চোখে-মুখে ক্ষোভ। তেড়িয়া ভঙ্গি। বাবার মুখোমুখি হয়েছে শাহজাদা মুস্তাফা।
—‘আমি ভাবতাম আপনার কাছে ন্যায়বিচার সবচেয়ে বড়। কোথায় আপনার ন্যায়বিচার। আমাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কে নেয় বাবা? আপনি না, হুররম সুলতান? আপনি কি আমাকে বলবেন না জাঁহাপনা? আমাদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত কে নেয়?’ কথাগুলো বলল সে চিবিয়ে চিবিয়ে।
সুলতান সুলেমান ভাবলেশহীন চোখে খানিক দেখলেন ক্ষুব্ধ পুত্রকে। তারপর অবিচল ভঙ্গিতে মুখ খুললেন।
—‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছ। যদিও আমি জানি, তুমি তোমার বাবার প্রতি অনুগত। কিন্তু ভুলে যাচ্ছ, তোমার সামনে শুধু তোমার পিতা নন। তোমার জাঁহাপনাও দাঁড়িয়ে আছেন। কোন সাহসে বেয়াদবি করছ?’
অন্দরমহলে জমে উঠেছে পিতা-পুত্রের নাটক। কীভাবে হবে পিতা-পুত্রের এই দ্বন্দ্বের সমাধান। এতক্ষণে নিশ্চয়ই অনেকে বুঝে গেছেন কথা হচ্ছিল বাংলা ডাবিং করা ‘সুলতান সুলেমান’ সিরিজ িনয়ে। দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দীপ্ত টিভির এই ধারাবাহিক।
মধ্যপ্রাচ্যের ১৬টি দেশে এটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তুরস্কের এই ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তা যেমন, তেমনি এই সিরিজ ঘিরে যেন আলোচনা ঘিরে বিতর্কেরও শেষ নেই। গ্রিসে সুলতান সুলেমানের জনপ্রিয়তা ঠেকাতে মাঠে নামেন দেশটির ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা। মেসিডোনিয়ার সংসদে আইন করে সিরিয়ালটি নিষিদ্ধ করা হয়। এরই মধ্যে তরুণ প্রজন্মের কাছে ইতিহাস ভুলভাবে তুলে ধরার অভিযোগও এসেছে এই ধারাবাহিকের বিরুদ্ধে। নেলসন মিডিয়া রিসার্চ মার্কেট স্টাডি জানাচ্ছে, ২০১৩ সালে এটি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় এবং কসোভোয় প্রথম ও সার্বিয়ায় চতুর্থ দর্শকপ্রিয় টিভি শো। সবকিছুর পরও উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাসভিত্তিক এই সিরিজের জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বগামীই থেকে গেছে। এখন ডাবিং সাবটাইটেল নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে প্রদর্শিত হচ্ছে এই টিভি সিরিজটি।
কিন্তু কে এই সুলতান সুলেমান?
ইতিহাস বলছে, সুলতান সুলেমান ১৪৯৪ সালের ৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল আয়েশা হাফসা সুলতান। মনে করা হয়, তিনি ছিলেন চেঙ্গিস খানের বংশধর। সুলতান সুলেমান ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের দশম সুলতান। সুলতান হওয়ার আগে তিনি বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর ছিলেন।
পিতা সুলতান প্রথম সেলিমের মৃত্যুর পর তিনি ২৬ বছর বয়সে মসনদে বসেন। ৪৬ বছরের শাসনকালজুড়ে এক মহান যোদ্ধা ও শাসক হিসেবে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। পাশ্চাত্যে তাঁর পরিচিতি ছিল ‘সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট’ হিসেবে।
১৫৬৬ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
সূত্র: অল অ্যাবাউট টার্কি, টরন্টো স্টার