প্রতি ১২ জনে একজন হেপাটাইটিস ‘বি’ বা ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকে জানেন না, তাঁদের শরীরে এই ভাইরাস আছে কি না বা থাকলেও তা কী অবস্থায় আছে। কিন্তু একটু সচেতন হলেই এ ভাইরাসগুলো প্রতিরোধ করা যায়। এ জন্য সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৮ জুলাই পালিত হয় বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। এই বছর আমাদের দেশেও তা পালিত হচ্ছে।
ঝুঁকি বেশি
* হেপাটাইটিস ‘বি’ বা ‘সি’ ভাইরাস সংক্রমিত মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশু।
* মাদক সেবনকারী ব্যক্তি, বিশেষ করে যাঁরা ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করেন।
* বিপরীত বা একই লিঙ্গের সঙ্গে অনিরাপদ যৌন মিলনকারীদের বা বহুগামী লোকদের মাধ্যমে।
* কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীদের।
* হিমোফিলিয়া বা রক্ত রোগজনিত রোগী, অর্থাৎ যাঁদের রক্ত গ্রহণ করতে হয় বারবার।
* পরীক্ষা ছাড়া রক্ত গ্রহণকারী।
* জীবাণুমুক্ত না করে সার্জিক্যাল বা ডেন্টাল অস্ত্রোপচার করলে।
হেপাটাইটিসের লক্ষণ
শরীরের কোনো লক্ষণ ছাড়াই যেমন হেপাটাইটিস হতে পারে, আবার জন্ডিস বা চোখ, শরীর বা প্রস্রাব হলুদ হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া হঠাৎ বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, দুর্বলতা, ক্লান্তি বোধ করা, খাবারে অরুচি, অনীহা কিংবা তীব্র দুর্বলতা। শরীরে চুলকানি, কখনো জ্বরজ্বর ভাব বা জ্বরের মাধ্যমে সূত্রপাত হতে পারে। এমনকি পায়ে বা পেটে পানি চলে আসতে পারে। এ ছাড়া তীব্রভাবে আক্রান্ত হয়ে রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন।
চিকিৎসা
হেপাটাইটিসের লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে এটা হেপাটাইটিসের লক্ষণ কি না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হেপাটাইটিস শনাক্ত করে এর কারণ জেনে চিকিৎসা শুরু করলে লিভারের বিকলতা বা মৃত্যুর হাত থেকে বা আশঙ্কা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
প্রতিরোধের উপায়
১. প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ লোক হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। অথচ টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। চার ডোজ টিকা নিতে হয়। সরকার অবশ্য ২০১০ সাল থেকে দেশের সব শিশুকে এ টিকা দিচ্ছে। কিন্তু এর আগে জন্মগ্রহণকারীদের এই টিকা দেওয়া হয়নি। তাই দেরি না করে টিকা দিন। তবে টিকা দেওয়ার আগে এইবিএসএজি পরীক্ষা করে দেখুন। যদি এর মান নেগেটিভ থাকে, তাহলে আর দেরি নয়, টিকা নিন।
২. রক্ত গ্রহণের আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে যে এই রক্ত ভাইরাসমুক্ত।
৩. ডিসপসিবল সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
৪. হেপাটাইটিস ‘বি’ পজিটিভ মায়ের শিশু জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাকে টিকা ও অ্যান্টিবডি দিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে।
৫. ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক বা আচরণ পরিহার করতে হবে।
৬. ব্যক্তিগত ব্যবহার করা ট্রুথব্রাশ, রেজর, নেইল কাটার ইত্যাদি অন্যকে ব্যবহারে নিষেধ করতে হবে।
৭. সেলুন, বিউটি পার্লারে নাক, কান ফোড়ানোর সময় বা চুল কাটার সময়, শেভ করা জীবাণুমুক্ত জিনিসপত্র ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৮. বাচ্চাদের হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাসের টিকা দিতে হবে।
৯. বিশুদ্ধ পানি ও খাবার গ্রহণ করতে হবে।
১০. মদ্যপান ও অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করতে হবে।
১১. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
১২. ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
১৩. চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। আর শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খেতে হবে এবং তা অবশ্যই হতে হবে ফরমালিন মুক্ত।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।