বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। অনুষ্ঠানের আয়োজক বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভাবছি রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করব এবং এতে আপনাদের কোনো ঝুঁকি থাকবে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। সভাপতি ছিলেন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠানো ২৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশি, পাঁচজন বন্ডে বিনিয়োগকারী এবং চারটি বাংলাদেশি মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ হাউসকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বাঙালিদের চরিত্রের একটা দিক আছে। দেশপ্রেমের বিষয়টা একটু অন্য রকমের। দেশের প্রতি টানটা একটু বেশি।’ দেশপ্রেমের একটি উদাহরণও দেন মুহিত। বলেন, ‘দেখা গেছে বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ ১০ ঘণ্টা দেরি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। তারপরও তাঁরা বিমানেই আসবেন।’
তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি অত্যাচার ও কাস্টমসের টানাহেঁচড়া আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন বোধ হয় কিছুটা ভদ্র হয়েছি।’
পুরস্কারপ্রাপ্ত মাহতাবুর রহমান বলেন, সবাই বলেন যে বিদেশে প্রত্যেক বাংলাদেশিই একজন রাষ্ট্রদূত। এই দূতদের বঞ্চনার চিত্রও রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং যোগ্যতা অনুযায়ী তাঁদের ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুস সালাম, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবরার এ আনোয়ার ও ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরফান আলী।
২০১৩ সালে চালু এ পুরস্কারের স্মারক হিসেবে একটি পিতলের তৈরি ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়। প্রতিবছর এ পুরস্কারের সংখ্যা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে এ পুরস্কার নিতে আগ্রহীর সংখ্যা কমছে। গতকালের অনুষ্ঠানেও সবাই পুরস্কার নিতে আসেননি।
পুরস্কার পেলেন যাঁরা: মোট চারটি শ্রেণিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পেয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে।
দক্ষ শ্রেণিতে ‘বেস্ট রেমিটার’ পুরস্কার পেয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে ইউএই প্রবাসীদের মধ্যে মো. শফিক, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, সৈয়দ এ কে আনসারুজ্জামান, মোহাম্মদ আক্তার হোসাইন, মোহাম্মদ সেলিম ও জাগির হোসেন চৌধুরী পুরস্কার পেয়েছেন। এ শ্রেণিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে খান মোহাম্মদ মুহিবুল বারী, রাশিয়া থেকে এস এম পারভেজ ও রফিকুল ইসলাম মিয়া, যুক্তরাজ্য থেকে রায়হান আলাউদ্দিন, অস্ট্রেলিয়া থেকে শহীদ হোসেইন, চীন থেকে মো. সেলিম মিয়া, কাতার থেকে মোহাম্মদ ইসমাইল ও ইকবাল হোসেন, কুয়েত থেকে জাকির হোসেন, সৌদি আরব থেকে দেওয়ান সাদেক আফজাল ও জেড ইউ সাঈদ, নাইজেরিয়া থেকে নওশাদ আহমেদ, ফিজি থেকে আবু মোহাম্মদ জাকারিয়া এবং ফিলিপাইন থেকে আবু তাহের মোহাম্মদ আমানুল্লাহ পুরস্কার পেয়েছেন।
অদক্ষ শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছেন মোট ছয়জন। এর মধ্যে ইউএই থেকেই রয়েছেন চারজন মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মদ আজম, আবদুল ওয়াহ্হাব ও মো. শাহাব উদ্দীন। এ ছাড়া হংকং থেকে মো. মুর্শিদ উজ্জামান ও কানাডা থেকে মোহাম্মদ আলী রেজা। বন্ডে সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন ইউএই থেকে মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান, ওমর ফারুক ও জেসমিন আক্তার এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসিফ এ চৌধুরী ও আরিফ এ চৌধুরী।
পুরস্কার পাওয়া চার এক্সচেঞ্জ কোম্পানি হচ্ছে প্লাসিড এন কে করপোরেশন, ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ কোম্পানি এসআরএল, এনইসি মানি ট্রান্সফার হাউস এবং কেএমবি ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রান্সফার লিমিটেড।