একশো বছর পর প্রমাণ হলো, তিনি হান্ড্রেড পার্সেন্ট পারফেক্ট!জটিল অঙ্ক কষে তিনি যা যা বলেছিলেন, তার প্রায় সবটুকুই ঠিক। এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড মোটামুটি তার বলে দেওয়া গাণিতিক নিয়মেই চলে। চলছে।একশো বছর ধরে বিস্তর ঘাম ঝরানো খোঁজাখুঁজির পরে সরাসরি হদিশ পাওয়া গেল ‘গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ’ বা, মহাকর্ষীয় তরঙ্গের।কতগুলো নোবেল পুরস্কার এক সঙ্গে এই ভদ্রলোককে দেওয়া যায়, বলুন তো? একটা পুরস্কার দিলে, হয়তো নোবেল পুরস্কারটাই খাটো হয়ে যায়!যদিও একবার লজ্জায় তিনি জিভ কেটেছিলেন!
কিন্তু পরে বোঝা গিয়েছিল, কোনো ভুলই তিনি করেননি ‘গ্র্যাভিটেশনাল কনস্ট্যান্ট’ বা ‘মহাকর্ষীয় ধ্রুবকে’র মাপজোকে।তার পর শুধুই দশকের পর দশক ধরে তার জয়ের খবর আসছিল একের পর এক। ১৯১৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর তার সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের একের পর এক পূর্বাভাস যখন মিলতে শুরু করেছিল। একেক বছরে একেকটা। বা একেক দশকে।
তার সাড়া জাগানো তত্ত্বের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাসই প্রমাণিত হয়েছিল চার বছরের মধ্যে। সে ক্ষেত্রে ১৯১৯ সালটি ছিল একটি মাইলস্টোনই।
কিন্তু, তার চমকে দেওয়া তত্ত্বের একটি পূর্বাভাসের সরাসরি প্রমাণ মিলছিল না কিছুতেই। সেটি হল, ‘গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ’ বা, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। ১৪০০ কোটি বছর আগে মহা বিস্ফোরণ বা ‘বিগ ব্যাং’-এর পর যে উত্তাল ঢেউয়ের জন্ম হয়েছিল, সেটাই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। পুকুরে ঢিল ফেললে যেমন একটা তরঙ্গ ছড়াতে ছড়াতে তার পারে পৌঁছে যায়, তেমনই এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে এখনও ওই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে। আর চার পাশে অসম্ভব দ্রুত হারে ব্রহ্মাণ্ড এখনও প্রসারিত হয়ে চলছে বলে সেই তরঙ্গের পরিধিটা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
কিন্তু, কিছুতেই সরাসরি তার হদিশ পাচ্ছিলেন না মহাকাশবিজ্ঞানীরা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, তা হলে কি আইনস্টাইন আগাপাশতলা সঠিক ছিলেন তার সাড়া জাগানো তত্ত্বে? নাকি তার গাণিতিক পূর্বাভাসের কোথাও কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল? যদি থাকে, তা হলে তা কোথায়, তা খোঁজার চেষ্টা তো চলছিলই, ভাবনা শুরু হয়েছিল তার তত্ত্বের পরিবর্ধন-পরিমার্জনেরও।কিন্তু, তিনি আইনস্টাইন। তাকে ছাড়া আধুনিক বিজ্ঞান যে আক্ষরিক অর্থেই, ‘কানা ও খোঁড়া’, একশো বছর পর সেটাই প্রমাণিত হল বৃহস্পতিবারের সরকারি ঘোষণায়। একই সঙ্গে ভারতের পুণে, আমেরিকার ওয়াশিংটনে আর ইতালিতে ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্টই জানিয়ে দেওয়া হলো, ১৯১৫ সালে তার সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের যে গাণিতিক পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তিনি, তা পুরোদস্তুর সঠিক। সরাসরি হদিশ মিলেছে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের। আর তা মিলেছে দু’টি কৃষ্ণ গহ্বরের মধ্যে সংঘর্ষের সময়ে যে তরঙ্গের সৃষ্টি হচ্ছে, তার থেকেই।
--natunbarta.com