কর্মক্ষেত্রে সারাদিন খেটে মরছেন কর্মচারীরা। এর জন্য তাদের স্ট্রেসের শেষ নেই। কিন্তু শুধু কর্মচারীরাই কি স্ট্রেসে থাকেন? ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কি অবস্থা? তার ব্যাপারে কি কেউ ভাবেন? যে মানুষটি একা এতগুলো কর্মচারীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, তার কি কোনও মানসিক চাপ নেই? আছে। আর মাথার ওপরে শত রকমের চিন্তা আছে বলেই অনেক সময়ে কর্মকর্তারা হয়ে ওঠেন “কন্ট্রোল ফ্রিক” বা সহজে যাকে বলা যায় স্বৈরাচারী। কর্মচারীরা যে নিজেদের মতো কাজ করতে পারে এটা তাদের ধারণাতেও থাকে না। কাজের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা হস্তক্ষেপ করতে চান এবং ফলে কর্মচারী এবং কর্মকর্তা উভয়েই হন ক্ষতিগ্রস্ত। সময় এবং শক্তির অপচয় হবার পাশাপাশি নিজের মতো করে কাজ করতে না পারায় কর্মচারীর আত্মবিশ্বাস ক্ষুণ্ণ হয় এবং সর্বোপরি কাজের মান খারাপ হয়ে যায়।
কর্মক্ষেত্রে নিজের কর্তৃত্ব ক্ষুণ্ণ হবে- এটা ভেবে অনেক কর্মকর্তাই স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেন না অধিনস্তদের। এই ভয় থেকে তারা সর্বক্ষণ কর্মচারীদের কাজের ওপর নজরদারি করতে থাকেন। পরবর্তীতে দেখা যায় এটা তাদের উপকার করার পরিবর্তে ক্ষতিই করছে। কর্মচারীরা স্বাবলম্বী হতে পারছে না। তারা মনে করছে কর্তৃপক্ষ তাদের ওপরে যথেষ্ট বিশ্বাস রাখে না। এমন দম-বন্ধ করা কর্মক্ষেত্রে কেউই কাজ করতে চাইবে না। এ ধরণের পরিস্থিতি এড়াতে কর্মকর্তাদের উচিত অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করার অভ্যাস বাদ দেওয়া। দেখে নিন পাঁচটি উপায় যাতে আপনি নিজের এমন স্বৈরাচারী মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।
ক্ষুদ্র কাজ থেকে শুরু করুন
কর্মচারীকে প্রথমেই এমন কাজ দেবেন না যেটা করতে গিয়ে তার ঘাম ছুটে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত আপনাকেই কাজে হাত দিতে হবে। তাকে ছোট কোনও কাজ দিয়ে শুরু করুন যাতে তিনি নিজেই কাজটা করে ফেলতে পারেন। একটু একটু করে বড় কাজের দায়িত্ব দিন তাকে। একটা সময়ে দেখবেন, যত ভারী কাজই হোক, তিনি নিজেই করে ফেলছে এবং আপনার তা নিয়ন্ত্রণ করার কোনই দরকার পড়ছে না।
কাজের যোগ্য পাত্র খুঁজে বের করুন
একটা কাজ দেওয়ার সময় যাকে তাকে দেবেন না। ভুল মানুষের হাতে কাজ চলে গেলে সে স্বাভাবিকভাবেই হিমশিম খাবে এবং আপনার হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজটা শেষ হবে না। এই অবস্থা এড়াতে যোগ্য মানুষকে কাজটি দিন যাতে কাজটা নিয়ে আপনার চিন্তা করতে না হয়। আপনার উপকার তো হবেই, সেই সাথে কর্মচারীটিও নিজের ক্ষমতার ওপরে বিশ্বাস করতে শুরু করবে।
অসম্ভব আশা রাখবেন না
অনেকে আশা করেন, কর্মচারী এক দিনেই বিশাল সব প্রজেক্ট শেষ করে ফেলবে, বা প্রথম চেষ্টাতেই অনেক ভালো ফলাফল দেবে। এমনটা আশা করা যে ভুল এটা সবাই বোঝে। এর ফলে কর্মচারী এবং কর্মকর্তা উভয়ের ওপরেই অদরকারী চাপ পড়ে। এমন আশা না করাই ভালো। কর্মচারীর ক্ষমতা অনুযায়ী আশা রাখুন তার ওপরে।
কর্মচারীর সাথে স্বচ্ছতা বজায় রাখুন
কর্মচারী কাজ করছে কিভাবে এবং তার কাজে কোনও সহায়তা দরকার কিনা- এসব ব্যাপারে খেয়াল রাখুন এবং তার সাথে আলোচনা করে নিন। অযথাই তাকে বকাঝকা করবেন না এবং সাহায্য করার পরিবর্তে ক্ষতি করবেন না।
কর্মচারীর কাজকে স্বীকৃতি দিন এবং পুরস্কৃত করুন
কাজ শিখতে গেলে ভুল হবেই। এ ব্যাপারটা কর্মচারীকে জানতে দিন। যদি সামান্য ভুলের জন্য তাকে অতিরিক্ত বকাঝকা করা হয় তাহলে তার আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। কাজে ভুল হলেও তাকে সাহস দিন। কাজ ভালো হলে তার স্বীকৃতি দিন এবং তাকে পুরস্কৃত করুন। কর্মচারী কাজে উৎসাহ পাবে এবং দিন শেষে কাজের মান অনেক ভালো হয়ে যাবে।
- See more at:
http://www.priyo.com/2013/11/05/39222.html#sthash.r2F21tlD.dpuf