লোকের মুখে অনেকবারই হয়তো শুনে থাকবেন, আপনার চোখজোড়া মায়ের মতো, মুখের আদল বাবার মতো। বা হয়তো শুনে থাকবেন, হাইট ঠিক ফুফুর মতো। এভাবেই একই পরিবারের সদস্যদের চেহারায় খানিকটা হলেও মিল থেকে যায়। যেটাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয় “জেনেটিক ফ্যাক্টর”।
কোনও ক্ষেত্রে বাবার দিকের জিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে, কোনও ক্ষেত্রে থাকে মায়ের দিকের জিনের সঙ্গে।আমাদের প্রত্যেকেরই শারীরিক গঠনে জিনের স্ট্যাম্প দেওয়া থাকে। এছাড়াও জিন নির্ধারণ করে আমাদের পেশা, আমাদের মেধা। পরিবারে কোনওকালে কোনও ভালো আঁকিয়ে থাকলে, এক পুরুষ, দু-পুরুষ পর ঠিক একজন আঁকিয়েকে খুঁজে পাওয়া যায় সেই পরিবারে, যাঁর সঙ্গে আগের জনের বিস্তর সাদৃশ্য। বা যদি দেখেন, বাড়িতে সবাই ডাক্তার, প্রফেসার কিংবা উকিল, বিষয়টায় জিনের একটা প্রভাব থাকে।
বিশেষ প্রভাব থাকে মেধায়। যে বাড়িতে বাবা, তাঁর বাবা, তাঁর বাবার অঙ্কে দারুণ বুদ্ধি, লক্ষ্য করা যায় তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মও অঙ্কে তুখোড়। একটা দারুণ উদাহরণ হল “Ray” পরিবার। উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, সুকুমার রায়, লীলা মজুমদার, সত্যজিৎ রায় আর বর্তমান প্রজন্মের সন্দীপ রায়। এঁরা সকলেই কিন্তু একই পরিবারের সদস্য। বংশানুক্রমে বাংলা শিশু সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন যুগযুগ ধরে। অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি।
জেনে নিই জিন আমাদের আর কী কী নিয়ন্ত্রণ করে-
১) চোখে অনেক পাওয়ার বা ছোটো থেকেই মায়োপিয়া:
খুব ছোটো ছোটো বাচ্চাদের চোখে হাই পাওয়ারের চশমা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু খোঁজ নিলে জানা যাবে, তাদের খাদ্যাভাসে কোনও খামতি নেই। অসুখটির নাম মায়োপিয়া। এর জন্য কিন্তু আপনি টিভি বা ভিডিও গেমকে দোষ দিতে পারবেন না। এর কারণ একমাত্র জিন। পরিবারের ইতিহাসে কারও না কারও কোনও না কোনও সময় চোখে মায়োপিয়ার সমস্যা ছিল।
২)অল্পেই টাক পড়া:
সাত্তাড়াতাড়ি মাথায় টাক পড়তে শুরু করলে আগেই খতিয়ে দেখুন পরিবারে কার কার টাক আছে। যদি দেখেন বাবা, চাচা, কাকা, দাদা, এঁদের সকলেরই মাথাই গড়ের মাঠ, আপনিও সেদিকেই এগোচ্ছে। হাসি মুখে মেনে নিন সত্যিটা। মাথায় টাক পড়ার ৯৯% কারণ আপনার বংশের জিন। বাকি ১% হতে পারে শারীরিক সমস্যা বা পরিবেশ। ঠিক একইভাবে মাথায় অনেক চুল হওয়ার কারণও কিন্তু হতে পারে আপনার জিন।
৩)ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার নেশা:
আপনার পরিবারের কোনও সদস্যের এই কু-অভ্যেস থেকে থাকলে, তাঁকে সম্পূর্ণ দোষ না দিয়ে বরং খতিয়ে দেখুন ফ্যামিলির ইতিহাস। সম্প্রতি একটি বিদেশি সমীক্ষায় বেরিয়েছে, ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার নেশা হতে পারে বংশগত। পূর্বপুরুষদের কারোর এই কু-অভ্যেস থেকে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মেরও সেই কু-অভ্যাস ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
৪) সিগারেট না ছাড়তে পারার কারণ:
হস্টনের এক প্রখ্যাত চিকিৎসক ডক্টর অ্যান্ডারসনের দীর্ঘদিনের গবেষণায় বেরিয়েছে, ধূমপানের অভ্যেস ত্যাগ করতে না পারার কারণ হতে পারে জিন। ধূমপান বা নেশা করার প্রবণতা তৈরি হয় জিনের কারণেই।
৫)মোটা হওয়া বা ওবিসিটি:
কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা হাজাররকম শারীরিক কসরত করেও, ডায়েট করেও শরীরের বাড়তি চর্বি ঝরাতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর জন্য দায়ি নাকি জিন। হজমশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে জিন ফ্যাক্টর। ফলে মেটাবলিজ়ম ভালো না হওয়ার কারণে শরীরে মেদ জমে জমে ওজন বাড়ে, ওবিসিটিতে পরিণত হয়।
৬)অল্পে রেগে যাওয়া:
নিজেকে কখনও প্রশ্ন করেছেন, কেন কথায় কথায় আপনি এত রেগে যান। এর কারণও কিন্তু সেই জিনই। এক্ষেত্রে দু-ধরনের জিন হয়। হ্যাপি জিন ও স্যাড জিন। যাঁদের স্যাড জিনের দাপট বেশি, তাঁদের অনেক রাগ। হুটপাট মাথা গরম হয় তাঁদের।
(collected)