ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ায় পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটছেন, সামনে বন্ধুকে পেয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন করমর্দন করবেন বলে। ভাবছেন, বন্ধুটি করমর্দন করতে করতে বলবেন, ‘কী রে দোস্ত, কেমন আছিস?’ কিন্তু না, বন্ধুর অবাক করা প্রশ্ন—‘কী রে দোস্ত, তোর হাতের এই অবস্থা ক্যান?’ বন্ধুর প্রশ্নে লজ্জা পেয়ে হাত গুটিয়ে নিতে নিতে হয়তো উত্তর দিচ্ছেন, ‘আর বলিস না। শীতকাল এলেই আমার এই অবস্থা হয়, হাতের চামড়া উঠতে থাকে। চামড়া তো নয় যেন দিস্তা দিস্তা সাদা কাগজ!’ এই সমস্যার কথাই জানালেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী জনি মিয়া। তাঁর মতো আরও অনেকেরই হয়তো এমন অবস্থায় পড়তে হয়। শুধু হাত-পায়ের চামড়া ওঠা নয়, শীত ঋতুতে একটু অবহেলায় প্রকট হয়ে ধরা দিতে পারে ছেলেদের ত্বকের আরও নানা সমস্যা।
আবহাওয়া শীত ঋতুর বারতা নিয়ে এসেছে। আর এই শীতে ত্বকের এ ধরনের সমস্যায় যাতে না পড়েন, তাই আগেভাগেই জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ। প্রতিদিন একটু সময় দিলেই ভালো থাকবে আপনার ত্বক, ভালো থাকবেন আপনি। হলিফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক সৈয়দ আফজালুল করিমের পরামর্শ—* শীতে ত্বক সহজেই আর্দ্রতা হারায়। ফলে চামড়া শুকিয়ে যায় ও চামড়ায় ফাটল ধরে। তাই আর্দ্রতা ধরে রাখতে প্রতিদিন গোসলের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
* ক্রিম, লোশন, সাবান—শীতে, সব ধরনের প্রসাধনেই থাকা চাই বাড়তি ময়েশ্চারাইজার। ক্ষারযুক্ত সাবান এড়িয়ে চলুন।
* চুলের জন্য আসলে তেল ব্যবহারের দরকার হয় না। বাজারে ছেলেদের জন্য পৃথক শ্যাম্পু মেলে। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।
* রোদ থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন।
* পায়ে স্যান্ডেলের পরিবর্তে জুতা পরুন। পা ভালো করে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করুন। রাতে ঘুমানোর আগে পায়ে পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন মেখে নিতে পারেন।
কথা হলো পারসোনার ঢাকার ধানমন্ডি শাখার ব্যবস্থাপক মো. মাসুম বিল্লাহ খানের সঙ্গে। তিনি জানান ত্বক ও চুলের যত্নের খুঁটিনাটি।
যত্নে রাখতে চুল, হয় না যেন ভুলচুলে জমে থাকা ধুলাবালি দূর করতে অবশ্যই নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। শ্যাম্পু মাথায় ৫-১০ মিনিট রেখে হালকা কুসুম গরম পানিতে চুল ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু যাতে পুরোপুরি ধুয়ে যায়। অনেক ছেলেই কিন্তু এ বিষয়টি খেয়াল করেন না। যাঁদের ত্বক শুষ্ক শীতে তাঁদের চুলে খুশকি বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন খুশকিরোধক শ্যাম্পু। আর শ্যাম্পুর পর ব্যবহার করুন কন্ডিশনার। সপ্তাহে অন্তত তিন-চারবার অয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন। আর মাসে অন্তত দুবার পারলারে গিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন।
প্রতিদিনই নিয়ম করে যত্ন নিন ত্বকেরত্বকের যত্নআত্তিসকালটা শুরু করতে পারেন কুসুম গরম পানিতে মুখ-হাত-পা ধুয়ে। তারপর ময়েশ্চারাইজার লোশন লাগান। বাইরে বেরোলে ত্বকে মেখে নিন সানস্ক্রিন লোশন। সানস্ক্রিন লোশনে থাকা এসপিএফ (সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর) ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে বাঁচায়। সে ক্ষেত্রে এসপিএফ ২৫ (আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকরী) এবং এসপিএফ ৩০ (তিন ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকরী) সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা ভালো। এই সময়ের পর এর কার্যকারিতা হ্রাস পেয়ে একসময় উল্টো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ফলে নির্দিষ্ট সময় পর অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ত্বক থেকে সরিয়ে ফেলুন।

* ব্যাগে রাখতে পারেন একটা সানস্ক্রিন লোশনের টিউব, যাতে যখন-তখন মুখ ধুয়ে মেখে নিতে পারেন।
* টমেটো আর কমলালেবুর রস ত্বক পরিষ্কার করতে বেশ সাহায্য করে। এগুলো টুকরো করে কেটে মুখে তিন-চার মিনিট ঘষে, মুখ ধুয়ে নিন।
* গোসল শেষে অলিভ অয়েল ও গোলাপজলের মিশ্রণ মাখতে পারেন শরীরে। কখনো বা মাখতে পারেন ভিটামিন ‘ই’সমৃদ্ধ তেল।
* রাতে ঘুমানোর আগে ফেসওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে মেখে নিতে পারেন ময়েশ্চারাইজার ক্রিম।
* শুকনো খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, শাকসবজি-ফলমূল খান।
ঠোঁটের যত্নেশীতে ঠোঁটফাটা ঠেকাতে ঠোঁটে মাখুন পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন। অনেকে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজান। এতে ফল হয় উল্টো। দ্রুত ঠোঁট আর্দ্রতা হারায়, শুকিয়ে যায়, চামড়া ওঠে আরও বেশি। এ জন্য পেট্রোলিয়াম জেলির ছোট একটি টিউব পকেটে রেখে দিতে পারেন সারা দিন ব্যবহারের জন্য।
হাত-পায়ের যত্নেহাত-পায়ের খসখসে ভাব দূর করতে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা গ্লিসারিন ম্যাসাজ করতে পারেন। শীতে পায়ে দুর্গন্ধ হয় অনেকের, বিশেষ করে যাঁরা শু বা কেডস পরেন তাঁদের। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়মিত গরম পানিতে মোজা ধোয়া চাই। এই শীতেও যাঁরা স্যান্ডেল পায়ে চলেন, তাঁরা প্রতিদিন বাড়ি ফিরে পা ধুয়ে নিন। পাত্রে কুসুম গরম পানি নিয়ে, তাতে কয়েক চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে পা ডুবিয়ে বসে থাকুন কিছুক্ষণ। সম্ভব হলে প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে এমনটা করতে পারেন। এতে আপনার পা যেমন থাকবে ধুলাবালি ও দুর্গন্ধমুক্ত তেমনি থাকবে সতেজ।
ঘষে ঘষে পায়ের গোড়ালির মরা চামড়া তোলার জন্য, আছে ফুট স্ক্র্যাপার বা ঝামা। ঝামাটি মাটি দিয়ে তৈরি হলেই ভালো। ধাতব বা স্টিলের হলে পা কেটে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। ইদানীং অনেকেই পায়ের গোড়ালির মোটা চামড়া কাটতে উঠে পড়ে লাগেন, যা মোটেও ঠিক না। কন কাটার (পায়ের চামড়া কাটার বিশেষ যন্ত্র) দিয়ে কাটতে গেলে অসাবধানতাবশত বেশি কেটে গিয়ে রক্তপাতও হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রয়োজনে পারলারে গিয়ে প্যাডিকিওর করিয়ে নিতে পারেন।
.
ঢাকার গুলশানের মেনজ কেয়ার স্যালনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন যোগ করলেন আরও কিছু পরামর্শ—* •গ্লিসারিন, পেট্রোলিয়াম জেলি বা লিপজেল ঠোঁট ফাটা দূর করবে। সকালের সবুজ ঘাসের ওপরের স্বচ্ছ শিশির ঠোঁটে মেখে নিলে খুব ভালো। এটি বেশ উপকারী।
* গ্লিসারিন ও পানির মিশ্রণ টানা সাত দিন ব্যবহার করুন, হাতের কনুই ও পায়ের খসখসে ভাব দূর হবে।
* রোদে বের হওয়ার কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন লোশন মেখেই রোদে নেমে পড়লে ত্বক উল্টো কালো হয়ে যায়।
* গোসল করার ২৫-২০ মিনিট আগে ঘাড়, হাতেআর পায়ে টকদই মেখে নিতে পারেন।
* বাজারে প্যাকেটজাত কিউকাম্বার পাউডার (শসার গুঁড়া) পাওয়া যায়। কিউকাম্বার পাউডার দুধ ও মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে রাখতে পারেন ১৫-২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে নিন, মুখের ত্বক পরিষ্কার হবে।
* গোসল করার ২৫-২০ মিনিট আগে ঘাড়, হাত ও পায়ে টকদই মেখে নিতে পারেন।
* সপ্তাহে দু-তিন দিন, মাল্টা দিয়ে ঘষেও মুখের ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন।
* শেভ করার সময়, প্রথমে কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তার ভাপ নিন গালে। এতে দাঁড়ির গোড়া নরম হবে। না হলে গাল কেটে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। পরে জীবাণুনাশক ক্রিম দিয়ে ম্যাসাজ করে জেল বা ফোম দিয়ে শেভ করে নিন। সব শেষে আফটার শেভ লোশন বা আফটার শেভ বাম মেখে নিন।
Source:http://www.prothom-alo.com/life-style/article/692665/%E0%A6%AF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A8-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%8F%E0%A6%87-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%9F%E0%A7%87