"টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম"

Author Topic: "টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম"  (Read 1069 times)

Offline khyrul

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 138
  • Test
    • View Profile
টাঙ্গাইল জেলায় অনেক মিষ্টি তৈরি হয়। যেমন- চমচম, দানাদার, রসগোল্লা, আমৃত্তি, জিলাপী, সন্দেশ, বিভিন্ন প্রকার দই, খির, নই, টানা, খাজা, কদমা বাতাসা ইত্যাদি। কিন্তু টাঙ্গাইলের মিষ্টি শিল্পের কথা বলতে গেলে প্রথমেই পোড়াবাড়ির চমচমের কথা বলতে হয়। মিষ্টির রাজা বলে খ্যাত টাঙ্গাইল জেলার পোড়াবাড়ি নামক স্থানের এই চমচম স্বমহিমায় মহমান্বিত। স্বাদ আর স্বাতন্ত্রের ও এর জুড়ি মেলে না। যার নাম শুনলেই অতুলনীয় স্বাদ ও অর্পূব গন্ধের কথা মনে করে জিহবায় পানি এসে যায়। এই সুস্বাদু ও লোভনীয় চমচম মিষ্টি ও টাঙ্গাইলের একটি অন্যতম ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যপ্রায় ২শ বছরের প্রাচীন। অর্থাৎ ব্রিটিশ আমল থেকে অবিভক্ত ভারতবর্ষসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোড়াবাড়ির চমচম টাঙ্গাইলকে ব্যাপক পরিচিত করেছে। বাংলা, বিহার, ছাড়িয়ে ভারতবর্ষ তথা গোটা পৃথিবী জুড়ে এর সুনাম রয়েছে। মিষ্টির জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন আকারের চমচমের বৈশিষ্ট অতি চমৎকার এর বাইরেরটা দেখতে পোড়া ইটের মতো। লালচে রংয়ের এই সুস্বাদু চমচমের উপরিভাগে চিনির গুড়ো থাকে এর ভিতরের অংশ রসাল নরম। লালচে গোলাপী আভাযুক্ত ভেতরের নরম অংশের প্রতিটি কোষ থাকে কড়া মিষ্টিতে কনায় কনায় ভরা। এই সুস্বাদু চমচম তৈরির মূল উপাদান খাঁটি দুধ, চিনি, পানি, সামান্য ময়দা ও এলাচ দানা হলেও টাঙ্গাইলের চমচমের স্বাদ মূলত টাঙ্গাইলের পানি উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ টাঙ্গাইলের চমচম তৈরির মূল রহস্য এখানকার পানির মধ্যে নিহিত। দেশের অনেক জায়গা থেকেই টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির কারিগর নিয়ে অনেকেই টাঙ্গাইলের চমচম তৈরির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হতে পারেনি। এই ঐতিহাসিক চমচমের গুণেই মূলত টাঙ্গাইল এটি জেলা হিসেবে জন্ম লাভের পূর্বেই বিশ্ববাজারে পরিচিত লাভ করে।

গবেষকদের মতে দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি বৃটিশ আমলে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী পোড়াবাড়িতে আসেন। আসাম থেকে আগত এই দশরথ গৌড় যমুনার সুস্বাদু মৃদুপানি ও এখানকার খাঁটি গরুর দুধ দিয়ে প্রথম চমচম তেরি করেন। অতঃপর এখানে ব্যবসা শুরু করেন। তখন পোড়াবাড়ি টাঙ্গাইলের অন্যতম নদী বন্দর ছিলো। ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে মোঘল সুবেদার ইসলাম খাঁ হযরত শাহ জামানকে আতিয়া পরগনার শাসক নিযুক্ত করলে তিনিই পোড়াবাড়ি গ্রামকে নদী বন্দর হিসেবে গড়ে তোলেন। সেই সময়কালে ধলেশ্বরীর পশ্চিম তীরে গড়ে উঠে ছিলো জমজমাট ব্যবসা কেন্দ্র পোড়াবাড়ি বাজার। তখন পোড়া বাড়ি ঘাটে ভিড়তো বড় বড় সওদাগরী নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। ক্রমে ক্রমে পোড়াবাড়ি যখন জনসমাগমে প্রাণ চঞ্চলতায় ভরপুর- তখনই এখানে সুস্বাদু চমচম অর্থাৎ মিষ্টি শিল্প গড়ে ওঠে। রসগোল্লা আবিস্কারে মিষ্টান্ন শিল্পের আসে নবজাগরণ, সমসাময়িককালে পোড়াবাড়ির চমচম ও মুক্তা গাছার মন্ডার সুখ্যাতির শুরু। মন্ডার সাথে পাল্লা দিয়ে শুরু হয় চমচমের ঐতিহ্যের যুগ।

টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে মাত্র ৩ মাইল পশ্চিমে একদা ঘাট ছিল, এর নাম তালান ঘাট। সেখানেও ভিড়তো সউদাগরী নৌকা, জাহাজ ও লঞ্চ। সে সময় দেশী বিদেশী ব্যবসায়ীদের পদচারনায় পোড়াবাড়ি ছিল ব্যস্ত এক ব্যবসাকেন্দ্র। তখন চমচমের ব্যবসাও ছিল জমজমাট। প্রতি সপ্তাহে ১৫০ থেকে ২০০ মন চমচম তৈরি হতো পোড়াবাড়িতে। আবার কারো মতে সে সময় প্রতিদিন প্রায় এক দেড়শমন চমচম তৈরি হতো পোড়াবাড়িতে। উত্তরোত্তর সাফল্য ও চাহিদার কারণে তখন পোড়াবাড়িতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টি চমচম তৈরির কারখানা গড়ে উঠে যার সাথে প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের জীবন ধারা আবর্তিত হয়। সে সময় চমচম মিষ্টি তৈরির সাথে জড়িত ছিল দশরথ গৌড়ের পর পরই রাজারাম গৌড়, কুশাইদেব, নারায়ন, কাকন হালুই, শিবশংকর গৌড়, প্রকাশ চন্দ্র, মদন গৌড় ও মোহন লাল প্রমূখ। তার পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ চলমান সময়ে খোকা ঘোষ এবং গোপাল চন্দ্র দাসের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এরা চমচম মিষ্টির ব্যবসায় সাফল্য লাভ করেন।

বর্তমানে টাঙ্গাইল শহরের পাঁচ আনি বাজার এই মিষ্টি শিল্পের জন্য বিখ্যাত।


Offline Farjana Diba

  • Newbie
  • *
  • Posts: 21
  • Test
    • View Profile
Very Interesting facts. Thank you for sharing