উত্সবের রাত বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেকই এসেছে। কিন্তু এমন উত্সবের রাত আসেনি। যে রাতে কোচ-খেলোয়াড়-কর্মকর্তা—সবাই মিশে গেলেন আনন্দস্রোতে। এই উত্সব মাঠ ও মাঠের বাইরের সাফল্য উদ্যাপনে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট জয় একই সঙ্গে বহু বিজয় দেখাল বাংলাদেশকে। টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে প্রথম হারানোর স্বাদ তো আছেই, বাংলাদেশকে ক্রিকেটের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণের চ্যালেঞ্জও কি জেতা হয়ে গেল না তাতে! নিরাপত্তাশঙ্কার কারণে ইংল্যান্ড আসবে না আসবে না করে শেষ পর্যন্ত এল। তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্টের সিরিজ খেলে কাল দুপুরে দলের বেশির ভাগ সদস্য চলে যাবেন ভারতে। বাকিরা ফিরবেন দেশে। মাঠ ও মাঠের বাইরে—সব দিক দিয়েই তাই সফল একটা সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ।
তো এমন সাফল্যের উদ্যাপন তো চাই! পরশু রাতে সে কারণেই ‘পার্টি’ জমে ওঠে র্যাডিসন হোটেলে। পার্টি বলতে পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের জন্মদিন ও টেস্ট জয় উপলক্ষে দুটি বিশাল কেক কাটা, সবাই একসঙ্গে নৈশভোজ করা। রাত নয়টায় শুরু হয়ে পার্টি চলেছে মধ্যরাত পর্যন্ত। এরই মধ্যে রাত পৌনে ১১টার দিকে সিঙ্গাপুর থেকে পৌঁছে উৎসবে যোগ দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। কোচ-খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানিয়ে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, সহ-অধিনায়ক তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন তিনি।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীও সে সময় সেখানে ছিলেন। মুঠোফোনে তিনিই জানালেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। খেলোয়াড়দের একদিন গণভবনে আমন্ত্রণ জানাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।’ খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা দেওয়ারও পরিকল্পনা আছে বিসিবির। ৭ নভেম্বর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই ২-৩ হাজার মানুষের ‘মেজবান’ হওয়ার কথা সে উপলক্ষে। আমন্ত্রণ জানানো হবে ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে।
এ রকম বড় সাফল্যে খেলোয়াড়দের দিক থেকে বোনাসের একটা দাবি ওঠেই। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বোর্ড। ৫ নভেম্বর পরিচালনা পর্ষদের সভা। সেখানে একটা সিদ্ধান্ত হলেও হতে পারে। তবে ম্যাচ জিতলে খেলোয়াড়েরা এমনিতেই একটা উইনিং বোনাস পান এবং সেটা এবারও পাবেন।
পরশু রাতটা হোটেলে কাটিয়ে কাল সকাল থেকেই খেলোয়াড়েরা যে যাঁর ঠিকানায় চলে যেতে থাকেন। বিপিএলের আগে এই দু-এক দিন ছুটিতে থাকবেন তাঁরা। বিদেশি কোচদের অনেকেও ফিরেছেন নিজেদের বাসায়। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেসহ কয়েকজন ২ নভেম্বর থেকে ছুটিতে যাবেন। তবে মোস্তাফিজুর রহমানসহ নতুন কয়েকজন পেস বোলারকে নিয়ে কোর্টনি ওয়ালশ আরও কয়েকটা দিন ঢাকায় থাকবেন বলে জানা গেছে।
পরশু রাত থেকেই বন্ধুবান্ধব আর পরিচিতজনদের অভিনন্দনে সিক্ত হচ্ছেন ইমরুল কায়েস। কাল বাসায় ফেরার সেই জোয়ার আরও বাড়ল, ‘বোঝেনই তো...এটা অনেক বড় অর্জন। সবাই খুব এক্সাইটেড...আমরাও। যেকোনো বিচারে এটাই তো এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অর্জন। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
মাঠের সাফল্যের সঙ্গে বিসিবির আনন্দ মাঠের বাইরের সাফল্যেও। নিরাপত্তাশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে শেষ পর্যন্ত ভালোভাবেই শেষ হয়েছে ইংল্যান্ড সিরিজ। গত সপ্তাহে ঢাকা ঘুরে যাওয়া ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শন ক্যারলও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ইংল্যান্ড সিরিজে নেওয়া নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কথায় তাই স্বস্তি,‘আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এই সিরিজ এবং আমার মনে হয় আমরা সেই চ্যালেঞ্জ জিতেছি। সিরিজ সফল করতে আমরা সম্ভাব্য সব রকম ব্যবস্থাই নিয়েছিলাম।’