আলতা লাল দেহের কালো ডানাওয়ালা এই পতঙ্গ এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান এক প্রজাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বাশার ও তাঁর গবেষক দল এর নাম দিয়েছেন সপ্তপদ্মরাগ। আর পশ্চিমবঙ্গে এটি আলতে নামে পরিচিত। সপ্তপদ্মরাগের ইংরেজি নাম Common Rose। Papilionidae পরিবারভুক্ত প্রজাপতিটির বৈজ্ঞানিক নাম pachliopta aristolochiae.
প্রসারিত অবস্থায় সপ্তপদ্মরাগের এক ডানার প্রান্ত থেকে অন্য ডানার প্রান্ত পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৮০-১১০ মিলিমিটার। সপ্তপদ্মরাগের দেহ আলতা লাল, তবে ওপরের অংশে বড় কালো দাগ ও নিচে কালো ছোপছিট। সামনের ডানা পুরোপুরি কালো হলেও পেছনের ডানার মধ্য অংশে সাদা ছোপ ও কিনারায় গোলাপি-বাদামি ফোঁটা রয়েছে। ডানার নিচের অংশে গিয়ে যেগুলো আরও বড় ও লাল হয়ে গেছে। পেছনের ডানায় একটি করে সুন্দর লেজ রয়েছে। চোখ, শুঁড় ও পা কালো। পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাপতি দেখতে একই রকম।
সপ্তপদ্মরাগ বাংলাদেশের সবখানেই পাওয়া যায়। তবে, সুন্দরবনসহ বিভিন্ন ধরনের বনাঞ্চল, বনের কিনারা, চষা জমি, ঝোপ-জঙ্গল ও উন্মুক্ত এলাকায় বেশি দেখা যায়। এরা মাটি থেকে ৩-৪ মিটার ওপরে ধীরে ডানা ঝাপটানোর মতো করে ওড়ে। গাছের মগডালে রোদ পোহায়। কখনো কখনো ভেজা বালু বা স্যাঁতসেঁতে মাটির রস চুষতে দেখা যায়। মধুর জন্য ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াতে ও পানির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে।
স্ত্রী প্রজাপতি ঈশ্বরমূল, গন্ধম প্রভৃতি পোষক গাছের পাতার ওপর একটি করে ডিম পাড়ে। সরু কালো দাগছোপসহ গোলাকার এ ডিমের রং লালচে। তিন দিনে ডিম ফুটে কালচে লাল কণ্টকময় শূককীট বের হয়, যার মাঝামাঝি সাদা দাগ থাকে। পাঁচবার খোলস পাল্টে শূককীট ১৪-১৫ দিনে মূককীটে রূপান্তরিত হয়। প্রায় ১১-১২ দিন পর মূককীটের খোলস কেটে নতুন প্রজাপতি বেরিয়ে আসে নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও চীনে এদের দেখা যায়।