বিভিন্ন কারণে দাঁত ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। দাঁত ভালো রাখার উপায়গুলো জেনে নিন-
সঠিক টুথব্রাশ বাছাই করুন : যে টুথব্রাশটির উপরের শলাকাগুলো অতিরিক্ত শক্ত নয় আবার নরমও নয় অথচ ব্রাশের হেন্ডেল হাতের আঙ্গুল দিয়ে ধরার জন্য যথেষ্ট সুবিধাজনক এবং মুখের সব দাঁতের অবস্থান অর্থাৎ দাঁতের উপর-নিচ এবং ভিতরে-বাইরে সহজে আনা-নেয়া করা যায় সেরকম টুথব্রাশ কার্যকর। খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত শক্ত ব্রাশ আপনার নরম মাড়িকে আঘাত না করতে পারে। তাছাড়া আজকাল ইলেকট্রনিক ব্রাশও ব্যবহার করা নিরাপদ। ইলেকট্রনিক ব্রাশের সাহায্যে অতি সহজে দাঁতের সব এলাকা বা স্থান থেকে খাদ্যকণা দূর করা যায়। তবে যাদের হাতে, কনুই বা ঘাড়ে আর্থ্রাইটিস আছে তাদের জন্য ইলেকট্রনিক ব্রাশ নিরাপদ অথবা যাদের হাত দিয়ে ভালোভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে সমস্যা হয় তাদের জন্যও ইলেকট্রনিক ব্রাশ নির্ভরযোগ্য একটি মাধ্যম। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা ইলেকট্রনিক ব্রাশ ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করছেন।
কতটুকু সময় : আপনি কি সময় মতো দাঁত ব্রাশ করেন, বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতিদিন দুই বেলা ব্রাশ করা প্রয়োজন, তবে তিনবার করতে পারলে অতি উত্তম। দাঁত ব্রাশের জন্য দুই মিনিটই যথেষ্ট সময়। মুখের ভিতরে বিভিন্ন স্থানকে ৪টি স্তরে ভাগ করা যায় যেমন- ডান দিকের উপরে-নিচে এবং বাম দিকের উপরে-নিচে এবং প্রতি স্তরের জন্য ৩০ সেকেন্ড সময় নির্ধারণ করা যায়। অনেকে টিভি দেখতে দেখতে বা গল্প করতে করতে বা অন্য কিছু কাজে সময় ব্যয় করতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁত ব্রাশ করেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই এনামেল ক্ষয় হয়ে এরোসন বা এট্রিশন হতে পারে এবং দাঁত অতি সংবেদনশীল হয়ে ঠাণ্ডা পানি বা গরম চা’তে দাঁত শিরশির করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ এক ধরনের টুথপেস্ট এবং ডেন্টাল ফিলিং প্রয়োজন হয়।
অতিরিক্ত ঘষাঘষি বা শক্তভাবে ব্রাশ না করা : অনেকে ভেবে থাকেন যে জোরে জোরে এবং শক্তভাবে ব্রাশ দিয়ে দাঁত ঘষলে তাড়াতাড়ি ময়লা দূর হয়, দাঁত ধবধবে সাদা হয়। আসলে কিন্তু তা নয়, এই অতিরিক্ত ঘষাঘষির ফলে দাঁতের ক্ষয় হয় এবং এনামেল উঠে যায়, অনেক ক্ষেত্রে মাড়িও ক্ষয় হয়। তাই খুব ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দাঁত ব্রাশটিকে সবদিকে নিতে হবে। যেন দাঁতের কোনো অংশ বাদ না পড়ে।
সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাঁত ব্রাশটিকে প্রথমে মাড়ির থেকে ৪৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে বা কোনাকুনি বসিয়ে সব জায়গায় ব্রাশ করতে হবে। দাঁত ব্রাশ দাঁতের বাইরের অংশ এবং ভিতর দিককার অংশ এবং সেই সঙ্গে জিহ্বার উপরিভাগও ব্রাশ করতে হবে, সত্যি কথা হল, দাঁতের কোনো স্থানেই এমনকি জিহ্বাতেও যেন খাদ্যকণা লেগে না থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
মাঝে মাঝে দাঁত ব্রাশের শুরুটা পরিবর্তন করুন : আপনি কি সব সময় একই জায়গা থেকে দাঁত ব্রাশ শুরু করেন। আমরা কিন্তু অনেকেই তা করি। সেটা না করে আমরা যদি প্রতিদিন উপরের পাটি থেকে শুরু না করে ভিন্ন সময় ভিন্ন স্থান থেকে ব্রাশ করি তবে অনেক উপকার পাওয়া যায়; যেমন- আজ আমি উপরের পাটি থেকে শুরু না করে ভিতরের পাটি থেকে ব্রাশ শুরু করতে পারি এবং সামনের পাটির দাঁত ব্রাশ দিয়ে শেষ করতে পারি তাতে অভ্যাস পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক বেশি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে।
কোন ধরনের টুথপেস্ট ব্যবহার করবেন : অনেক সময় আমরা টিভি বা রেডিও বিজ্ঞাপন শুনে বা দেখে টুথপেস্ট ব্যবহার করি এবং বলা হয় এগুলো দাঁতকে অনেক ঝকঝকে সাদা করে বা অনেক শিরশির দাঁতকে ভালো করে ইত্যাদি নানা বিজ্ঞাপন। কিন্তু, আসলে কি সব সত্যই তাই, আপনার ডেন্টিস্টের কাছে জেনে নিন কোন টুথপেস্ট আপনার জন্য ভালো। কারণ দাঁত শিরশির করার জন্য ব্যবহৃত টুথপেস্ট দীর্ঘদিন ব্যবহারে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে যে কোনো ফ্লুরাইড মিশ্রিত টুথপেস্ট নিয়মিত ব্যবহার করা, তবে কয়লা, পাউডার ইত্যাদি উপাদান দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অতিরিক্ত সফট ড্রিংকস (Soft Drinks) দাঁতের জন্য ক্ষতিকর : অনেক ধরনের এনার্জি ড্রিংকস, ডায়েট সোডা বা চকলেট টফি এমনকি স্বাস্থ্যকর পানীয় যেমন- আপেল, অরেঞ্জ জুস এবং কফি আপনার দাঁতের এনামেলকে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই এই জাতীয় খাবার খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করা জরুরি। কারণ টক জাতীয় খাবার দাঁতের এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ব্রাশ পরিষ্কার রাখুন : আপনি কি দাঁত ব্রাশের পরে ব্রাশটিকে ভালোভাবে ধুয়ে-মুছে রাখেন। ব্রাশটিকে অবশ্যই পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে রাখতে হবে। কারণ আপনার মুখের ভিতরের খাদ্যকণা, ময়লা কিন্তু ব্রাশের সঙ্গেই লেগে থাকে এবং পরের দিন কিন্তু সেই ময়লা বা পচা খাদ্যকণা দিয়েই আপনি দাঁত ব্রাশ করছেন। সুতরাং আপনার টুথব্রাশটিকেও ভালোভাবে পরিষ্কার করার পরে একটি জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে রাখবেন। তাতে আপনি মাড়িকে ও দাঁতকে সুস্থ রাখতে সক্ষম হবেন।
টুথ ব্রাশকে কখনওই বাথরুমে রাখবেন না : আমরা অনেক সময় টুথব্রাশটিকে বাথরুমে খোলাভাবেই রেখে দেই, যেটা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ব্রাশটিকে সব সময় একটি কৌটোর মধ্যে রাখবেন যদি সেটাকে খোলা রাখেন তবে বাথরুমের সব ধরনের জীবাণু আপনার টুথব্রাশে আশ্রয় নিতে পারে যা মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। আবার অন্যদিকে একজনের ব্রাশ আরেকজনের ব্রাশের সঙ্গে একটি কৌটায় কখনও রাখবেন না। তাতেও জীবাণু ছড়াতে পারে। ব্রাশ সব সময় শুকনো জায়গায় রাখবেন। কারণ ভিজে বা পানিযুক্ত ব্রাশে জীবাণু তাড়াতাড়ি আশ্রয় নেয়।
কতদিন ব্রাশ ব্যবহার করবেন : আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, একটি ব্রাশ তিন থেকে চার মাস ব্যবহার করাই নিরাপদ। আপনি ব্রাশের শলাকাগুলোর দিকে খেয়াল করুন যখনই শলাকাগুলো নুইয়ে পড়বে বা বাঁকা হয়ে যাবে তখনই ব্রাশটিকে বদলাতে হবে। কারণ বাঁকা শলাকার টুথব্রাশ সঠিকভাবে খাদ্যকণা পরিষ্কার করতে পারে না।
- See more at:
http://www.jugantor.com/stay-well/2016/01/30