Bangladesh > Heritage/Culture

Birds of Bangladesh

<< < (6/7) > >>

fahad.faisal:
Thanks a lot for the informative post.

Lazminur Alam:
পাখিটি আদতে অতি নিরীহ। চোখে সব সময় ভয় ভয় ভাব লেপ্টে থাকে। তবে সে গায়ক। এই পাখিদের পছন্দ হলো ছায়া ছায়া, মায়া মায়া বন-বাগান আর ঝোপঝাড়পূর্ণ এলাকা। আবার গেরস্থ বাড়ির উঠোন-বাড়িতেও এদের নির্ভয় যাতায়াত। মাটির ওপর দিয়ে ছন্দময় ভঙ্গিতে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যায় এরা।

পাখিটির নাম কমলাবউ। গ্রীষ্ম থেকে শরতে বাসা করে গাছের ঝোপালো ডালে বা সুপারির ৭-৮ ফুট উঁচু চারার পাতার ডগার গোড়ায়। বাসা চমৎকার গোলাকার। দ্বিস্তরবিশিষ্ট বাসাটার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, চামচের হাতার মতো বাসারও একটা হাতা থাকে, সেটি সুপারি পাতার সঙ্গে শক্ত করে জুড়ে দেয়। যাতে ঝড়ে বাসা উড়ে না যায়। আমার নিজের গ্রামের সুপারিবাগানগুলোতে এদের বাসা প্রতি মৌসুমে কমপ‌ক্ষে ৫০টি দেখা যায়। পিরিচের ওপর স্যুপের বাটি বসালে যেমন দেখায়, বাসাটি দেখতে প্রায় তেমন।

এরা ঝরাপাতা-ডালপালা ওল্টায় ঠোঁট দিয়ে। নানা রকমের পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, টিকটিকি-অঞ্জনের বাচ্চা, ব্যাঙাচি, ব্যাঙের পিচ্চি ছানা তাদের খাবার। উইপোকার ডিম-বাচ্চা এদের কাছে পোলাও ভাত। কেঁচো গেলে নুডলসের মতো।

বিপদের গন্ধ পেলে তীক্ষ্ণ-সুরেলা-ধাতব কণ্ঠে ‘হুইসেল’ বাজিয়ে দ্রুত উড়াল দেয়। আশপাশের সব পাখি এই সতর্কসংকেতের অর্থ বোঝে। শীতে পরিযায়ী পাখি ধূসর দামা ও রঙিলা দোয়েলরা এদের সঙ্গে মিলে একত্রে খাবারের সন্ধান করে।

মেয়ে পাখি গোলাপি-মাখন রঙা ডিম পাড়ে ৪টি। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৪ দিনে। ১০ থেকে ১৫ দিনে তারা উড়তে শিখে যায়। কিশোর বয়সী ছানাদের বুক-ঘাড়-মাথা ও ডানার উপরিভাগে অসংখ্য বাদামি রঙের ছিট থাকে। মা পাখিটিকেও অনেকটাই ও রকম দেখায়। ছেলে পাখির মাথা-ঘাড়-বুক-পেট কমলা অথবা লালচে কমলা। পিঠ ধূসর-নীলচে। ডানার প্রা‌ন্তে এক সারিতে গোল ফোঁটা থাকে ৫-৬টি। লেজের তলা সাদা। গলা সাদাটে, ঠোঁট কালো। গোলাপি পা।

এরা রাতে আশ্রয় নেয় বাঁশের কঞ্চি, পেঁপে পাতার ডগা ও মোটা লতার ওপরে। শীতে মা-বাবা পাখি যখন পাশাপাশি হয়ে শরীর ফুলিয়ে গোলগাল পটকা মাছের মতো হয়ে ঠোঁট পিঠে গুঁজে দিয়ে ঘুমায়, তখন এদের দেখতে দারুণ লাগে। টর্চলাইটের আলোয়ও ওদের ঘুম ভাঙে না। গভীর হয় ঘুম।

কমলাবউয়ের ইংরেজি নাম অরেঞ্জ–হেডেড থ্রাস। বৈজ্ঞানিক নাম zoothera citrina। এরা মেটে দোয়েল, দামা, গুয়ে হালতি ও কমলা দোয়েল নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ২১ সেন্টিমিটার। ওজন ৬০ গ্রাম।

দক্ষিণ এশিয়ায় এই পাখির ১৫টি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে কমলাবউ বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। সুরেলা কণ্ঠে গান গায় বলে অনেকে একে রসিক পাখিও বলে।

Lazminur Alam:
বাংলাদেশের পাখির তালিকায় সদ্য সংযোজিত পাখিটি এক বিরল আবাসিক প্যাঁচা। এত দিন চোখের আড়ালেই ছিল। এর কোনো বাংলা নাম নেই। ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান স্কপস আউল। এর আগে ওকে নিমপোখ, নিম প্যাঁচা বা শিঙ্গেল প্যাঁচার (কলারড স্কপস আউল) একটি উপপ্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হতো। কাজেই পাখিটিকে দেশি নিমপোখ অথবা দেশি নিম বা শিঙ্গেল প্যাঁচা বলা চলে। বৈজ্ঞানিক নাম otus bakkamoena। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় বাস করে এরা। দেশি নিমপোখ পরিযায়ন করে না।

প্রাপ্তবয়স্ক দেশি নিমপোখের দৈর্ঘ্য ২২ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১৪৩ থেকে ১৮৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম, তবে পুরুষের চেয়ে স্ত্রী কিছুটা বড় হয়। এর দুটি রং—একটি ফ্যাকাশে বাদামি ও অন্যটি লালচে। প্রধানত দ‌ক্ষিণাঞ্চলের পাখিগুলো লালচে রূপের, যাদের দেহের বর্ণে গৈরিক আভা থাকে। রূপ অনুযায়ী মুখমণ্ডলের গোলক দুটো কালো বর্ডারযুক্ত ফ্যাকাশে ধূসর বা লালচে। কপাল, ভ্রু ও কানের ওপরের লম্বা শিং ও পালকগুলো সেই তুলনায় বেশ ফ্যাকাশে। মাথা কালচে ফোঁটাযুক্ত। দেহের ওপরটা ছিটছোপযুক্ত গাঢ় বাদামি থেকে কালচে। ঘাড়ে রয়েছে হলদে বন্ধনী। বুক ধূসর–হলদে বা লালচে হলুদ ও তাতে রয়েছে অল্প কিছু লম্বালম্বি দাগ। পেটের দিকটা সাদাটে। চোখ বাদামি বা কমলা। পায়ের পালক ধূসরাভ বাদামি, যা আঙুলের কাছে এসে সাদাটে হয়েছে। আঙুল মাংসল, বাদামি। নখ ফ্যাকাশে, শিং বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি ফ্যাকাশে ধূসর বা হলদে বাদামি, যার ওপর ডোরা থাকে।

দেশি নিমপোখ গ্রামীণ বন, আম ও ফলের বাগান, কুঞ্জবন ও কৃষিজমিতে বাস করে। তবে এ পর্যন্ত রাজশাহীর শহরসংলগ্ন সিমলা ছাড়া দেশের কোথাও এদের দেখা যায়নি। এরা নিশাচর। ঘাসফড়িং, গুবরে পোকা, মথ ইত্যাদি খায়। সুযোগ পেলে গিরগিটি, ইঁদুর, ছোট পাখিও খায়। ঢেউয়ের মতো উড়ে বেড়ায়। ‘ওক-ওক-ওক-ওক’ শব্দে ডাকে।

ডিসেম্বর থেকে মে প্রজননকাল। মাঝারি উচ্চতায় কোনো গাছের খোঁড়লে বাসা বানায়। একই বাসা বছরের পর বছর ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে তিন–চারটি। ফোটে ২৭ থেকে ২৯ দিনে। ছানারা চার-পাঁচ সপ্তাহে উড়তে শেখে। স্বাবলম্বী হতে আরও তিন-চার সপ্তাহ লাগে। আয়ুষ্কাল তিন-চার বছর।

Lazminur Alam:
ডানা পিছমোড়া করে দাঁড়িয়ে থাকা পাখিটি সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক বক কালিকাক। শীতলে কাক, খাইরা, পিদালি, ধূসর বা ডাইং বক নামেও পরিচিত এরা। ইংরেজি নাম গ্রে হেরন। বৈজ্ঞানিক নাম ardea cinerea. বাংলাদেশসহ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকায় এদের দেখা মেলে।

কালিকাক লম্বায় ৮৪ থেকে ১০২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। গড়ে ১ কেজি ৩৫০ গ্রামও ওজন হয়। মাথা-গাল-গলা বাদে শরীরের বাকি অংশ ফ্যাকাশে থেকে নীলচে ধূসর। মাথা, গাল ও গলা সাদা। মাথার দুপাশ থেকে দুটো কালো ডোরা মাথার পেছনে গিয়ে অগোছালো সুতাপালকের ঝুঁটি তৈরি করেছে। বুক, পেট ও লেজতল সাদাটে ধূসর। চোখ সোনালি হলুদ। চঞ্চু কালচে বাদামি। পা ও পায়ের পাতা হলদে সবুজাভ বাদামি। প্রজননকালে চঞ্চু কমলা-হলুদ এবং পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল হলুদ রং ধারণ করে। পুরুষের তুলনায় মেয়েরা আকারে ছোট। এর ঝুঁটিও ছোট। ধূসর মাথা, ঘাড়সহ অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির শরীর অনুজ্জ্বল।

সারা দেশের অগভীর হাওর, বিল, হ্রদ, নদী, খাল, জলাভূমি, আবাদি জমি, পুকুর, মোহনা ইত্যাদিতে একাকী বা ছোটা দলে বিচরণ করে কালিকাক। পানি, কাদা বা মাঠে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বল্লমের মতো চোখা চঞ্চু দিয়ে মাছ, ব্যাঙ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, শামুক-ঝিনুক, কাঁকড়া-চিংড়ি, কেঁচো, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি শিকার করে খায়। ওড়ার সময় ‘কারার-কারার...’ স্বরে ডাকে।

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এদের প্রজননকাল। এ সময় জলাশয়ের আশপাশের উঁচু গাছের শাখায় ডালপালা ও ঘাস দিয়ে বড় মাচার মতো বাসা বানায়। পুরুষ বাসা তৈরির জায়গা পছন্দ করে ও সরঞ্জাম জোগাড় করে। স্ত্রী সেগুলো দিয়ে বাসা বানায়। হালকা নীলচে সবুজ রঙের ২ থেকে ৫টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২৫ থেকে ২৬ দিনে। স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে ডিমে তা দেয় এবং ছানাদের লালন-পালন করে। ছানারা প্রায় ৫০ দিনে উড়তে শেখে। একেকটি কালিকাক ১০ বছরের বেশি সময় বাঁচে।

Lazminur Alam:
একবারই এদের একটি বাসা পাওয়ার রেকর্ড আছে বাংলাদেশে। পাখিটির ইংরেজি নাম ব্লু–থ্রোটেড ব্লু–ফ্লাইকেচার। সরাসরি বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায় নীলগলার নীল চটক। বৈজ্ঞানিক নাম Cyornis rubeculoides.

পুরুষ পাখির গলা-মাথা-ঘাড়-পিঠসহ লেজের উপরিভাগ গাঢ় নীল। বুকটা চমৎকার কমলারঙা। তার নিচ থেকে শুরু করে পেটটা সাদা। মেয়ে পাখির গলা ক্রিম মাখানো কমলাটে, বুক কমলা, পেট সাদা। পা ধূসর। দৈর্ঘ্যে এরা ১৪ সেন্টিমিটার হয়। ওজন গড়পড়তা ১৬ গ্রাম। ঠোঁটের গোড়ায় গোঁফপালক আছে।

তীক্ষ্ণ–সুরেলা কণ্ঠে ‘ছিক্ ছিক্ ছিক্ ছিক্’ শব্দে অনবরত গান গেয়েই চলে। এদের চারণ‌ক্ষেত্র ঘাসবন, হোগলাবন, ধান‌খেত, ঝোপঝাড়। মূল খাদ্য পোকামাকড়। শিকার দেখলেই অনেকটা খেলনা কাগজের প্লেনের মতো বাতাসে সাঁতার কেটে গিয়ে শিকার ঠোঁটে পুরে নেয়। তারপর শিকার নিয়ে গিয়ে অন্য কোনো জায়গায় বসে সাবাড় করে। প্রয়োজনে ঘাসবনের তলায় নেমে মাকড়সা-ঘাসফড়িং পাকড়াও করে। গান গাওয়ার সময় লেজটা নাচিয়ে এরা নান্দনিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

[*] Previous page

Go to full version