মহা ফজিলত পুর্ণ ও বরকতময় রাত লাইলাতুল বরাত। শবে বরাত ফরাসি শব্দ। সবে অর্থ রাত আর বরাত অর্থ ভাগ্য। সেই হিসেবে শবে বরাতের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সৌভাগ্যের রাত্রি। এই রাত মুসলিম জাতির ভাগ্য রজনী বা শবে বরাত। সোমবার দিনগত রাতটিকে পবিত্র সবে বরাত হিসেবে পালন করবে মুসলিম উম্মা।
চন্দ্র মাসের অস্টম মাস সাবান। সাবানের চাঁদ এমন একটি ফজিলত পুর্ণ ও বরকত ময় রাত আছে, সেই রাতে ইবাদত বন্দেগী করলে অসীম ছওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। সেই রাত্রির নাম লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত। আজ ১৪ই শাবান দিবগত রাত্রি সেই ফজিলতপুর্ণ ও বরকতময় রাত শবে বরাত। এ রাতে গুনাগার বান্দারা আল্লাহ তায়ালার দরবার থেকে ক্ষমা লাভ করবে বলে এ রাতের নাম লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত নাম করণ করা হয়েছে। এ নাম হতে এ রাতের ফজিলত ও গুরুত্ব বিষয়ে অতি সহজেই অনুমেয়।
এ সম্পের্কে পবিত্র আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, হুজুরে পাক (সাঃ) সাবান মাস সম্পর্কে এত বেশী খেয়াল রাখতেন যে রমজান মাস ছাড়া অন্য কোন মাস সম্পর্কে ততটা বেশী খেয়াল রাখতেন না। নবী করিম (সাঃ) আরো বলেছেন, রমজানের জন্য তোমরা সাবান চাঁদের হিসেব রাখ। কারণ সাবানের চাঁদের হিসাব নির্ভূল বা সঠিক হলে রমজানের চাঁদের হিসেব হতে অসুবিধা হবে না।
হযরত আশেয়া সিদ্দিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, একদা রাতে আমি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বিছানায় দেখতে না পেয়ে তাহার খোজে বাহিরে গেলাম, তিনি তখন জান্নাতুল বাকী নামক কবর স্থানে ছিলেন। তিঁনি (সাঃ) বললেন, আমার নিকট জিব্রাইল (আঃ) আসিয়া বললেন যে, আজ সাবানের ১৫ই রাত। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা যতগুলি গুনাগার বান্দাকে মাফ করে দেন। যতগুলি লোক বণী কলব গোত্রের পালের মধ্যে ছাগ পালের গায়ে রয়েছে। ঐতিহাসিক গণের মতে ঐ গোত্রের পালের মধ্যে ২০ হাজারের বেশী বকরী ছিল। কিন্তু যারা আল্লাহর সহিত অন্য কাউকে শরিক করে, নিজেদের বাবা মায়ের সাথে নাফারমানি করে, যারা অন্যের প্রতি ইর্শ্বা প্রশোন করে, আরা যারা পায়ের গাঁটের নীচে পর্যন্ত পায়জামা বা লুঙ্গি পরিধান করে তারা এই ব্যাপক ক্ষমা লাভের রাতেও আল্লাহ তায়ালার রহমত ও ক্ষমা লাভ করতে পারবেনা (রায়হাক্কী)।
অন্য একটি রেওয়াতে বর্ণিত আছে, সাবান মাসের ১৫ তারিখ রাতে মহান রব্বুল আলামিন সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রতি বিশেষ রহমত ও নেক নজরে তাকান এবং যাকে খুশি তাকে মাফ করে দেন। যা চায় তাই দেন। আরেকটি হাদিস শরীফে হুজুরে পাক (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাতের রাতে সারা রাত জেগে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করবে আল্লাহ তায়ালা তার একশ থেকে দুইশ বছর জীবনের গুনাহ মাফ করে দিবেন।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) হতে অপর একটি হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে এক রাতে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাহাজ্জুত নামাজ পড়তে শুরু করলে। সেজদায় গিয়ে তিনি এত দীর্ঘ সময় থাকলেন যে, তাহা দেখে আমি ভাবলাম তাহার রুহু কবজ হয়ে গেল নাকি? তাই ভাবিয়া শঙ্কিত হয়েছিলাম। এমনকি আমি বিচলিত হয়ে আমি তার নিকটে গিয়ে বৃদ্ধ আঙ্গুলি ধরে নাাড়া দিলাম। ফলে তিনি নড়ে উঠলেন। তারপর আমার অন্তরে শান্তি ফিরে আসল। আর আমি আমার নিজের জায়গায় চলে গেলাম। নামাজ শেষ করে কয়েকটি কথার পর তিনি আমাকে বললেন- আয়েশা আজ কোন রাত তা তুমি জান কি? উত্তরে আমি বললাম আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসুল ই ভালো জানেন। তিনি (সাঃ) তখন বললেন- আজ সাবানের ১৫ই রাত্রি বা শবে বরাতের রাত। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াবাসীর প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দিয়ে তাকান। যারা তার দয়া ও করুনা ভিক্ষা চায় তাদের প্রতি করুনা বর্ষন করে। কিন্তু পরস্পর শুত্রুতা পোষনকারী লোকদের তাদের নিজ নিজ অবস্থার উপর ছড়ে দেন। অর্থ্যাৎ এই রহমতের রাতেও তারা ক্ষমা লাভ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন শবে বরতের পরবর্তী বছরের কে পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করবে এবং কে মৃত্যু বরন করবে তা এ রাতে লেখা হয়ে থাকে। এ রাতে বণি আদমের আমল নামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আর এই রাতেই তাদের রিজিক বন্টন করা হয়ে থাকে। অপর একটি হাদিস শরীফে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আত ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে শবে বরাতের রাতে মৃত্যুর ফেরেশতা হযরত আজরাইল (আঃ) একটি তালিকা দেয়া হয়। সেই তালিকায় পরবর্তী বছরে যারা মৃত্যু বরন করবে তাদের নাম লেখা থাকবে।
হুজুরে পাক (সাঃ) এরশাদ ফরমাইছেন, যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত অর্থ্যাৎ ১৪ তারিখের দিবাগত রাত আসবে তখন তোমরা রাত্রি জাগরণ করে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগী করবে এবং তার পরবর্তী দিনে রোজ রাখবে। কেন না ঐ রাতের সুর্যাস্তের পরই আল্লাহ পাক সর্বনিম্ন আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দাদেরকে ডেকে ডেকে বলেন কে আছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যাকে আমি ক্ষমা করব, কে আছে রিযিক প্রার্থনাকারী, যাকে আমি রিযিক দিব, কে আছে বিপদগ্রস্ত যে বিপদ মুক্তি প্রর্থনা করবে এবং আমি তার বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব।
(collected)