বাংলাদেশ ৫: পাকিস্তান ০!
অবিশ্বাস্য এই স্কোরলাইন তামিম ইকবালের মনে ছিল না। গত পরশু ওমানকে হারিয়ে সুপার টেন নিশ্চিত করার সংবাদ সম্মেলনে যা শোনার পর একটু অবাক হয়েই মনে মনে হিসাব করলেন। হিসাব মেলায় মুখে মৃদু হাসিও ফুটল।
গত মার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০। এরপর সিরিজের একমাত্র টি-টোয়েন্টিটিতেও জয়। সেখানে ৪-০ হয়ে ছিল। এশিয়া কাপেও পাকিস্তানকে হারানোর পর সর্বশেষ ৫টি ওভার-নির্দিষ্ট ম্যাচে দুই দলের দ্বৈরথে ওই স্কোরলাইন!
আগামীকাল ইডেন গার্ডেনে প্রতিপক্ষ সেই পাকিস্তান। খেলা শুরু হয়ে যাওয়ার পর নতুন দিন, নতুন ম্যাচ। তবে এর আগে এই ইতিহাস কিছুটা হলেও বাংলাদেশকে মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে বলে মনে করেন তামিম। ‘ওদের তো নিশ্চয়ই এটা মনে থাকবে’—কাল দুপুরে ধর্মশালা বিমানবন্দরে ভাড়া করা বিশেষ বিমানে ওঠার আগে বললেন এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান।
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা অবশ্য এটা মনেই রাখতে চান না। সংবাদ সম্মেলনেই বলে দিয়েছেন, ‘আগে কী হয়েছে না হয়েছে, এটা কোনো কাজে আসবে বলে আমি মনে করি না। নতুন খেলা নতুনভাবেই শুরু হয়।’
ধর্মশালা পর্ব শেষ করে বাংলাদেশ এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে। সেই মঞ্চে দাঁড়াতেই কাল ধর্মশালা থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল। তাসকিন আহমেদের পথটা অবশ্য এক দিনের জন্য দিল্লি থেকে আলাদা হয়ে গেছে। দিল্লি থেকেই পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিককে নিয়ে চেন্নাই উড়ে গেছেন। আজ বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়ে যোগ দেবেন দলের সঙ্গে। গত শনিবার পরীক্ষা দিয়ে আসা আরাফাত সানির চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার রেখা পরিষ্কার পড়া যাচ্ছে। তবে তাসকিন একেবারেই নির্ভার। মুখে সেই নিষ্পাপ হাসিটা ফুটিয়ে বললেন, ‘কাল নেটে যে বোলিংটা করতাম, নেটের বদলে সেটি ল্যাবরেটরিতে করে আসব। ওদের এটাও বলব, অনেক ধন্যবাদ। চেন্নাইটা ঘুরে যেতে পারলাম।’
পারফরম্যান্স ভালো হলে ক্রিকেটারদের চোখে-মুখে একটা আলো খেলা করে। কাল বিমানবন্দরে মাশরাফিদের মুখগুলো দেখতে দেখতে ২০১৫ বিশ্বকাপের সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া গেল। সুপার টেনে প্রথম ম্যাচই এখনো হয়নি, অথচ সেমিফাইনালটা মুম্বাইয়ে খেললে ভালো নাকি দিল্লিতে, এ নিয়েও পর্যন্ত কথাবার্তা শোনা গেল।
বাংলাদেশের যে টি-টোয়েন্টি ইতিহাস, তাতে সেমিফাইনালের এই স্বপ্ন সত্যি হলে সেটি ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার চেয়েও বড় বিস্ময় হবে। সেই বিস্ময় উপহার দেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে একটা কথাই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সবার মুখে। প্রথম ম্যাচটা জিততে হবে।
তা জেতায় সবচেয়ে বড় বাধা কি মোহাম্মদ আমির? আমিরকে একটু এগিয়ে রাখলেও পাকিস্তানের পুরো বোলিং আক্রমণ নিয়েই অনেক সমীহ তামিমের, ‘ওদের বোলিং খুব ভালো। আমাদের ব্যাটসম্যানদের ওপর তাই অনেক দায়িত্ব। আমরা যদি ভালো একটা স্কোর এনে দিতে পারি, তাহলে আমরা জয়ের আশা করতেই পারি।’
মাশরাফি একসময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্ধকার সময়টা দেখেছেন, এখন দেখছেন আলোর সময়টা। ক্রিকেটে আত্মবিশ্বাস আর অতি আত্মবিশ্বাসের মধ্যে যে সূক্ষ্ম সীমারেখা, এ নিয়ে এমন সচেতনতা হয়তো এ কারণেই এত সহজেই চলে এসেছে। মাহমুদউল্লাহ এই বিশ্বকাপের প্রথম পর্বকে ‘ওয়ার্মআপ ম্যাচ’ বলায় আপত্তি করেছিলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সাম্প্রতিক আধিপত্যকেও যেমন মনেই রাখতে চাইছেন না। আমিরই বাংলাদেশের মূল হুমকি কি না—এই প্রশ্ন করায় যেমন জবাব দিলেন, ‘কী বলেন! ওদের দলে বেশ কজন আছে যারা একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে।’ তাঁরা কারা? ‘আহমেদ শেহজাদ দলে এসেছে। উমর আকমল আছে। শহীদ আফ্রিদিকেই বা বাদ দেন কীভাবে? ওকে সব সময়ই হিসাবে রাখতে হবে। ও যেকোনো সময় ১৫ বলে ৩০ রান করে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে।’
পাকিস্তান ক্রিকেট গত কিছুদিন ঘোর দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খুশি হওয়ার বদলে এটিকে মাশরাফি দেখছেন উল্টো দুশ্চিন্তা হিসেবে, ‘পাকিস্তান টিম নিয়ে কিচ্ছু বলা যায় না। ওরা এমন সময়ই বরং আরও বেশি জ্বলে ওঠে। সেই ১৯৯২ বিশ্বকাপ থেকে তো দেখে আসছি।’
শুরুতে যে ৫-০ স্কোরলাইনের কথা বলা হলো, সেটির তাহলে কোনো মূল্য নেই? অবশ্যই আছে। তবে আগামীকাল বিকেলে ইডেনে প্রথম বলটি হওয়ার আগ পর্যন্তই!