এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম

Author Topic: এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম  (Read 623 times)

Offline Md. Nazmul Hasan

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 90
  • Test
    • View Profile
ভারতে মোদি সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন তার নির্বাচনের প্রথম অঙ্গীকার ছিল পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত ভারত গড়ে তোলার। কিন্তু ভারতের কোথাও এর ছিটেফোটা না দেখা গেলেও সুদূর ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে দেখা মেলবে এমন একটি গ্রাম যা দেখে মনে হবে মোদির দেয়া প্রতিশ্রুতির অনেক আগেই পূরণ করতে পেরেছে এই গ্রামের বাসিন্দারা। এই গ্রামটি মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত নাম মাউলিনং। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা যেন এই গ্রামের বাসিন্দাদের একটি প্রথা।

ছোট এই গ্রামটিতে প্রায় ৬০০ মানুষের বসবাস। এই গ্রামের শিশুরা বড়দের চেয়ে বেশি পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। এই গ্রামে ময়লা আবর্জনা কোথাও স্তূপ করে রাখা হয় না। গরুর গোবর থেকে শুরু করে সকল ময়লা আবর্জনা দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। ২০১৪ সালে মোদি সরকারের পরিচ্ছন্ন ভারতের প্রতিশ্রুতি যেন এই গ্রামের মধ্যে দিয়েই পূরণ হয়েছে।
এই গ্রাম যে শুধু মোদির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে তা কিন্তু নয়। ২০০৩ সালে এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামের খেতাবও অর্জন করে নিয়েছে। এছাড়া ২০০৫ সালে ডিসকভার ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনেও এই গ্রামের নাম আসে। গ্রামটি নিয়ে ২০১৫ সালে একটি রেডিওতে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘এই গ্রামটি হতে পারে পুরো ভারতের আদর্শ।’ এছাড়া ২০১৬ সালের মে মাসে এই গ্রামকে আবারও এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে মনোনয়ন করা হয় এবং সেই সঙ্গে সরকারের সফলতা হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। এই গ্রামে প্রবেশে কোথাও কোন কাঁদা বা ময়লা আবর্জনার স্তুপ চোখে পড়বে না। চারদিকের পরিবেশ এতটাই মনোরম, যা হাটার সময় একটা ভিন্ন অনুভূতির রাজ্যে নিয়ে যায়। ১১ বছরের দেতি বাখরদার তার দিন শুরু হয় ভোর ৬টা বাজে। সে তার প্রতিদিনের টুকিটাকি কাজগুলো ভাগ করে নেয় গ্রামের অন্য ছেলেমেয়ের সঙ্গে। যার মধ্যে গ্রামের রাস্তা পরিষ্কারের কাজ। এই ছেলেমেয়েগুলো ঝরা গাছের পাতা ঝাড়ু দিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্তুপ করে রাখে। সব কাজ শেষ হয়ে গেলে তবেই তারা দলবেধে স্কুলের দিকে রওনা হয়। এখানেই শেষ নয়, এই গ্রামের ছেলেমেয়েগুলোর আচার আচরণ আপনাকে মুগ্ধ করবে। কোন প্রকার ময়লা তারা নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া কোথাও ফেলে না। গ্রামের প্রত্যেকটি স্থানে ময়লা ফেলার একটি নির্দিষ্ট স্থান আছে। সারাদিনে জমা ময়লা একটি নির্দিষ্ট জায়গা নিয়ে দিন শেষে পোড়ানো হয়। কিছু ময়লা আবর্জনা সার হিসেবে জমির জন্য ব্যবহার করা হয়। আর কিছু দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করা হয় রান্নার জন্য। এছাড়া গ্রামটির রাস্তার দুধারে সবাই যে যার দায়িত্বে ফুলের গাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের গাছ লাগিয়ে রাস্তাগুলোর সৌন্দর্য বর্ধণ করে। তবে গাছ যেই লাগাক না কেন গাছগুলো পরিচর্যার দায়িত্ব সবার। গ্রামের যিনি প্রধান তার ভাষ্যমতে, ‘এই গ্রামে ছোট থেকে শুরু করে বড়রা সবাই পরিচ্ছন্ন থাকতে ও রাখতে ভালোবাসে। তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে কখনোই আমাকে তাদের সচেতন করতে হয় না। এমনকি যে স্কুলগুলোতে তারা পড়তে যায় সেই স্কুলগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ হলো স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

প্রত্যেকটি বাড়ির পেছনে রান্নার জন্য আলাদা ঘর আছে। আর পয়ঃব্যবস্থা এখানে বেশ ভালো। আমরা কখনোই বাথরুমের পানি লেকের বা খালের পানিতে পড়তে দেই না। কারণ এতে করে পানি নষ্ট হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সবচেয়ে বড় কথা এই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে কোন হিংসা বিভেদ নেই। তাই সকলে মিলে একে অপরকে সাহায্য করে বলেই এখন পর্যন্ত গ্রামটিকে পরিস্কার রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে গ্রামবাসী পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার এই মন্ত্র কোথায় পেল এ কথা জানতে গেলে গ্রাম প্রধান বলেন, ‘বহু বছর আগে এই গ্রামে ১০০ জন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। পরিষ্কার থাকা তাদের ধর্মেই যেন একটা অংশ ছিল। পরবর্তীতে তারা এই গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেও রয়ে গেছে তাদের এই নিয়মটি।’