রাজা রায় বাহাদুর সড়ক ধরে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের দিকে এলেই লেক। লেকের চারপাশে পুরোনো গাছপালার মধ্যে কিছু রেইনট্রিগাছ ছিল কালের সাক্ষী হয়ে। বর্তমানে শুধু একটি গাছ টিকে আছে। রেইনট্রিগাছের পাতি ডালে সব সময় ডাকাডাকি করে ঘাস-সবুজ রঙের সুন্দর পাখি। লেকের জলের ওপর দিয়ে উড়ে উড়ে এরা শিকার ধরে আবার ফিরে যায় পাতি ডালে। সকাল, দুপুর ও বিকেলে ওখানে গেলেই সবুজ রঙের এ পাখি দেখা যাবে। পাখিটি গ্রামের খেতের প্রান্তর, জলাভূমির কাছে গাছপালায় বেশি সময় কাটায় এবং উড়ে উড়ে পোকা ধরে খায়। শরীরের একহারা সবুজ বর্ণসুষমা ও কীটপতঙ্গ ধরার জন্য এ পাখিটির ইংরেজি নাম হয়েছে গ্রিন বি-ইটার।
সবুজ সুইচোরা বা বাঁশপাতি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। সব বিভাগের গ্রামীণ কুঞ্জবন, খামার ও খোলা মাঠে চোখে পড়ে। সবুজ সুইচোরা বিক্ষিপ্ত ছড়িয়ে থাকা গাছপালা, আবাদি জমি, বেলাভূমি ও চারণভূমিতে বিচরণ করে। সচরাচর ছোট দলে থাকে। খাবারের তালিকায় আছে ডানাওয়ালা পোকা-মৌমাছি, উইপোকা, ফড়িং, প্রজাপতি, বোলতা, মথ, গুবরে পোকা ও পিঁপড়া। দ্রুত ডানা ঝাপটে ও অনমনীয় মুক্ত ডানায় সুন্দরভাবে ধীরে ধীরে উড়ে চলে। মধুর গলায় কাঁপিয়ে অনুক্রমিকভাবে ডাকে ট্রি ট্রি ট্রি...সুরে। বালুময় ভূমি, বিশেষ করে রাস্তার পাশের কাটা পাড়ে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪ থেকে ৭।
সবুজ সুইচোরা ছোট ঘাস-সবুজ পাখি। দৈর্ঘ্য ২১ সেমি, ওজন ১৫ গ্রাম। সোনালি বা লালচে ঘাড়ের নিচের অংশ ছাড়া পুরো শরীরই সবুজ। কালো মাশকারা চোখ বরাবর চলে গেছে। ফিকে নীল গলায় কালো বেড় থাকে। লেজের কেন্দ্রীয় পালক জোড়ার অভিক্ষেপ ভোঁতা আলপিনের মতো। বাঁকা ঠোঁট বাদামি-কালো ও মুখ পাটল বর্ণের। চোখ গাঢ় লাল। পা ও পায়ের পাতা হলুদাভ-বাদামি। নখ শিং বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রী পাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিতে ফ্যাকাশে কিনারার পালকসহ গলার ফিকে ও কালো বেড় নেই। ঢাকার পুরোনো বিমানবন্দর লেক, রমনা পার্ক, চিড়িয়াখানার আশপাশে পাখিটির দেখা পাওয়া সহজ। রমনা পার্কে শীতের সময় লেকের কাছের গাছপালায় বেশ কয়েক জোড়া সবুজ সুইচোরা বাস করে।