জায়গাটির নাম কাজিপাড়া। ভারতের সীমানার কাছের একটি গ্রাম। এখানেই বাস করে বাংলাদেশের বিপন্ন প্রজাতির এক পাখি। নাম তার কালো তিতির। স্থানীয় লোকজনের কাছে অবশ্য পাখিটি শেখ ফরিদ নামেই পরিচিত। পাখিটি ডাকলে মনে হয়, সে শেখ ফরিদ নামের কাউকে ডাকছে। একসময় অনেক কালো তিতির ছিল এ জনপদে। কিন্তু বসতি ধ্বংস ও স্থানীয় শিকারিদের কারণে হারিয়ে গেছে অনেক পাখি। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের তেঁতুলিয়াই এ পাখির শেষ প্রাকৃতিক আবাসস্থল।
পাখিটি সাধারণত গম, ভুট্টাখেত, তিলখেত, বুনো গুল্মের ঝোপ, চা-বাগান, শণের খেত, দাঁতরাঙা ফুলগাছের ঝোপে বিচরণ করে। খুব সকালে ও শেষ বিকেলে খাবার খেতে পাখিটি একটু খোলা জায়গায় চলে আসে। তবে সব সময় দেখা গেছে, নিজেকে আড়াল করা যায় এমন গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে শেখ ফরিদ হেঁটে বেড়ায়। প্রজননের সময় পুরুষ পাখিটি বেশি ডাকাডাকি করে, তার দেখা পাওয়া কিছুটা সহজ। মেয়ে পাখিটির দেখা মেলে কালেভদ্রে। খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হলে পুরুষ পাখিটিই প্রথম ঝোপ থেকে বের হয়। এর কিছুক্ষণ পর মেয়ে পাখিটি এক-দুই পা করে বের হয়। এদের চলাফেরা গৃহপালিত মুরগির মতোই। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে মেয়ে পাখিটি দ্রুত উড়ে বা দৌড়ে পালায়।
তেঁতুলিয়ার স্থানীয় অনেক মানুষ পাখিটি শিকার করেন। পাখিটির সন্ধানে, ছবি তোলা ও সংরক্ষণকাজে সেখানে যাওয়া-আসার ফলে স্থানীয় জনগণ কিছুটা সচেতন হয়েছেন। প্রতিবারই মানুষকে বোঝানো হয়েছে। আর স্থানীয়ভাবে কাজিপাড়ার যে জমিতে পাখিটি বিচরণ করে, সেই জমির মালিক তাঁদের জমিতে তিতির শিকার নিষিদ্ধ করেছেন। ফলে শিকার একটু কমেছে।
তিতির মুরগি গোত্রের পাখি। দেখতে ও চালচলন কিছুটা গৃহপালিত মুরগির মতো। এ জন্য কাজিপাড়া গ্রামের লোকজন এ পাখিকে বনমুরগি বলেন। আমাদের পাহাড়ি বনে ও সুন্দরবনে লাল বনমুরগি বসবাস করে। বাংলাদেশে একসময় তিন জাতের তিতির পাখি ছিল। এর মধ্যে বাদা তিতির ও মেটে তিতির আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন শুধু কালো তিতির টিকে আছে। কালো তিতির কালচে বাদামি ভূচর পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ৩৪ সেমি, ওজন ৮৩০ গ্রাম। পুরুষ ও মেয়ে পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির পিঠ ঘন কালো, মধ্যে মধ্যে সাদাটে ফোঁটা আছে। মুখ কালো ও গলা সাদা। দেহতল গাঢ় কালো। মেয়ে পাখির পিঠ ফিকে বাদামি। ঘাড়ের নিচের অংশ লালচে, কানের ঢাকনি হালকা পীত রঙের। কালচে চক্ষুরেখা, কাঁধের ঢাকনিতে ও পিঠে হালকা পীতবর্ণের লম্বা ছিটা আছে। দেহতলের বাকি অংশে সাদা-কালো ডোরা আছে। ইংরেজি নাম Black Francolin।