‘মায়াবী দৈত্য’কে তো গড়েছেন গার্দিওলাই

Author Topic: ‘মায়াবী দৈত্য’কে তো গড়েছেন গার্দিওলাই  (Read 860 times)

Offline Shakil Ahmad

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 374
  • Test
    • View Profile
কালকের রাতটা সত্যিই বড় অদ্ভুত ছিল। সবাই আয়োজন করে বসেছিল রোমাঞ্চকর ফুটবল দেখার। টান টান উত্তেজনা, পরতে পরতে চমক, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। সঙ্গে সুন্দর ফুটবলের পসরা। তা লিওনেল মেসির সৌজন্যে ফুটবল তার কিছুটা সৌন্দর্য ছড়াল বটে; কিন্তু কাল রাতে বার্সেলোনা বনাম ম্যান সিটি ম্যাচটি কেমন যেন অদ্ভুত এক ম্যাচ হয়ে থাকল! যদিও তাতে মেসির হ্যাটট্রিক আর নেইমারের গোলে ৪-০তেই জিতেছে বার্সা।
বার্সেলোনা ছাড়ার পর এই প্রথম ন্যু ক্যাম্পে ফিরেছেন ক্লদিও ব্রাভো। ব্রাভো না টের স্টেগেন, এ নিয়ে কম টানাপোড়েন তো হয়নি এই দুই মাস আগেও। শেষে বার্সা দ্বিতীয়জনকেই বেছে নিয়েছে। টের স্টেগেন কদিন আগে এক ম্যাচে ৪ গোল হজম করে, শীর্ষ ফুটবলে মানায় না এমন অদ্ভুত কিছু ভুল করে বার্সা শিবিরের এক অংশে হাহাকার তুলে দিয়েছিলেন, আহা ব্রাভোই বুঝি ভালো ছিল।
সেই ব্রাভো ফিরলেন। এবার তাঁর শিশুতোষ ভুলে, বক্সের বাইরে অন্যায়ভাবে হাত দিয়ে গোলমুখে যেতে থাকা বল রুখে দিয়ে দেখলেন সরাসরি লাল কার্ড! বার্সেলোনায় ফেরার রাতটা একেবারেই বাজে কাটল এই গোলরক্ষকের। ওদিকে বার্সেলোনাও ম্যাচের শেষ দিকে দেখল লাল কার্ড। জেরেমি ম্যাথিউ দেখলেন। রোমাঞ্চকর ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল যেটির, সেটিই শেষ হলো দুই লাল কার্ডে।
১০ মিনিটের মাথায় জর্ডি আলবা আর ৩৯ মিনিটে জেরার্ড পিকের চোটের কারণে তুলে আনা এই ম্যাচ বারবার থামাতে হচ্ছিল একের পর এক খেলোয়াড় মাটিতে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন বলে। অথচ দুই ক্রুইফ শিষ্যের মুখোমুখি ম্যাচে সবাই দারুণ ছন্দের এই ধ্রুপদি সুরের নাচই দেখতে চেয়েছিল যেন। বারবার তাল কেটে যাওয়া ম্যাচ যখনই রং হারাচ্ছিল, ভাগ্যিস ঝলসে উঠলেন মেসি!
দশজনের দল, তার চেয়েও বড় কথা দ্বিতীয় গোলরক্ষক নিয়ে সুবিধাই করতে পারছিল না সিটি। আর বার্সার ঝোড়ো আক্রমণের মুখে ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎই এলোমেলো রক্ষণ তো ছিলই। সত্যি বলতে কি, মেসির প্রথম দুটি গোলই এমনই দুটি ভুলের পুরো সুযোগ নেওয়া। তৃতীয় গোলটিও তা-ই।
ন্যু ক্যাম্পে ফিরে আসাটা পেপ গার্দিওলার জন্যও আরও একবার দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে থাকল। আবারও তাঁর হাতে গড়া শিষ্যই গুঁড়িয়ে দিল সব।
মেসির প্রতিভা আর সম্ভাবনা নিয়ে কোনো প্রশ্নই ছিল না। তবে বাস্তবতা হলো, ২০০৮ সালে বার্সায় গার্দিওলা যুগ শুরুর আগে মেসির মৌসুম সেরা গোল সংখ্যা ছিল ১৭টি। গার্দিওলা আসার আগের মৌসুমেও (২০০৭-০৮) ৪০ ম্যাচে মেসির নামের পাশে ছিল ১৬ গোল। গার্দিওলা মেসিকে নিয়ে একটা নতুন কিছু করতে চাইলেন। প্রথাগত উইঙ্গার বা স্ট্রাইকার কোনো ভূমিকাতেই না খেলিয়ে দিলেন পূর্ণ স্বাধীনতা। আর সেটাই কী করে বদলে দিল সব। বার্সাকে, মেসি; ফুটবলকেও!
টানা চারবারের বর্ষসেরা হলেন মেসি, ওই চার বছরে ১৪টি ট্রফি, যার মধ্যে দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগও আছে, জিতে গার্দিওলা গেলেন সাময়িক স্বেচ্ছা নির্বাসনে।
তারপর ২০১৫ সালে বায়ার্নের কোচ হয়ে যখন ফিরলেন, গার্দিওলা এবার অন্য ডাগআউট থেকে মেসিকে দেখার প্রতিক্রিয়ায় বললেন, 'ওর খেলা দেখাটাই এক রাজকীয় অনুভূতি!' ম্যাচের আগে জিজ্ঞেস করা হলো, মেসিকে আটকানোর মন্ত্র তো একমাত্র আপনিই জানেন। কী সেটা? গার্দিওলার সাফ জবাব, 'ওকে থামানোর কোনো উপায়ই নেই। পৃথিবীর কোনো রক্ষণের সাধ্য নেই।'
সেবার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে বার্সার ৩-০ গোলের জয়ে মেসির জোড়া গোল। দুটিই চোখে লেগে আছে সবার। এর একটি, জেরোম বোয়াটেংয়ে ধপাস করে পড়ে যাওয়া আর ম্যানুয়েল নয়্যারকে চিপ করে বোকা বানানো...বার্য়ান কোচ গার্দিওলার সহ্য হয়নি। কিন্তু সুন্দর ফুটবলের কট্টরপন্থী সমর্থক গার্দিওলা নিশ্চয়ই খুশিও হয়েছিলেন। আহা, এমন গোল!
দুবার ন্যু ক্যাম্পে এসে সাত গোল হজম করে গেলেন গার্দিওলা। পাঁচটি গোলই সেটি সেদিনের ছোট্ট মেসির, যাকে নিজ হাতে গড়েছেন গার্দিওলা। যে এখন ফুটবলের বিরাটাকায় এক দৈত্য। যে দৈত্যের ভয়ে প্রতিপক্ষ সিঁটিয়ে থাকে। আবার যে দৈত্য ভয়াল-দর্শন নয়। তিনি দেখতে মায়াবী, তাঁর ফুটবলও কী এক মায়া জাগানিয়া!