Bangladesh > Heritage/Culture
Birds of Bangladesh
Lazminur Alam:
আবাসিক এই পাখির নাম চিত্রিত গলা কাঠঠোকরা। সবুজ ডোরা কাঠঠোকরা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Streak-throated woodpecker। বৈজ্ঞানিক নাম picus xanthopygaeus। দৈর্ঘ্য ৩০ সেন্টিমিটার। ওজন ১০০ গ্রাম। মাটিতে চলতে চলতে ক্লান্ত হলে এরা লেজের পালক মেলে দিয়ে, সেই শক্ত পালক মাটিতে ঠেকিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসার মতো বসতে পারে খাড়া হয়ে। লেজটাকে এরা তৃতীয় পা হিসেবে ব্যবহার করে। গাছের চেয়ে মাটিতেই থাকে বেশি।
মূল খাদ্য এদের পিঁপড়া, পিঁপড়ার রসালো সাদা ডিম, বাচ্চা উইপোকাসহ ওদের রস টসটসে ডিম-বাচ্চা, বিটল পোকা-কেঁচো, নানান রকম পোকামাকড়-লার্ভা ইত্যাদি। এ ছাড়া পান করে ফুলের মধুরেণু, তাল–খেজুরের রসসহ শিশিরকণা।
পুরুষ পাখিটির মাথার চূড়া ও তালু শুকনো আলতার মতো লাল, লেজের গোড়ার উপরিভাগ ও পিঠে এক ছোপ করে হলুদ রং, পিঠ হলুদাভ সবুজ, কানের পাশটা চকচকে ছাই বাদামি, চিবুক ধূসরাভ সাদা। তাতে সরু সরু কালচে রেখা টানা। কালচে কমলা রঙের আভা থাকে ঘাড়ে। চোখের ওপর দিয়ে সাদাটে টান থাকে। বোজানো অবস্থায় পাখার প্রান্তদেশ সাদাটে বাদামি ছোপের সারির অপূর্ব বিন্যাস। গলা-বুক-পেটেও শিল্পীর বাদামি ডোরা ও ছিট-ছোপের আশ্চর্য চিত্রিত শিল্পকর্ম।
Lazminur Alam:
সদা সতর্ক হুঁশিয়ার লম্বা পা ও নলাকৃতির লম্বা গলার এই পাখি বিপৎসীমানার ভেতরে মানুষ বা অন্য কোনো শত্রু দেখলে ঘাড়-মাথা ও পুরো শরীর টানটান করে, ঠোঁটটি আকাশমুখো করে স্থির হয়ে যায়। আর যদি ঘাসবন, কাশবন, হোগলাবন বা অন্য কোনো জলজ ঝোপঝাড়ের ভেতরে থাকে, তাহলে মুহূর্তেই নিজেকে আড়াল করে ফেলে। শরীরের রংটাও এদের গাছপালার সঙ্গে মিশে যাওয়ার উপযোগী। ঘাড়ের ওপরের কিছু অংশসহ পিঠ-ডানার উপরিভাগও বেগুনি আভা মাখানো ছাই-ধূসর। পিঠের নিচের দিকটা হালকা লালচে। উড়াল দেওয়ার মুহূর্তে দুই ডানা অনেকটাই খেপজালের মতো খুলে যায়। তখন ডানার প্রান্তের কালো পালকগুলো নজরে পড়ে। চিবুকসহ ঘাড়ের উপরিভাগটা লালচে। গলার কাছ থেকে একটি করে মোট দুটি কালো-সরু রেখা গলার দুই পাশ থেকে নেমে বুকের উপরিভাগে মিশেছে। টিকির মতো দুগাছি কালো সুতাপালক কানের কাছ থেকে পেছন দিকে গিয়েছে। মাথার চাঁদি কালো। ঠোঁটের নিচের গলাটুকু সাদা। হলুদাভ পা-ঠোঁট। বুক ও ঘাড়ের দুই পাশ থেকে সেমাইয়ের মতো সরু কিছু সুতাপালক ঝুলে থাকে।
পাখিটির নাম বেগুনি বক। ঝুঁটিকাক ও খয়রা কানা নামেও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে ব্যাপক পরিচিত ছিল। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নদীচর-মোহনা-উপকূল-কাপ্তাই হ্রদ, বৃহত্তর খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের হাওর-বিলে দেখা মিলত। এরা আমাদের আবাসিক পাখি। কিন্তু এই ২০১৭ সালে এটি এখন বাস্তুচ্যুত পাখি। হেমন্ত-শীতে কিছু পাখি আমাদের দেশে আসে। পরবাসী এই পাখির ইংরেজি নাম Purple Heron. বৈজ্ঞানিক নাম Ardea perpurea. দৈর্ঘ্য ৭০-৯০ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় দেড় কেজি।
মূল খাদ্য এদের মাছ-ব্যাঙ-জলজ নির্বিষ সাপ-পোকামাকড়-ছোট কাঁকড়া ও দু-চার দিন বয়সী কচ্ছপছানা। এদের বাসা হয় গাছে, সরু-শুকনো কঞ্চি ও ডালপালা দিয়ে বড়সড় বাসা বানায়। সেই গাছে থাকতে পারে অন্যান্য বকের বাসাও। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ফোটে ২৫-২৬ দিনে।
Source:http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1349271/বেগুনি-বক
Lazminur Alam:
এরা ডিম পাড়ে ছয়-সাতটি করে। মেয়ে ও পুরুষ পাখি পালা করে ডিমে তা দেয়। বাসা করার সময়ও দুজনে পালা করে গর্ত খোঁড়ে। এরা অঙ্ক ও জ্যামিতিতে পাকা। মৃত্তিকাবিজ্ঞানীও বলা যায়। বাসা করে মাটি পরীক্ষার পর মাপজোখ করে।
গাঙশালিকেরা নদীর খাড়া পাড়ে বা পুল-কালভার্টের তলায় এমন জায়গায় বাসা বাঁধে, যেখানে শিয়াল-খাটাশ-বনবিড়ালেরা চড়তে গেলেই পিছলে পড়বে। দুষ্টু ছেলেমেয়ে ও বাজ-ইগলেরা ডিম-ছানা নাগালে পাবে না। বৃষ্টির পানি খাড়া পাড় বেয়ে নামার সময় সহজে সুড়ঙ্গের ভেতর ঢুকবে না। বাসা শেষ করতে সময় লাগে ছয় থেকে নয় দিন। কয়েক জোড়া পাখি মিলে কলোনি বাসা করার আগে জুতসই জায়গাটা নির্বাচন করে। তারপরও বাসার মুখ থাকে ছোট। গভীরতা দুই থেকে চার ফুট ও একটু ডানে বা বামে ঘুরে গিয়ে থাকে ডিম-বাচ্চার চেম্বার। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৫ থেকে ২১ দিনে। ছানারা উড়তে শেখে ১৯ থেকে ২৪ দিনে।
বুদ্ধিমান গাঙশালিকদের বেশি দেখা যায় ছোট-বড় নদী এলাকার আশপাশে। বলা যায়, নদীকেন্দ্রিক জীবন এদের। দলে চলে। গলার স্বর অনেকটাই ভাতশালিকের (Common Myna) মতো। তবে খুব মিষ্টি ও মোলায়েম শব্দে গলার ভেতরে এরা যেন জলতরঙ্গ বাজায়। মূল খাদ্য এদের ফল-পোকামাকড়-কীটপতঙ্গ ও নানান রকম শস্যদানা। নিয়মিত বালুস্নান করে, ধানগাছে জমে থাকা শিশিরে ডানা ঝাপটে মজা করে শিশির-স্নানও করে।
গাঙশালিক একনজরে নীলচে ধূসর পাখি। ডানার প্রান্ত ও লেজ কালো, লেজের অগ্রভাগ গোলাপি-সাদা। ঘন-কমলা রঙের চোখের পাশটার সঙ্গে একই রঙের ঠোঁটটা খুবই মানানসই। ঠোঁটের গোড়ায় আবার কপালমুখো ছোট একগুচ্ছ ঝুঁটি। ডানার প্রান্তে সাদা ছোপ। পা গোলাপি হলুদ। ইংরেজি নাম Bank Myna. বৈজ্ঞানিক নাম Acridotheres ginginianus. দৈর্ঘ্য ২১ সেমি। ওজন ৭২ গ্রাম।
Source: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1351286/ওরা-অঙ্ক-জ্যামিতি-জানে
Lazminur Alam:
বিপদে পড়লে এই পাখিরা কামড় বসাতে মহা ওস্তাদ। মোটা-শক্ত ঠোঁটের আগা তীক্ষ্ণ-ধারালো। পেশাদার জাল-ফাঁদ শিকারিরা এদের জালফাঁদ থেকে ছাড়ানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করেন। বন্দুক শিকারিরাও আহত পাখি ধরতে সতর্ক থাকেন। কামড় বসাতে পারলে ছাড়ানো কষ্ট। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর খুলনার ফকিরহাট-চিতলমারী-মোল্লাহাট-তেরখাদা-ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হতো। বন্দুক শিকারিরা গুলি করে মারতেন। হাটবাজার থেকে পাখি কিনে ক্রেতার হাতে ধরিয়ে দেওয়ার আগে বিক্রেতারা পাখিটির নাকের ভেতর দিয়ে এই পাখিটিরই ডানার একটি পালক ছিঁড়ে নাকের এপাশ-ওপাশ দিয়ে বের করে ঠোঁটে পালক বেঁধে দিতেন। ক্রেতারা মুরগির মতো পা ধরে উল্টো করে ঝুলিয়ে বাড়িমুখো হতেন। ২০১৭ সালেও এ পাখি বিক্রি হচ্ছে। তবে অতি গোপনে। দেশের হাওরাঞ্চলে ধরা-মারা-বেচাবিক্রি চলে আজও। চাহিদা ভালো। মাংসমূল্যের জন্যই পাখিটি আজ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। অথচ বন্য প্রাণী আইনে দেশের যেকোনো পাখিই ধরা-মারা-বিক্রি ও পোষা দণ্ডনীয় অপরাধ।
দুঃসাহসী-লড়াকু ও বদমেজাজি এই জলাজমির পাখিটির নাম কালিম। ফকিরহাট-বাগেরহাট তথা বৃহত্তর খুলনায় এটি ‘বুরি’ নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। ইংরেজি নাম purple swamphen। বৈজ্ঞানিক নাম porphyrio porphyrio। দৈর্ঘ্য ৪৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৫০ গ্রাম। মারকুটে এই পাখিরা একনজরে চকচকে নীলচে-বেগুনি। রোমান যোদ্ধাদের মতো কপাল-মাথা জোড়া আলতা রঙের দর্শনীয় বর্ম। লালচে রঙের পা ও পায়ের লম্বাটে
আঙুল। লেজের তলা কার্পাস তুলোর মতো সাদা। চোখের পাশে বৃত্তাকারে সাদাটে ছোপ। বেশ নাদুসনুদুস স্বাস্থ্যবান এই পাখিরা সব সময় যেমন সতর্ক থাকে, তেমনি যেন রেগেও থাকে। প্রজনন মৌসুমে পোষা মোরগের কায়দায় দুটি পুরুষ যখন লড়াই করে, তখন কপালের বর্মে বর্মে শব্দ বাজে। বন্দুকের গুলির ছররায় যদি একখানা পা আহত হয়, তাহলে পা মুখে কামড়ে ধরে উড়ে পালায়।
এদের মূল খাদ্য জলজ উদ্ভিদ-গুল্মের কচি-নরম পাতা-ডগাসহ পদ্মফুলের ভেতরের অংশ, ব্যাঙের বাচ্চা, ছোট মাছ। ৫০ বছর আগেও হেমন্ত-শীতে ঢাকার শহরতলির বিল-ঝিলসহ সারা বাংলাদেশের বিল-হাওরে দেখা মিলত। এখন এরা কোণঠাসা দেশের কয়েকটি হাওরাঞ্চলে। গ্রীষ্ম-শরতে ভাসমান জলজ উদ্ভিদ-গুল্ম-কচুরিপানা ও ঝোপঝাড়ের তলায় ডাল-লতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে তিন-সাতটি। ছানা ফোটে ১৮-২৩ দিনে। ছানারা হয় শ্লেটি-কালো। তাতে ধূসরের আভা ছড়ানো। মাথা-কপাল জোড়া শিল্ড থাকে, রং ওই লালই। পা ও পায়ের আঙুলও লাল। মা-বাবা পাখি ছানাদের নিয়ে চরাই করে। মুরগিছানাদের মতো ছানারা মা-বাবার পিঠে চড়ে, তেমনি মায়ের দুই পাখা ও বুকের তলায় বসে অদৃশ্য হয়ে থাকে। কিশোরগঞ্জ ও শেরপুর-জামালপুরে পোষা পাখি তথা গৃহপালিত বুরি পাখি দেখা যায়।
Source: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1371091/দুঃসাহসী-কালিম-পাখি
Lazminur Alam:
পুরুষ বুক ফুলিয়ে আর লেজ-মাথা শৈল্পিক ভঙ্গিতে দুলিয়ে দুলিয়ে বউটিকে কত প্রেম-সংগীত যে শোনায়! এরা ২টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। পালা করে তা দেয় দুজনে। ছানা হয় ১২-১৫ দিনে। বাচ্চারা উড়তে শেখে ২১-২৭ দিনে। অন্য ঘুঘুদের মতো এরাও ছানাদের প্রথম দিকে ৪-৫ দিন ঘুঘুর দুধ পান করায়। তারপর অল্প অল্প করে খাওয়াতে শুরু করে মূল খাবার। খাবার তালিকায় আছে নানান রকম ফল। মিষ্টি বরই এদের খুবই পছন্দ। শুধু ফুল নয়, ফুলের নরম পাপড়ি ও কলিও খায়। বাগেরহাট অঞ্চলে ‘উড়ে আম’ (Bischofia javanica) একটি গাছ বেশ সুলভ, ওই গাছের ফলের আকৃতি যেমন অনেকটাই আঙুরের মতো। ওই ফল এই পাখিদের অতি প্রিয়। ‘বলা’ ফলও খেতে ভালোবাসে খুব। এই গাছটিও বাগেরহাটে সুলভ। বন্দুকধারী শিকারিরা এবং আদিবাসী গোষ্ঠীর তির-ধনুকধারীরা এদের শিকার করে। আঠার ফাঁদেও আটকায়। তবে ওদের শিকার করা মোটেই সহজ কাজ নয়। অতিশয় হুঁশিয়ার এরা। মুহূর্তের মধ্যে গাছের ডালে বসে স্টিল যেমন হতে জানে, তেমনি ঝট করে উড়াল দিয়ে পালাতেও পারে।
এদের একজন দলপতি থাকে। পুরো দল দলপতির শারীরিক ভাষা বুঝতে পারে। সব নির্দেশনা পালন করে। ত্রুটি হলে দলপতি ও অন্যরা মিলে শাস্তি দেয়। আবার, তরুণ পাখিরা দলপতির আসনে বসতে চেয়ে দলপতির সঙ্গে মরণপণ লড়াইয়েও নামে। অস্ত্র মূলত দু-পাখার চটপট থাপ্পড়। সুখের সময় আপন মনে চাপা-মিষ্টি শিস যেমন বাজায়, তেমনি আহাজারি করার মতোও ডাকে।
এই পাখির নাম কমলাবুক হরিয়াল। বাগেরহাটে ‘কমলা হরেল’ নামে ৫০ বছর আগেও ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিল। নির্বিচার শিকার, ওদের খাদ্য-গাছ দ্রুত হারে কমে যাওয়ায় এখন দুর্দশা। এদের দৈর্ঘ্য ২৯ সেমি, ওজন ১৫০-২২০ গ্রাম। কমলাবুক হরিয়ালের ইংরেজি নাম Orange-breasted Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম Treron bicinctus.
৫৫ বছর আগে গ্রামবাংলায় সুলভ থাকলেও এখন প্রাকৃতিক বনে কোণঠাসা। সুন্দরবনসংলগ্ন জেলাগুলোতে অল্প সংখ্যায় দেখা যায় আজও। এদের বুকের নিচটা কমলা রঙের, বাকি বুক ও পেট কমলাটে-গোলাপি। মাথার তালু ও ঘাড় ধূসরাভ জলপাই-বাদামি। ডানার প্রান্তে চওড়া কমলা-হলুদ ব্যান্ড। জলপাই-সবুজ পিঠ। লেজের উপরিভাগ শ্লেটি-ধূসর। পাখার শেষ প্রান্ত কালো। লেজের তলাটা লালছে। গলা হলদেটে নীলচে ঠোঁট, লালছে পা।
Source: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1373141/কমলাবুক-হরিয়াল
Navigation
[0] Message Index
[#] Next page
[*] Previous page
Go to full version