বাংলাদেশ জিতলে টেস্ট ক্রিকেটের জন্যই ভালো হতো

Author Topic: বাংলাদেশ জিতলে টেস্ট ক্রিকেটের জন্যই ভালো হতো  (Read 1008 times)

Offline Tofazzal.ns

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 314
  • Test
    • View Profile
চট্টগ্রাম টেস্টে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েও জিতে গেছে ইংল্যান্ড দল। দারুণ জয়ে তারা উদ্বেলিত। এই জয় অনেকের চোখেই নিজেদের দেখা ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা জয়। ইংলিশ গণমাধ্যমেও চলছে ইংল্যান্ডের চট্টগ্রাম টেস্ট জয়ের বন্দনা।

এই জয়কে ইংলিশ দলের ‘মানসিক শক্তি’ ও ‘দৃঢ়তা’রও জয় বলা হচ্ছে। তবে ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফে লেখা এক কলামে জোনাথন লিউ লিখেছেন, ‘এই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলে টেস্ট ক্রিকেটেরই ভালো হতো।’

কোনো সন্দেহ নেই, এই জয়ে উৎসবে মেতে উঠত গোটা বাংলাদেশ। এই জয়টি সন্দেহাতীতভাবেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক ঐতিহাসিক অর্জন হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য, উৎসব করতে পারেনি বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান, সাব্বির রহমানরা পারেননি ইতিহাস সৃষ্টি করতে। ২০০৩ সালে মুলতান কিংবা ২০০৬ সালে ফতুল্লা টেস্টের মতোই ইতিহাসে এই হার লেখা থাকবে ‘স্রেফ একটি হার’ হিসেবেই।

টেলিগ্রাফের সাংবাদিক লিউয়ের মতে, ‘চট্টগ্রামে বাংলাদেশ জিতলে তা শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের জন্যই আনন্দের বার্তা নিয়ে আসত না, টেস্ট ক্রিকেটে ঘোষিত হতো নতুন এক শক্তির আগমনবার্তা। বাংলাদেশের জয় ক্রিকেটের অন্যান্য দুর্বল ও ক্ষুদ্র দেশগুলোকেও অনুপ্রাণিত করত দারুণভাবে। বাংলাদেশের জয় ক্রিকেটের ঐতিহ্যের নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতো, নতুন এক গল্পগাথার জন্ম দিত। যে গল্পগাথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ত। আলোচিত হতো।’

খেলাধুলায় জাতীয়তাবাদের অনুপ্রবেশ নিয়েই মূলত লিউয়ের এই লেখাটি। এ নিয়ে তিনি নিজের ভাবনা তুলে ধরেছেন চট্টগ্রামে সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড টেস্টের প্রসঙ্গে। লেখাটির শুরুতেই তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ জিতলে কী খুব খারাপ হতো!

লিউ চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ অংশ দেখার অনুভূতি বর্ণনা করেছেন, চট্টগ্রাম টেস্টে ইংল্যান্ডের কষ্টার্জিত জয়ের পর আমার মনে অদ্ভুত অথচ ‘নিষিদ্ধ’ এক ভাবনা ভর করল। টেস্টটা বাংলাদেশ জিতে গেলে কী হতো!’ সঙ্গে সঙ্গে আমি এমন চিন্তার জন্য নিজের ওপরই বিরক্ত হলাম। তবে এটা ঠিক বেন স্টোকসের দুই বলে বাংলাদেশের শেষ দুটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আমার মধ্যে এক ধরনের অদ্ভুত আবেগের দ্বন্দ্ব কাজ করছিল। যতক্ষণ খেলা দেখছিলাম, আমি ইংল্যান্ডের জয়ই চাচ্ছিলাম। একই সঙ্গে আমার মধ্যে ভাসা ভাসা ভাবে একটা তত্ত্বও কাজ করছিল যে বাংলাদেশ যদি ২৮৬ রান তাড়া করে ফেলতে পারে, সেটি যেকোনো মূল্যেই ভালো হবে।’

এ মাসের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ব্রিটিশদের উদ্দেশে বলেছেন, “আপনি যদি বিশ্ব নাগরিকতায় বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনার নির্দিষ্ট কোনো নাগরিকত্বই নেই।” লিউ মনে করেন এ বক্তব্যের মাধ্যমে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলতে চেয়েছেন, কোনো দেশের প্রতি আনুগত্য অন্য সব ধরনের আনুগত্যকে ছাপিয়ে যায়! দেশের প্রতি অনুগত হতে হলে আপনার আদর্শকে ছাপিয়ে যেতে হবে, ধর্মকে ছাপিয়ে যেতে হবে, এমনকি মানবিকতার মৌলিক দিকগুলোও ছাপিয়ে যেতে হবে। সবার জিততে চাওয়া নিয়ে পৃথিবী জুড়ে যে চিন্তা, সেটি বিপজ্জনক কল্পনা —ব্রিটেনকে জিততেই হবে এবং সেটি হলে তো কাউকে না কাউকে অবশ্যই হারতে হয়।

লিউয়ের মতে, তেরেসার বক্তব্য যদি ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে মিলিয়ে ভাবা হয়, তাহলে তাঁর যুক্তি হলো বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডকে জিততেই হবে। সেটি যেভাবেই হোক।
তাই ইংল্যান্ডকে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততেই হতো। যেকোনো মূল্যে। কিন্তু এতে করে অন্যান্য সূক্ষ্ম ভাবনা ,মানুষের ভেতরকার দুর্বোধ্যতা, মুক্ত ভাবনার জায়গা কোথায়? যাদের পূর্ব পুরুষ বাংলাদেশি সেই ওই ব্রিটিশ নাগরিকদের তখন কী হবে! তাঁদের কী হবে, যারা ইংল্যান্ডের সাফল্য দেখতে চান, আবার চান টেস্ট ক্রিকেটেরই ভালো হোক! মুশফিকুর রহিমের ওই মুখ যাঁর পছন্দ, তাঁরই বা কী হবে!’
Muhammad Tofazzal Hosain
Lecturer, Natural Sciences
Daffodil International University