
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী এলাকায় পদ্মা নদীর মাঝে লোহার বিশাল খণ্ড ভেসে উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে ধ্বংস হওয়া দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজের স্প্যানের অংশ এটি।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের তিন কিলোমিটার ভাটিতে জেগে ওঠা স্প্যানটি দেখার জন্য প্রতিদিন উৎসুক মানুষ ভিড় করছে।
পাকশী এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ২০ থেকে ২৫ দিন আগে পদ্মার লক্ষ্মীকুণ্ডা প্রান্তে নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের জাল পানির নিচে আটকে যায়। কয়েকজন জেলে পানিতে ডুব দিয়ে জাল ছাড়াতে গিয়ে প্রকাণ্ড একটি বস্তুর সন্ধান পান। তাঁরা জাল ছাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। নদীতে পানি শুকিয়ে এলে সেখানে বড় আকৃতির একটি লৌহখণ্ড দেখতে পাওয়া যায়। গত চার-পাঁচ দিন থেকে নদীতে লোহার আরও দুটি অংশ দেখতে পান জেলেরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের প্রবীণ ব্যক্তিরা নৌকায় করে তা দেখতে যান। তাঁরা ধারণা করেন, এটি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের স্প্যানের অংশ।
পাকশী এলাকায় পদ্মার পাড়ের চা দোকানি আলম প্রামাণিক বলেন, রেলওয়ের কয়েকজন লোক এসে নদীর ওই স্থানটি দেখে তাঁদের জানিয়ে গেছেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ভেঙে পড়া স্প্যানের অংশ এগুলো।
নায়েব সরদার নামের এক মাঝি বলেন, পদ্মায় পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এখন আশপাশে চর জেগে উঠেছে। মানুষ হেঁটে চরে এসে নৌকা ভাড়া করে ওই স্প্যান দেখছে। শুক্রবারে মানুষের ভিড় বেশি হয়। ঘাট থেকে নৌকায় ওই স্থানে পৌঁছাতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগে।
এসব খণ্ডাংশ হার্ডিঞ্জ ব্রিজের বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিজটির একটি স্প্যান ভেঙে পড়েগতকাল বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা নদীর মাঝে জেগে উঠেছে ছোট-বড় তিনটি লৌহখণ্ড। বৃষ্টি পড়তে থাকায় মানুষের ভিড় নেই। তবে আশপাশে দু-একজন জেলেকে দেখা যায়।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সেতু প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় বোমা হামলায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১২ নম্বর স্প্যানটি নদীতে ভেঙে পড়ে। সেই স্প্যানের অংশ দীর্ঘদিন পর নদীতে দেখা যাচ্ছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজে মোট ১৫টি স্প্যান রয়েছে। মজবুত লোহার প্রতিটি স্প্যানের ওজন ১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। এগুলোর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৩৬০ ফুট। এত বিশাল আকৃতির স্প্যান নদী থেকে ওঠানোর মতো যন্ত্রপাতি বর্তমানে রেলওয়ের নেই। ভেঙে পড়ার পর থেকে স্রোতে স্প্যানটি সেতু থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ভেসে গেছে।
বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গত রোববার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের স্প্যানের অংশটি সরেজমিনে দেখেছেন। তিনি লোকমুখে শুনেছেন, ভেঙে পড়ার পর স্প্যানটি নদীতে ভেসে যায়। সে সময় নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় সেটি তোলা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।Source:http://www.prothom-alo.com