পানির অপর নাম জীবন । বর্তমান সময়ে নগর ও নাগরিক একটু নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তারা পান করছে বোতল জাত পানি । যা মিনারেল ওটার নামে পরিচিত আর আমাদের পান করার মত পানি সংকট দিন দিন বাড়ছে ।
পানি সংকটকে পুঁজি করে বোতল ও জারে করে বিশুদ্ধ পানির নামে ভেজাল ও নিম্নমানের পানি বিক্রি হচ্ছে অবাধে। এতে সাধারন মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। এসব ভেজাল পানি পান করে অনেকেই স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ছেন। অন্যদিকে লাভবান হচ্ছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে প্রতিদিন ভেজাল পানি সরবরাহ করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পানির মূল উৎস নষ্ট হওয়ায় পানি সংকট দিন দিন ঘণীভূত হচ্ছে। জার ও বোতলজাত পানিতে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সরবরাহকৃত এসব পানিতে আর্সেনিক থাকারও আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
বিএসটিআই এর তথ্য মতে, রাজধানীতে প্রতিদিন নানা ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানি বিক্রি হয় প্রায় পাঁচ কোটি লিটার। জারজাত পানি ও অন্যান্য মাধ্যমে পূরণ হয় আরো প্রায় ১৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা। নগরীর কয়েক লাখ মানুষই এ পানির ক্রেতা। সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র সদরঘাট টার্মিনাল সেখানে রাতের আঁধারে ওয়াসার লাইনের পানি চুরি করে বোতলজাত করে মিনারেল ওয়াটার হিসাবে নানা কোম্পানির মোড়কে বাজারজাত করা হচ্ছে। এসব দূষিত পানি টাকা দিয়ে কিনে পান করছেন লঞ্চযাত্রী ও সাধারণ মানুষ। এছাড়া রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর, লালবাগ, নবাবগঞ্জ, সুত্রাপুর ও পাশের কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের একাধিক নকল মিনারেল ওয়াটার কারখানা রয়েছে । যত্রতত্র কারখানা বসিয়ে পুকুর-ডোবা এবং ওয়াসার পানি বিশুদ্ধকরণ ছাড়া বোতলজাত করেই ‘বিশুদ্ধ মিনারেল পানি’ বলে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সূত্র জানায়, বাজারে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হওয়া ৭টি কোম্পানির বোতলজাত পানি পরীক্ষা করেও দেখা গেছে সেসবের কোনোটাই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব বোতল পানি তৈরির সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত নমুনা অনুসরণ করা হয়নি। প্রয়োজনীয় লেড, ক্যাডমিয়াম ও জিঙ্ক উপাদানের অস্তিত্ব মেলেনি। এ পানিতে আয়রন, পিএইচ, ক্লোরিন, ক্যালসিয়াম-ম্যাগনেসিয়ামও আছে নামকাওয়াস্তে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের পরীক্ষাগারে বোতলজাত পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ‘অতি নিম্নমানের পানি’ হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে।
প্লাস্টিক জার (বড় আকারের বোতল) ভরা পানি বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে পৌঁছানোর মাধ্যমেও চলছে দূষিত পানির রমরমা ব্যবসা যার ফলে দূষিত নকল পানি পান করে বাড়ছে রোগ-ব্যাধি। এসব দূষিত পানি পান করে রাজধানীতে অনেকেই টাইফয়েড, ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিসসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকি শিশুদের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। গ্রীষ্মকালে নগরীতে পানির চাহিদা তুলনামূলক বাড়ে। এই সংকটকে পুঁজি করে একাধিক পানি উৎপাদনকারী কোম্পানি গজিয়ে উঠেছে। এদের অনেকেই ওয়াসার পানি চুরি করে বোতল ও জারে ভর্তি করে তা মিনারেল ওয়াটার নামে বাজারজাত করছে। আরো ভয়াবহ যে তথ্য সেটি হলো অপনার ব্যবহৃত পানির বোতলটি যখন ফেলে দিচ্ছেন এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী সে বোতল সংগ্রহ করে ঐ বোতলে পুনরায় এসব অস্বাস্থকর পানি তুলে বাজার জাত করছে।
তাই আসুন এই প্রতারনা থেকে নিজে বাঁচতে ও অন্যকে বাঁচাতে সচেতন হই। সেই সাথে পানি পান করার পর সেই বোতল ফেলে দেবার আগে নষ্ট করে এরপর ফেলে দেই যেন পুনরায় কেউ ঐ বোতলটি ব্যবহার করে প্রতারনা না করতে পারে।
(collected)