্ত্র৷ লম্বা গলা৷ নড়েচড়ে৷ তার রশ্মির ক্ষমতা এত বেশি, সূর্যের অনেকটা রোদ একত্র করলেও ততটা নয়৷ হড়হড়িয়ে লম্বা গলা বের করল যন্ত্রটা৷ তার রশ্মি কেউ দেখতে পেল না৷ শুধু অলক্ষ্যে বাচ্চাটির ছোট্ট ডানপায়ের ভেতরে ডুবুরির মতো নেমে গেল আর খুঁজে পেল— ঊরুর হাড়ে চোট লেগেছে৷ মিহি একটা চিড়৷
যন্ত্রচালকই অনিচ্ছায় বাচ্চার বাবাকে কথাটা প্রথম জানায়, যেন চিড়িয়াখানায় কোনও বখাটে দর্শক তাদের খাঁচায় একটা ঢিল ছুঁড়ে মেরেছে৷ লোকটার চোখের সামনে ধরা তখন কালো রঙের একটা প্লেট৷
বাবা জানায় কাকাকে৷ কাকা একটু তফাতে বসে থাকা মাকে৷ মায়ের কোলে বাচ্চাটি কিছুই জানতে পারে না৷ তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে৷
কয়েক দিন পর বাড়ি ফিরল বাচ্চাটি৷ পায়ে মোটা প্লাস্টার৷ সে জানে না— প্লাস্টারের ভেতর, আরও ভেতরে, একটা চিড় এইভাবে জোড়া লাগবে৷
এখন সে নড়াচড়াও বিশেষ করতে পারে না৷ প্লাস্টারের ভারে দিনরাত শুয়ে থাকে৷ বাবা আবার অফিস যেতে শুরু করেছে৷ মা–ও করবে আর কয়েক দিন পর৷ কাকার দিল্লি যাওয়ার সময় হয়ে এল৷ নতুন চাকরি৷
শুধু সে আর বারান্দায় যেতে পারে না৷ ভোর এসে ঘুম ভাঙিয়ে দিলে মশারির ভেতর থেকে ঘরের চারদিকে সে তাকায় আর চুপটি করে শুয়ে থাকে৷
এখন ছবির ফ্রেম থেকে দেওয়ালের হরিণগুলো নেমে এসে কাছটিতে বসে৷ জঙ্গলের গল্প শোনায়৷ তাদের ক্ষিপ্র গতির কথা বলে৷
এখন অনেক দিনের দেওয়ালে আটকানো সেই বেড়ালটা, নাদুসনুদুস, দেমাকি, সেও নামে ফ্রেম থেকে৷ তার নরম বাদামি–সাদা লোমে আদর করে৷ টেবিলের ওপর রাখা হারমোনিয়াম খুব আস্তে বেজে ওঠে৷ যেন হাওয়ায় ভাসা সুর৷
কিন্তু এসবে কৌতূহল নেই তার৷ বরং সে মায়ের বালিশের কাছে রাখা মোবাইল ফোনটা টেনে নেয়৷ আর সেই ফোন কানে চেপে ধরে৷ যখন সে ছুটে বেড়াত, কানের কাছে ধরে এঘর–ওঘর এমনি–এমনি ঘুরত আর কী–সব বকবক করত৷
এখন কানে ধরতেই মোবাইলে ফিসফিসিয়ে কেউ বলে— উঠে গেছি আমি৷ ছটফট করছি তোমার জন্যে৷ কত কাঁচা রোদ এনেছি৷ আকাশ রাঙিয়ে দিয়েছি পুরো৷ বেরিয়ে এসো, দেখে যাও!
আকাশ বলে— তোমার ওপরটা আমি নরম আর নীল করে রেখেছি৷ এসো, আমাকে ছোঁও৷ দেখ, তুমি যতই হাত বাড়াবে, ততই আমি নিজেকে ওপরে তুলে নেব৷ মজার খেলা না?
মোবাইলটা কানে আরও চেপে ধরে সে৷ আরও৷
মেঘ তখন বলছে— আমি তো তুলোর মতো৷ তুমিও৷ তোমায় নিয়ে উড়ে যেতে পারি অনেক দূরে৷ অ–নে–ক৷ আকাশের হুই পারে৷ তুমি ভাবতেও পারবে না, সে কত দূর৷
বারান্দার রেলিং ততক্ষণে মোবাইলে বাধো–বাধো মুখ এগিয়ে এনেছে৷ বলছে— আমি তো আলোর জন্যে, হাওয়ার জন্যে নিজেকে ফালা–ফালা করে রেখেছি৷ আগে ছিলাম গরাদ৷ এখন কত বাহারি নকশা আমার৷ সত্যি বলছি, তোমায় ফেলতে চাইনি আমি৷ তা ছাড়া, মনে করে দেখ, তুমি তো বেরিয়ে যেতেই চেয়েছিলে৷ নিচে পড়ে যেতে তো চাওনি!
বাচ্চাটি ফোন রেখে দেয়৷
একবার বাবাকে দেখে৷ একবার মাকে৷ ওরা তখনও ঘুমোচ্ছে৷
মশারির চারপাশে তাকায় সে৷ পায়ের ভেতরে একটা ছোট্ট যন্ত্রণা ঘুরে–ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
হয়ত তার মনে পড়ে— সত্যিই তো, সে বাইরে যেতেই চেয়েছিল৷ নিচে পড়ে যেতে তো চায়নি!
ওই তো বাবা৷ ঘুমে কাদা৷ মা৷ সেও ঘুমোচ্ছে৷ তবে মায়ের একটা আলতো হাত তার বুকে৷
ভাবে— তাহলে বাইরে সে কোথায় যেতে চেয়েছিল?
source...
সারা রাত যদি ঘুম না আসে, চোখ জ্বালা–জ্বালা করে৷ তখন বিষাদ–কালো চোখদুটো জুড়িয়ে নেওয়ার জন্যে রাত নিজে–নিজেই অনেক ভেতরের দিকে চলে যায় আর আকাশে–বাতাসে ছড়িয়ে এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে৷
একটু পরেই কচি সোনারঙা সূর্য পুব আকাশে ছটফট করে উঠবে৷ আকাশের কোন নরম জায়গাটা যে আজ পছন্দ, কোথা থেকে শুরু করবে, বুঝতে একটু সময় নেবে৷ তারপর স্থির হয়ে বসবে৷
বসবার কি ফুরসত আছে? ওদিকে, ওই জলট্যাঙ্কের ওপাশে একতলার সবাই ঘুমে কাদা৷ ওদের পুঁচকে বাচ্চাটা ততক্ষণে উঠে গড়িয়ে খাট থেকে নামে আর ভোরে খুলে–রাখা দরজা পেরিয়ে বারান্দায় চলে আসে৷ বাইরে রাস্তা৷ ফুটপাথে তেঁতুলগাছে শালিকের দল৷ ছোট্ট চড়ুইয়ের ফুড়ুৎ৷ সে ঘোরে৷ রেলিঙে মুখ ঠেকায়৷ তুলতুলে হাত বের করে কচি গলায় ডাকে— আকুম! আকুম! খা, খা৷
পাখি, কুকুর, কাঠবেড়ালি— সবাই আকুম৷
তাকে চোখে–চোখে রাখতে হয়৷ এই রেলিং বেয়ে উঠছে, এই রেলিঙের বাইরে পা গলিয়ে শরীর এগিয়ে দিচ্ছে, এই মাথা বের করার চেষ্টা করছে৷
প্রতিটি বিপজ্জনক মুহূর্তে ছটফটে রোদ এসে বাচ্চাটিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়৷ আর প্রতিবারই আকাশ হেসে ওঠে৷ যেন সে দর্শক৷ সমর্থকও৷ তার রক্ষণভাগ নিখুঁত খেলছে৷
কিন্তু একদিন সূর্য পারল না৷ বাচ্চাটি তিনফুট উঁচু বারান্দা থেকে রেলিং গলে নিচে পড়ে গেল৷
সে কিন্তু রেলিং গলে বেরিয়ে বাইরে যেতে চেয়েছিল৷ পড়ে যেতে চায়নি৷
দু’বছরের কচি হাড়৷ ককিয়ে উঠল৷ তার কান্না আর চিৎকার শুনে সবার ঘুম ভেঙে যায়৷ ছুটে আসে৷
সূর্য তখন লজ্জায় মুখ লুকোবার জন্যে একটুকরো মেঘ খুঁজছে৷ মার্চের মেঘ অভিমানে নিজেকে সরিয়ে নিল৷ আকাশের নীল ততক্ষণে ক্ষোভে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে৷
সবাই বাচ্চাটিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল৷ অত সকালে ডাক্তারবাবু বসেন না৷ তবু পাড়ার কেস৷ জানলায় বাসি মুখ এনে তিনি হাসপাতালে যেতে বললেন৷ এক্স-রে দরকার৷ কোথাও ভেঙেছে কিনা জানতে হবে৷
হাসপাতালে গেলে সূর্য কি আর নিচের আকাশে চুপটি করে বসে থাকতে পারে! চড়চড় করে ওপরে উঠল৷ আর অপরাধীর মতো দেখতে লাগল চারদিক৷
আউটডোর, ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, বেড— এত হইচইয়ে বাচ্চাটি কখন যেন থম মেরে মায়ের কোলে নেতিয়ে পড়েছে৷
একটা নার্স, মাথায় গম্ভীর–সাদা পায়রা, কাছে এল৷ ইঞ্জেকশন দেবে৷ ঝুঁকে দেখল বাচ্চাটিকে৷ ডানপায়ে আলতো হাত দিতেই ফের ককিয়ে উঠল বাচ্চাটি, যদিও আকাশ আগেই ওর পায়ে পুরু নীলের পুলটিস লাগিয়ে দিয়েছিল৷
বিকেলে তাকে নিয়ে যাওয়া হল চৌকো অন্ধকার একটা ঘরে৷ সে–ঘরে বিরাট এক যন্ত্র৷ লম্বা গলা৷ নড়েচড়ে৷ তার রশ্মির ক্ষমতা এত বেশি, সূর্যের অনেকটা রোদ একত্র করলেও ততটা নয়৷ হড়হড়িয়ে লম্বা গলা বের করল যন্ত্রটা৷ তার রশ্মি কেউ দেখতে পেল না৷ শুধু অলক্ষ্যে বাচ্চাটির ছোট্ট ডানপায়ের ভেতরে ডুবুরির মতো নেমে গেল আর খুঁজে পেল— ঊরুর হাড়ে চোট লেগেছে৷ মিহি একটা চিড়৷
যন্ত্রচালকই অনিচ্ছায় বাচ্চার বাবাকে কথাটা প্রথম জানায়, যেন চিড়িয়াখানায় কোনও বখাটে দর্শক তাদের খাঁচায় একটা ঢিল ছুঁড়ে মেরেছে৷ লোকটার চোখের সামনে ধরা তখন কালো রঙের একটা প্লেট৷
বাবা জানায় কাকাকে৷ কাকা একটু তফাতে বসে থাকা মাকে৷ মায়ের কোলে বাচ্চাটি কিছুই জানতে পারে না৷ তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে৷
কয়েক দিন পর বাড়ি ফিরল বাচ্চাটি৷ পায়ে মোটা প্লাস্টার৷ সে জানে না— প্লাস্টারের ভেতর, আরও ভেতরে, একটা চিড় এইভাবে জোড়া লাগবে৷
এখন সে নড়াচড়াও বিশেষ করতে পারে না৷ প্লাস্টারের ভারে দিনরাত শুয়ে থাকে৷ বাবা আবার অফিস যেতে শুরু করেছে৷ মা–ও করবে আর কয়েক দিন পর৷ কাকার দিল্লি যাওয়ার সময় হয়ে এল৷ নতুন চাকরি৷
শুধু সে আর বারান্দায় যেতে পারে না৷ ভোর এসে ঘুম ভাঙিয়ে দিলে মশারির ভেতর থেকে ঘরের চারদিকে সে তাকায় আর চুপটি করে শুয়ে থাকে৷
এখন ছবির ফ্রেম থেকে দেওয়ালের হরিণগুলো নেমে এসে কাছটিতে বসে৷ জঙ্গলের গল্প শোনায়৷ তাদের ক্ষিপ্র গতির কথা বলে৷
এখন অনেক দিনের দেওয়ালে আটকানো সেই বেড়ালটা, নাদুসনুদুস, দেমাকি, সেও নামে ফ্রেম থেকে৷ তার নরম বাদামি–সাদা লোমে আদর করে৷ টেবিলের ওপর রাখা হারমোনিয়াম খুব আস্তে বেজে ওঠে৷ যেন হাওয়ায় ভাসা সুর৷
কিন্তু এসবে কৌতূহল নেই তার৷ বরং সে মায়ের বালিশের কাছে রাখা মোবাইল ফোনটা টেনে নেয়৷ আর সেই ফোন কানে চেপে ধরে৷ যখন সে ছুটে বেড়াত, কানের কাছে ধরে এঘর–ওঘর এমনি–এমনি ঘুরত আর কী–সব বকবক করত৷
এখন কানে ধরতেই মোবাইলে ফিসফিসিয়ে কেউ বলে— উঠে গেছি আমি৷ ছটফট করছি তোমার জন্যে৷ কত কাঁচা রোদ এনেছি৷ আকাশ রাঙিয়ে দিয়েছি পুরো৷ বেরিয়ে এসো, দেখে যাও!
আকাশ বলে— তোমার ওপরটা আমি নরম আর নীল করে রেখেছি৷ এসো, আমাকে ছোঁও৷ দেখ, তুমি যতই হাত বাড়াবে, ততই আমি নিজেকে ওপরে তুলে নেব৷ মজার খেলা না?
মোবাইলটা কানে আরও চেপে ধরে সে৷ আরও৷
মেঘ তখন বলছে— আমি তো তুলোর মতো৷ তুমিও৷ তোমায় নিয়ে উড়ে যেতে পারি অনেক দূরে৷ অ–নে–ক৷ আকাশের হুই পারে৷ তুমি ভাবতেও পারবে না, সে কত দূর৷
বারান্দার রেলিং ততক্ষণে মোবাইলে বাধো–বাধো মুখ এগিয়ে এনেছে৷ বলছে— আমি তো আলোর জন্যে, হাওয়ার জন্যে নিজেকে ফালা–ফালা করে রেখেছি৷ আগে ছিলাম গরাদ৷ এখন কত বাহারি নকশা আমার৷ সত্যি বলছি, তোমায় ফেলতে চাইনি আমি৷ তা ছাড়া, মনে করে দেখ, তুমি তো বেরিয়ে যেতেই চেয়েছিলে৷ নিচে পড়ে যেতে তো চাওনি!
বাচ্চাটি ফোন রেখে দেয়৷
একবার বাবাকে দেখে৷ একবার মাকে৷ ওরা তখনও ঘুমোচ্ছে৷
মশারির চারপাশে তাকায় সে৷ পায়ের ভেতরে একটা ছোট্ট যন্ত্রণা ঘুরে–ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
হয়ত তার মনে পড়ে— সত্যিই তো, সে বাইরে যেতেই চেয়েছিল৷ নিচে পড়ে যেতে তো চায়নি!
ওই তো বাবা৷ ঘুমে কাদা৷ মা৷ সেও ঘুমোচ্ছে৷ তবে মায়ের একটা আলতো হাত তার বুকে৷
ভাবে— তাহলে বাইরে সে কোথায় যেতে চেয়েছিল?
source...
http://arts.bdnews24.com/?p=7122#more-7122