টাইমস অব ইন্ডিয়ার বর্ষসেরাতে রুবেল-মুস্তাফিজ ও সাব্বির
অ্যাডিলেডে রুবেলের স্পেল ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে থাকবে বহুদিন। ছবি: প্রথম আলো
২০১৫ সালটা মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে সোনার অক্ষরে লিখে রাখার মতোই। বাঁ হাতি পেসারের কত অর্জন এই একটি বছরে! চোটের কারণে বেশির ভাগ সময় দলের বাইরে থাকলেও রুবেল হোসেনের পাওয়াও নেহাত কম নয়। এ বছর ওয়ানডেতে সেরা দশ বোলিং স্পেলের একটি তালিকা করেছে ভারতের সবচেয়ে প্রচারিত পত্রিকা ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’। সে তালিকায় আছেন বাংলাদেশের দুই পেসার রুবেল ও মুস্তাফিজ।
রুবেলকে নেওয়া হয়েছে বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের কারণে। বাংলাদেশের জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল রুবেলের দুটো স্পেল। রুবেল প্রথম আঘাত হেনেছিলেন নিজের দ্বিতীয় স্পেলে। ২৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফিরিয়েছিলেন সেট ব্যাটসম্যান ইয়ান বেলকে (৬৩)। চতুর্থ বলে শূন্য রানে আউট করলেন অধিনায়ক এউইন মরগ্যানকেও। ২ উইকেটে ১২১ থেকে ইংল্যান্ডের হয়ে গেল ৪ উইকেটে ১২১!
চমক বাকি ছিল আরও। ৪৯ ওভারে স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্তে রুবেল হয়ে উঠলেন দুরন্ত ‘ইগল’। ভয়ংকর ইয়র্কারে নাস্তানাবুদ করলেন শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে। স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসনকে ফিরিয়ে নিশ্চিত করলেন দলের বিজয়। অবিশ্বাস্য এক জয়ে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নিশ্চিত হলো কোয়ার্টার ফাইনাল।
ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিংয়ে মুস্তাফিজ আছেন ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র তালিকায়। ছবি: প্রথম আলো
মুস্তাফিজকে নিয়ে নতুন কী বলার আছে! ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকেই নিলেন ৫০ রানে ৫ উইকেট। তবে সিরিজে দ্বিতীয় ওয়ানডে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই ম্যাচ বাংলাদেশের কাছে ছিল সিরিজ জেতার আর ভারতের কাছে তা বাঁচানোর।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামল ভারত। মুস্তাফিজের করা প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ফিরলেন রোহিত শর্মা। প্রথম স্পেলে আর সাফল্য নেই মুস্তাফিজের। বাঁহাতি পেসার ভয়ংকর হয়ে উঠলেন দ্বিতীয় স্পেলে। ৩৬ থেকে ৪৪ ওভার—এ সময়ে মুস্তাফিজের ৫ ওভারেই কবর রচিত হলো ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের। মুস্তাফিজ একে একে তুলে নিলেন সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনি, অক্ষর প্যাটেল, রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজাকে। তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ল ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মিডল ও লোয়ার অর্ডার। ভারত অলআউট ২০০ রান। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ২০১ রানের লক্ষ্য অনায়াসেই টপকে গেল বাংলাদেশ। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই নিশ্চিত হলো সিরিজ।
ওয়ানডে ক্রিকেট এমনই, একটি বা দুটি স্পেলই বদলে দিতে পারে ম্যাচের চেহারা। ম্যাচ বদলে দেওয়া স্পেলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার তালিকায় আছেন টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, মিচেল স্টার্ক, ইমরান তাহির, কাগিসো রাবাদা, মিচেল ম্যাকক্লেনাহান, মরনে মরকেল ও মিচেল মার্শপাকিস্তানের বিপক্ষে সাব্বিরের এই ইনিংস বর্ষসেরা পাঁচ ইনিংসের একটি। ছবি: প্রথম আলো।
পাওয়ার হিটে বেশ পারঙ্গম। টাইমিং ঠিকঠাক হলে বল পাঠিয়ে দেন সোজা গ্যালারিতে! তবে ব্যাটিংয়ের যে অর্ডার, সময়-বল থাকে না পর্যাপ্ত। কিন্তু তাতেও নিজেকে চেনাতে সমস্যা হয়নি সাব্বির রহমানের। পরিস্থিতির দাবি মেনে খেলতে পারেন কার্যকরী ইনিংস। এরই মধ্যে গায়ে সেঁটে গেছে ‘টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ’ তকমা। এবার ভারতের সবচেয়ে প্রচারিত পত্রিকা ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’-এর সেরা পাঁচ টি-টোয়েন্টি ইনিংসের তালিকায়ও উঠে এসেছে সাব্বিরের নাম।
এ বছর টি-টোয়েন্টিতে সেরা পাঁচ ইনিংসের তালিকা করেছে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’। সে তালিকায় ক্রিস গেইল, মরনে ফন উইক, গুলাবদিন নাইব ও জর্জ ওয়ার্কারের সঙ্গে আছেন বাংলাদেশের সাব্বির।
স্বপ্নের মতো এক বিশ্বকাপ কাটিয়ে আসা বাংলাদেশ ছন্দ ধরে রেখেছিল এপ্রিলে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও। ধবলধোলাই করেছিল পাকিস্তানকে। হারের পর ‘পাকিস্তান ওয়ানডে দল পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে’ এমন অজুহাত দিয়েছিলেন পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের কাছে পাত্তা পায়নি পাকিস্তান।
সে জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল সাব্বিরের। ১৪২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ষষ্ঠ ওভারেই ৩৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপরই সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাব্বির। দুজনে মিলে মাত্র ১০.৪ ওভারেই তুলে ফেলেন ১০৫ রান। অভিজ্ঞ সাকিবকে পার্শ্ব চরিত্র বানিয়ে পুরো আলোটা নিজের দিকে নিয়ে নিয়েছেন সাব্বির। মাত্র ৩২ বলে ৭ টি চার ও ১ টি ছক্কায় ৫১ রান তুলে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছিলেন।
ক্যারিয়ারের একমাত্র টি-টোয়েন্টি ফিফটিতে সেদিন শুধু ম্যাচ সেরা হননি, বছরের সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংসেও নাম উঠে গেছে সাব্বিরের।