এই পাখিটি হলো এ দেশের এক দুর্লভ পরিযায়ী পাখি নীল দোয়েল (Blue Rock Thrush)। অবশ্য এ নামে সে বেশি পরিচিত নয়। নীল শিলাদামা বা নীল থ্রাস নামেই বেশি পরিচিত। তবে এ দেশের গ্রামাঞ্চলে নীল দোয়েল নামে পরিচিত। Muscicapidae গোত্রের এই পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Monticola solitarius।
নীল দোয়েল দৈর্ঘ্যে ২০-২৩ সেন্টিমিটার ও ওজনে মাত্র ৩৭-৭০ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষের পালকের রঙে পার্থক্য থাকে। তা ছাড়া পার্থক্য থাকে প্রজনন ও অপ্রজনন মৌসুমের পাখির পালকের রঙে। প্রজননকালে পুরুষের পুরো দেহের পালকের রং হয় গাঢ় নীলচে-ধূসর; আর ডানা ও লেজ হয় কালচে-বাদামি। কিন্তু অন্য সময় নীলচে দেহে থাকে বাদামি-পীতাভ আভা। অন্যদিকে, প্রজননকালে স্ত্রীর দেহের পালকের রং হয় ধূসর-বাদামি; গলা, কান-ঢাকনি ও বুকে থাকে গাঢ় আঁশের মতো ডোরা ও নীলচে আভা। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই চোখ বাদামি।
সরু ও লম্বা ঠোঁটের রং কালচে-বাদামি। পা ও পায়ের পাতা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে অনেকটা স্ত্রী পাখির মতো।
নীল দোয়েল মাল্টার জাতীয় পাখি। মূলত দক্ষিণ ইউরোপ, উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশের আবাসিক পাখি এটি। শীতে এ দেশের প্রায় সবখানেই দেখা মেলে, তবে সংখ্যায় বেশ কম। এরা সচরাচর পাথরের ঢাল, পাথুরে নদীতট, পাথরের খাদ, উন্মুক্ত বন, পতিত জমি ও লোকালয়ে বিচরণ করে। প্রজননকাল ছাড়া অন্য সময় একাকী দেখা যায়। বাঁশের খুঁটি, মরা তাল-নারকেলগাছের শীর্ষদেশ, পুরোনো মঠ, মন্দির ও মসজিদের ছাদ বা চূড়া প্রভৃতিতে বসে থেকে শিকার খোঁজে। বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ, ছোট ব্যাঙ, টিকটিকি ইত্যাদি শিকার করে খায়। তা ছাড়া পাকা ও রসাল ফল খেতেও পছন্দ করে। এমনিতে তেমন একটা ডাকাডাকি না করলেও প্রজননকালে পুরুষ পাখি ‘টক-টক, চ্যার-চিট...’ স্বরে ডাকে।
এপ্রিল থেকে জুলাই প্রজননকাল। এ সময় এদের মূল আবাসভূমিতে খাড়া পর্বত, শিলা, দেয়ালের ফাটল বা গাছের গর্তে ঘাস, গাছের শিকড় ও চুল দিয়ে বাটির মতো বাসা বানায়। বাসা তৈরি হয়ে গেলে তাতে ৩-৫টি নীল রঙের ডিম পাড়ে। স্ত্রী একাই ডিমে তা দেয় ও প্রায় ১৫ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ে বাচ্চার যত্ন নেয় এবং ১৫-১৭ দিনে বাচ্চারা উড়তে শেখে।