বাংলা আ্যাপারেল
নারায়ণগঞ্জে সুতার দাম কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম ওঠানামার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারেও। ১৫ দিনের ব্যবধানে সুতার দাম কমেছে প্রকারভেদে প্রতি পাউন্ডে ৪ থেকে ৬ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১০ কাউন্টের সুতা বিক্রি হচ্ছে প্রতি পাউন্ড ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। ১৫ দিন আগেও এর দাম ছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। একই পরিমাণ ২০ কাউন্টের সুতা ৫৪ থেকে ৫৮ ও ৩০ কাউন্টের সুতা ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে পাউন্ডপ্রতি ২০ ও ৩০ কাউন্টের সুতার দাম ছিল যথাক্রমে ৫৮-৬০ এবং ৯৫-১০০ টাকা।
টানবাজারে গতকাল ৪০ কাউন্টের সুতা প্রতি পাউন্ড বিক্রি হয় ১০৮ থেকে ১১৫ টাকা দরে। গত মাসের শেষ দিকে যা লেনদেন হয়েছিল ১১২ থেকে ১১৮ টাকায়। বর্তমানে প্রতি পাউন্ড ৫০ কাউন্টের সুতা ১৫০ থেকে ১৫৮ টাকা দরে লেনদেন হচ্ছে। ১৫ দিন আগে বেচাকেনা হয়েছিল ১৫৩ থেকে ১৬০ টাকায়। সে হিসাবে এ সময়ের ব্যবধানে সুতার দাম কমেছে প্রতি পাউন্ডে ৪ থেকে ৫ টাকা।
টানবাজারে প্রতি পাউন্ড ৬০ কাউন্টের সুতা বিক্রি হয় ১৩৭ থেকে ১৪৫ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৮ টাকা। তবে অপরিবর্তিত থেকে ৮০ কাউন্টের সুতা কাউন্টপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।
দেশের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী তুলা আমদানি করেন ভারত থেকে। ভারত থেকে তুলার এলসি করলে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পণ্যটি পাওয়া যায়। কিন্তু আফ্রিকা বা ইউরোপের কোনো দেশ থেকে তুলা এলসি করে আনতে গেলে সময় লাগে প্রায় দুই মাস। এ কারণে ব্যবসায়ীদের কাছে ভারত থেকে তুলা আমদানিই বেশি করে থাকে।বাংলাদেশের স্পিনিং মিলগুলো একসঙ্গে তুলা আনার জন্য এলসি খোলায় তুলার সংকট দেখা দেয়। এ সুযোগে ভারত তুলার দাম বাড়িয়ে দেয়।
হাজী হাসেম স্পিনিং মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ার্ন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জানান, বাংলাদেশের স্পিনিং মিলগুলো ভারত, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে তুলা আমদানি করে থাকে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম কিছুটা কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে সুতায়।
টানবাজারের এমএস আজাদ অ্যান্ড ব্রাদাসের স্বত্বাধিকারী বলেন টানবাজারের সুতা ব্যবসার সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে বন্ডের সুতা খোলা বাজারে আসা। বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানায় ব্যবহারের জন্য আনা এলসির সুতা খোলা বাজারে বেচাকেনা হওয়ায় টানাবাজারে দেশী সুতা ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছেন।
বাংলাদেশের স্পিনিং মিলগুলোয় যে সুতা উৎপাদন হয়, তা দিয়ে চাহিদা মেটানোর পর আরো উদ্বৃত্ত থাকে। কিন্তু কতিপয় আসাধু ব্যবসায়ী ব্যাক টু ব্যাক এলসির জন্য আনা সুতা চোরাইপথে টানবাজারে বিক্রি করছে। আর ব্যাক টু ব্যাক এলসির সুতা মানের দিক থেকে কিছুটা উন্নত হওয়ায় তাঁতিরা তা ব্যবহার করছেন। ফলে দেশী মিলগুলো লোকসান গুনছে।
বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, তুলার দরবৃদ্ধির ফলে নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে সুতার বাজার অস্থির হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কয়েকদিন ধরে তুলার দাম কমতির দিকে থাকায় অস্থিরতা কাটতে শুরু করেছে। তুলার দরবৃদ্ধির কারণে মিলগুলো নানা অজুুহাতে দাম বাড়াচ্ছিল। সকালে এক রেটে পণ্য বেচাকেনা হলে বিকালে মিলগেটে তা আরেক দামে বেচাকেনা হচ্ছিল। ফলে সুতা ব্যবসায়ীরা তাদের রেট মিলাতে পারছিলেন না। নতুন তুলার মৌসুম শুরু হলে সুতার দাম স্থির হবে।
দেশী সুতার বাজার বিকাশের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্ডের সুতা।