প্রতি বছর একজন ব্যক্তি গড়ে কমপক্ষে এক হাজার প্লাস্টিকের টুকরো খেয়ে থাকেন। প্রতিদিন খাবারকে সুস্বাদু করতে ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে আমরা যে লবণ ব্যবহার করি তার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ক্ষতিকারক এসব প্লাস্টিক। সম্প্রতি এমন অবাক করা তথ্যই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
লবণের প্রধান উৎস সমুদ্র। আর প্রতি বছর কমপক্ষে ৫০ লাখ টন প্লাস্টিকবর্জ্য সমুদ্রে ফেলে মানুষ। এসব প্লাস্টিকই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হয়ে মিশে যায় লবণের সাথে। প্রতি কেজি লবণে কয়েক হাজার অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা থাকে বলে জানতে পেরেছেন চীনে লবণ উৎপাদনবিষয়ক গবেষণায় নিয়োজিত একদল বিজ্ঞানী।
প্রধান দুটি উপায়ে ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের টুকরোগুলো আসে বোতল, শপিং ব্যাগ ও শিল্প বর্জ্যসহ প্রচুর প্লাস্টিক সমুদ্রে ফেলার কারণে এবং মেকাপ জাতীয় প্রসাধনী ও টুথপেস্টে ব্যবহৃত ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা। প্লাস্টিকের এ কণাগুলো আকারে সর্বোচ্চ ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়, তবে এদের বেশি ভাগই এত ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। আর এ কারণেই এগুলো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
তা ছাড়া এই ক্ষুদ্র টুকরোগুলো সহজেই প্লাঙ্কটনসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক উদ্ভিদ শোষণ করে নেয়, ফলে শেলফিসের মতো অভিজাত সামুদ্রিক উপাদানে তৈরি খাবারের মাধ্যমে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে প্লাস্টিক কণাগুলো।
অনেক ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখা গেছে, অতিক্ষুদ্র আকারের এ প্লাস্টিকের টুকরোগুলো সহজেই মানুষের শরীরের কোষে প্রবেশ করে টিস্যুকে নষ্ট করে দিতে পারে। এ ছাড়া এগুলো শরীরে ডিডিটি কীটনাশক ও পলিকোরিনেটেড বাইফিনাইলের মতো বিভিন্ন বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের সমাবেশ ঘটাতে পারে।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাংহাইয়ের ইস্ট চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা ১৫টি ব্র্যান্ডের সামুদ্রিক লবণকে পরীক্ষা করে দেখেছেন। আমেরিকান কেমেস্ট্রি সোসাইটির গবেষণা জার্নাল এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মতে, প্রতি কেজি সামুদ্রিক লবণে ৫৫০ থেকে ৬৮১টি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক টুকরো থাকে। এ ছাড়া শিলা ও খনিজ লবণেও প্রতি কেজিতে ২০৪টি প্লাস্টিক টুকরো থাকে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণের জন্য কোনো ব্যক্তি যখন খাদ্যে লবণ ব্যবহার করেন তখন তিনি প্রতিদিন গড়ে তিনটি কিংবা বছরে গড়ে এক হাজার প্লাস্টিক টুকরো গ্রহণ করেন।