Health Tips > Psychological Disorder

কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে

(1/2) > >>

Jannatul Ferdous:
কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে

কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশু কিশোরদের মাঝে নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতা এবং অন্য মানুষের প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখানোর প্রবণতা দেখা যায়। প্রতিদিন চলতে গিয়ে যেখানে যেমন নিয়ম কানুন বা প্রথা মেনে চলতে হয় কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে তার প্রায় অধিকাংশই নষ্ট হয়ে আসে। ঘরে-বাইরে কোথাও তারা নিয়ম মানতে চায়না। অন্যের অধিকার সম্মন্ধে শ্রদ্ধাবোধ বা সম্মান প্রদর্শন কমে আসে। বেপরোয়া, উন্নাসিকতা, উশৃঙ্খলতা, উদাসীনতা, উগ্রতা এমনকি মিথ্যা কথা বলা চরিত্রের একটি বড় অংশকে দখল করে নেয়। সাধারণত বয়সের সাথে সংগতিপূর্ণ সামাজিক আচরণগুলিও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।
অন্য কোনো মানুষ বা জীবজন্তুর প্রতি তাদের কোনো ধরনের মমতাবোধ থাকেনা। বরং বেশিরভাগ সময়ই তারা ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ আচরণ করে থাকে। ঘরে-বাইরে জিনিষপত্র ভাংগাভাংগি বা মারামারি প্রায়ই লেগে থাকে। প্রায়ই দেখা যায়, বাড়িতে বা স্কুলে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামূলক আচরণের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এদের এধরনের প্রতারণামূলক আচরণের জন্য অনেক সময় অভিভাবকরা বিভ্রান্ত হয়ে থাকে। জিনিসপত্র সরানো বা চুরি করা অভ্যাসে পরিণত হয়। সবখানে নিয়মের প্রতি উন্নাসীকতা চরমে পৌঁছে। অতিরিক্ত চাহিদা বা নিজের ইচ্ছা মতো চলা অভ্যাসে পরিণত হয়। পিতা মাতা বা শিক্ষকরা অনেক সময় এদের আচরণ বা চাহিদার কাছে অসহায় হয়ে যায়। আঠারো বছরের আগ পর্যন্ত এই সমস্যাগুলি কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের অন্তর্ভূক্ত থাকে। পরবর্তীতে এই সমস্যাগুলিকেই এন্টিসোশাল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার হিসেবে ধরা হয়।
কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের আচরণ ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন হলেও আচরণের মূল বৈশিষ্ট্য প্রায় একই থাকে। জায়গা ভেদে প্রতারণা এবং নিয়মভাংগার কৌশল ভিন্ন হয়। কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হবার পর, তাদের চরিত্রের অন্যান্য পরিবর্তনের ভিতর গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন তাদের মাঝে কোনো বিষয়েই অনুশুচনা কাজ করেনা।
এমনকি তারা পূর্বের কোনো অভিজ্ঞতা থেকেও কিছু শিখতে চায়না। সব বিষয়েই তার নিজের চিন্তাই যেন শেষ কথা।

Jannatul Ferdous:
স্কুলে বা পড়াশুনার স্থানে আচরণ

পড়াশুনা, নিয়মিত স্কুলে যাওয়া বা অন্যান্য বিষয়ের উপর থাকে চরম অনাগ্রহ। বিভিন্ন ছুতা বা বাহানায় তারা প্রায়ই স্কুল ফাঁকি দেয়। ক্লাসে গিয়েও পড়াশুনা না করা এবং অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। কোনো একটি কাজ সঠিকভাবে না করার যোগ্য যুক্তি যেন তাদের কাছে সবসময়ই তৈরি থাকে। সব কিছুতেই কেয়ারলেস ভাব স্পষ্ট। অন্য সহপাঠীদের সাথে সচারাচর সদভাব গড়ে উঠেনা। সাধাণরত অন্যরা এদেরকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে। সুন্দর সম্পর্ক তৈরির ব্যাপারেও তাদের উদাসীনতা স্পষ্ট থাকে। তাদের একাডেমিক পারফরমেন্স ক্রমান্বয়ে নীচের দিকে নামতে থাকে। এমনকি, অনেকেই পড়াশুনা বন্ধও করে দেয়।

Jannatul Ferdous:
পরিবারে আচরণ ও অবস্থান

সাধারণত পরিবারের অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে আসে। মিথ্য বলা, টাকা পয়সা বা মূল্যবান জিনিস চুরি করা, রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়া, জিনিসপত্র ভাংগা, যখন তখন ক্ষেপে যাওয়া, দেরি করে ঘুম থেকে উঠা, সারারাত না ঘুমিয়ে পরের দিনের কাজের বা স্কুলে নিয়ম না মানা অহরহই দেখা যায়। অন্যের উপর দোষ চাপানোর একটা প্রবণতা সব সময়ই লক্ষ্য করা যায়। যখন তখন অপ্রয়োজনীয় বা অসম্ভব আবদার প্রায়ই করে থাকে। পরিবারের অর্থনৈতিক, সামাজিক বা অন্যান্য সংগতির বিষয়ে তারা থাকে চরম উদাসীন। নিজের ইচ্ছা বা চাহিদাই তাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে।
পরিবারের অন্যরা ধীরে ধীরে তাদের উপর যেকোনো ধরনের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। পরিবারের সদস্যদের এসব বিষয়ে প্রায়ই হতাশ হতে দেখা যায়। অনেকেই আবার বয়স কম মনে করে বিষয়গুলিকে মেনে নেয় এবং কেউ কেউ প্রশ্রয়ও দিয়ে থাকে। কেউ আবার তাদের এধরনের আচরনগুলিকে অন্যদের কাছ থেকে ঢেকে রাখতে চায়। ফলে পরিণতি হয় আরো খারাপ।

Jannatul Ferdous:
বিশেষ বিশেষ লক্ষণ ও গুন

কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত অনেকের মাঝেই বিশেষ ধরনের কোনো একটি কাজের প্রতি দক্ষতা থাকতে দেখা যায়। নতুন নতুন প্রতারণার কৌশল হিসেবে সেই দক্ষতা বা গুনকেও তারা অনেক সময় কাজে লাগায়। কেউ হয়তো কোনো একটি খেলা ভালো পারে, কেউ হয়তো ভালো গান গাইতে বা বাজাতে পারে। অনেকে আবার অবিশ্বাস্য কিছু করেও দেখাতে পারে।
অনেক সময় দেখা যায় কোনো একটি বিশেষ কাজের দায়িত্ব ওদের হাতে ছেড়ে দিলে এবং তারা যদি নিজের নিয়ম ও ইচ্ছা অনুযায়ী করতে পারে তবে সেসবের ভালো ফলও বয়ে আনতে পারে। তারা অতিরিক্ত রিস্ক নিতেও পছন্দ করে। তবে অনেক কাজ বা দায়িত্ব হাতে নেয়ার এক ধরনের প্রবণতা কাজ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ অসমাপ্ত রেখে অন্য কাজে যুক্ত হয়ে যায়। ফলে সত্যিই কোনো কাজের দায়িত্ব দিয়ে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যায়। কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গেছে, কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশু কিশোরদের অনেকেই স্বাভাবিক বুদ্ধির পরিমাণের চেয়ে কম বুদ্ধিমান হয়ে থাকে। অনেকের ভিতরই ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলার সামাজিক দক্ষতাও কম হয়। বিশেষ করে যাদের মধ্যে এসব সমস্যা আগে আগেই শুরু হয় তাদের বুদ্ধি কম হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অথবা যাদের তুলনামূলক ভাবে বুদ্ধি কম তারাই এমন সমস্যায় বেশি জড়িয়ে পড়ে।

Jannatul Ferdous:
কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের কারণ কি?

অনেক ধরনের কারণ উল্লেখ করা হলেও অদক্ষ অভিভাবকত্বকেই মূল হিসেবে দায়ী করা হয়। এছাড়া পারিবারিক, সামাজিক পরিবেশও কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের বড় কারণ। জন্মগতভাবে অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠার আশঙ্কাকেও কেউ কেউ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছেন। লারনিং ডিজএ্যবিলিটি বা বুদ্ধির অপ্রতুলতা (মৃদু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি) এবং এডিএইচডি নামের অন্য মানসিক রোগকেও কেউ কেউ কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। জেনেটিক বা হরমোনাল কিছু কারণও পিছনে কাজ করতে পারে।
অভিভাবকত্ব বা প্যারেন্টিং এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে, শাস্তি প্রদান (পানিশম্যান্ট) ও পুরস্কৃত (রিওয়ার্ড) করার পদ্ধতির ত্রুটির উপর বেশি জোড় দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ কখন, কতটুকু, কিভাবে শাস্তি বা পুরস্কৃত করা উচিত, সেসবের উপর শিশু কিশোরদের আচরণ শিক্ষার অনেক কিছু নির্ভর করে। এসব বিষয়ে নিজের ইচ্ছা বা মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি না করে, শিশুটির বয়স ও মানসিক দিক নজর দেয়া উচিত।

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version