« on: December 20, 2015, 03:51:36 PM »
জাদুকর মাশরাফির সোনারঙা বছর !!!

মাশরাফির সাফল্যযাত্রার শুরু। গত বছর অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জেতালেন ৫-০তে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের ট্রফি হাতে টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকও
২০১৪ আর ২০১৫-এর মধ্যে কত পার্থক্য? বলতে পারেন, মাত্র এক বছর। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই দুটো বছর একই মুদ্রার দুই পিঠ যেন। পাশাপাশি, কিন্তু একেবারে ভিন্ন দুই ছবি।
২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ ম্যাচ খেলে ২২টিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ! একটি টেস্ট ড্র, চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দুটো ওয়ানডে জয়, সেটিও আফগানিস্তান ও নেপালের মতো দলের বিপক্ষে। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একটি সিদ্ধান্ত নিল। টেস্টের দায়িত্ব মুশফিকুর রহিমের কাছে রেখে রঙিন পোশাকের দায়িত্ব তুলে দিল মাশরাফি বিন মুর্তজার কাঁধে। যাঁর নিজেরই অধিনায়কের অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। দুই দফায় সেই চেনা শত্রু চোট জাতীয় দলের পাশাপাশি ছিটকে দিয়েছিল অধিনায়কের দায়িত্ব থেকেও।
এবার মুদ্রার ওপিঠ দেখলেন মাশরাফি। সুখের, জয়ের, গর্বের, আনন্দের। গত বছর অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একটিও ওয়ানডে সিরিজে হারেননি। জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার পর আবারও জিম্বাবুয়ে-ঘরের মাটিতে টানা পাঁচ সিরিজ জয়। মাঝখানে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। মাশরাফির ২০১৫ শেষ হলো সাদামাটা একটি দলকে বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন করে।
বিপিএলে এর আগেও দুবার ট্রফি হাতে তুলেছিলেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের অধিনায়ক হিসেবে। পরশু ট্রফির হ্যাটট্রিক হয়ে গেল। কী জাদু জানেন মাশরাফি? কী সেই রসায়ন? সরল মাশরাফির সরল উত্তর, ‘রসায়নটা আমি জানি না। সৌভাগ্যবান ছিলাম। তিনবারই বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগপর্যন্ত বলছি, তিনটা ফাইনাল খেলেছি। এখন বলতে পারছি তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। সত্যিই আমি খুব লাকি।

’বিশ্বকাপ, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে-সাফল্যের পর বিপিএলে কুমিল্লার ট্রফি হাতে বছরটা শেষ করলেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো
শুধু কি ভাগ্য? ভাগ্য তো সাহসীদেরই পাশে এসে দাঁড়ায়। সাহসী মাশরাফি একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সবগুলো বাজির দানেই জিতেছেন জ্যাকপট। এর কৃতিত্ব মাশরাফি যেন নিতেই চান না। পুরো কৃতিত্ব দিয়ে দিতে চান কোচ আর খেলোয়াড়দের। কুমিল্লার জয়ের প্রসঙ্গে বললেন, ‘কোচ সালাউদ্দিনকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। কোচ আড়ালে থাকেন। দূর থেকে কোচের কাজটা দেখা যায় না। যে দলটা পেয়েছিলাম, সেটিকে চ্যাম্পিয়ন বানানোয় কোচের অনেক অনেক অবদান আছে। শুরু থেকে অনেক কাজ করেছেন। কোন খেলোয়াড়কে কোন ভূমিকায় খেলাতে হবে, কী কাজ করতে সেটার পরিকল্পনা করেছেন। পুরো দলও তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।’
বিপিএল নিয়ে বলতে গিয়েও কুমিল্লার বিজয়ী অধিনায়ক নয়, জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফিরই দেখা মিলল, ‘স্থানীয় খেলোয়াড়েরা পারফর্ম করেছে। এটা খুবই স্বস্তিদায়ক। জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান-বোলার পারফর্ম করেছে নিয়মিত। নতুনরাও উঠে আসছে। এর পাশাপাশি দলের বাইরে থাকা অলক-শাহরিয়ার নাফীসের মতো অভিজ্ঞরাও ভালো খেলেছে। একাদশে থাকার জন্য সুস্থ প্রতিযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই রান করছে। শুধু আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি জন্য নয়। সাব্বির, রিয়াদ, নাফীসরা রান করেছে; ইমরুল শেষ চারটি ম্যাচে দারুণ খেলেছে। এটা ইতিবাচক দিক।’
তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কঠিনতম দিনগুলোর সাক্ষী বলেই হয়তো এও যোগ করছেন, ‘অধিনায়ক হওয়ার পরও এখনো আমার কঠিন সময়ও যায়নি। তাই সবাই অধিনায়কত্ব নিয়ে এত কথা বলছে। এটার পেছনে পুরো কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের। খেলোয়াড়েরা ভূমিকা পালন না করলে, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে না পারলে কোনো অধিনায়কের পক্ষেই ভালো দল গড়ে তোলা সম্ভব না। একটা পরিকল্পনাও লাগে। বাংলাদেশ দলে যে কাজটি করেন হাথুরু। কুমিল্লা দলে করেছেন সালাউদ্দিন।’
শুরু হতে না হতেই বিতর্ক। ‘হঠাৎ ছাড়পত্র পাওয়া’ দুই বিদেশিকে খেলানো নিয়ে সিলেট সুপারস্টার্সের মালিকের সঙ্গে বিবাদ তামিম ইকবালের। দ্বিতীয় বলে রবি বোপারা, তৃতীয় বলে নুরুল হাসান, পরের বলেই মুশফিক! হ্যাটট্রিক করলেন আল-আমিন। বিশ্বকাপ-বিতর্ক, এরপর ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কা মুছে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এবার জ্বলে উঠলেন আরও।
আবার বিতর্ক! এবার সাকিব আল হাসান। আউটের আবেদনে আম্পায়ার তানভীর আহমেদ সাড়া না-দেওয়ায় এই অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ করে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ।
গেইল কবে আসবেন, মাঠে ঝড় তুলবেন—অত অপেক্ষা করতে রাজি ছিলেন না এভিন লুইস। চট্টগ্রামের উপকূলে দেখালেন ক্যারিবীয় ‘ঝড়ে’র প্রদর্শনী। এবারের বিপিএলের একমাত্র সেঞ্চুরি। বরিশালের সঙ্গে সিলেটের ম্যাচ। দুই ভায়রা ভাই মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর টস করতে নামার কথা। কিন্তু এ কী! মাহমুদউল্লাহর টস-সঙ্গী শহীদ আফ্রিদি! হঠাৎই ‘চাপ’ কমাতে মুশফিককে সরিয়ে আফ্রিদিকে সিলেটের অধিনায়ক করাটা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঝড়ই তুলছিলেন গেইল। ১২ বলেই চারটি চার আর দুটি ছক্কা। কিন্তু মুস্তাফিজ আছেন না! মায়াবী অফ-কাটারটা গেইলকে বিভ্রান্ত করে ঢুকে গেল স্টাম্পে। গেইলও চিনলেন ‘মায়াবী’ মুস্তাফিজকে। 
আবু হায়দার রনির দুর্দান্ত ইন সুইং ইয়র্কার। ব্যল পড়ে গেল। ভূপাতিত ব্যাটসম্যান সিমন্স—এবারের বিপিএলের অসহ্য সুন্দর দৃশ্যগুলোর একটি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জার্সিতেও নিয়মিত এমন দৃশ্যের জন্ম দেবেন রনি - এমন আশা জাগিয়ে গেল বিপিএল। ছবি: শামসুল হক
ম্যাচের আগে হঠাৎ ঘোষণা - গেইল খেলছেন না। তবে সাব্বির যেদিন এমন ‘অ্যাটাক মুড অন’ করে রাখেন, সেদিন গেইলের দরকারই বা কী! ৪৯ বলে ৭৯ রানের ঝড়ে বরিশালকে নিয়ে গেলেন ফাইনালে।
ভুলে যাওয়া অলক কাপালি আবারও আলোকিত মঞ্চে। ধৈর্য্য, টেম্পারামেন্ট, ক্লাস, সঙ্গে স্ট্রোকের দ্যুতি— পুরোনো অলকের ঝলকে শিরোপা কুমিল্লার ঘরে।
মাশরাফি নামের এই পরশপাথরের ছোঁয়ায়ই তো কাগজে-কলমে সবচেয়ে দুর্বল দল নিয়েও শিরোপা জিতে গেল কুমিল্লা।
এ বছর আর কোনো খেলা নেই। টানা ক্রিকেট সূচির পর লম্বা বিরতি পাচ্ছেন মাশরাফি। বর্তমান সূচি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে এশিয়া কাপে আবার নেতৃত্ব দেবেন দলকে। কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সোনারঙা ২০১৫ সালটিকে? মাশরাফি এখানে নিজের কথা বললেন না, ‘অনেক ভালো একটা বছর গেছে। তবে শুধু আমার না, পুরো বাংলাদেশ দলের। যতটুকু কঠোর পরিশ্রম করেছি, সে অনুযায়ী ফল পেয়েছি। সামনের দিনগুলোতে এর থেকে খুব ভালো চাই না। এভাবে চললেই আমি খুশি।’
কেবল মাশরাফির অধিনায়ত্বের জন্য কুমিল্লার সমর্থক বনে গিয়েছিল বাংলাদেশের বড় একটা অংশ। যে কুমিল্লা প্রথমে তাঁকে পেয়ে কিংবা সাকিবকে না পেয়ে হতাশ হয়েছিল; সেই তারাই পরে শুধু অধিনায়কের ভূমিকায় মাশরাফিকে খেলিয়েছে। ব্যাটিং-বোলিং কোনোটাই মাশরাফি করেননি। সেই অধিনায়ক মাশরাফিকে তিনি নিজে কত নম্বর দেবেন? মাশরাফির উত্তর, ‘শূন্য!’
« Last Edit: December 20, 2015, 03:53:14 PM by habib »

Logged
Md. Habibur Rahman
Officer, Finance & Accounts
Daffodil International University (DIU)
Corporate Office, Daffodil Family
Phone: +88 02 9138234-5 (Ext: 140)
Cell: 01847-140060, 01812-588460