উত্তরাঞ্চলের কৃষিজমিতে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে খরচ হয় ৩ হাজার ২০০ লিটার পানি। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা । আর এক কেজি তুলা উৎপাদনে পানির প্রয়োজন মাত্র ৬০০ লিটার।
গতকাল নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের ডায়াজ হোটেলে আয়োজিত ‘বুস্টিং কটন প্রডাকশন ইন নর্থ বেঙ্গল অ্যান্ড ইটস প্রবলেম অ্যান্ড প্রসপেক্টাস’ শীর্ষক সেমিনারে বলেন বক্তারা। বাংলাদেশ কটন ডেভেলপমেন্ট (বিসিডিবি) বোর্ড, নীলফামারী বণিক সমিতি, জেরিন টেক্সটাইল ও আরএমজি ক্রনিক্যাল যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।প্রধান অতিথি ছিলেন বিসিডিবির নির্বাহী পরিচলক ড. ফরিদ উদ্দিন।
দেশে স্বল্পমেয়াদি জাত না থাকায় কৃষকের তুলা আবাদে আগ্রহ কম। তাই দেশের ৬০ লাখ বেল তুলা চাহিদার সিংহভাগই আমদানি করা হয়। তবে আমদানিনির্ভরতা কমাতে উত্তরাঞ্চলে উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বিসিডিবির নির্বাহী পরিচালক ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) তুলা আমদানিনির্ভরতা কমাতে তুলা উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব। রংপুরে প্রায় ১০ লাখ বেল তুলা উৎপাদন সম্ভব। দেশের প্রায় সাত লাখ হেক্টর পতিত এবং কম ব্যবহূত ও ঝুঁকিপূর্ণ জমিতে ২০ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এসব পতিত জমিতে তুলা উৎপাদন করা গেলে ১০০ কোটি ডলার আমদানি ব্যয় কমানো সম্ভব। তবে তুলা উৎপাদনের ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চল সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়।
দেশে এখন ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বেল তুলা উৎপাদন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে তুলার চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ বেল। দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর লবণাক্ত পতিত জমি রয়েছে, সেখানে তুলা আবাদ বাড়ানো হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের ৬০ হাজার হেক্টর তামাক আবাদি জমি ও বরেন্দ্র অঞ্চলের কয়েক লাখ খরাপ্রবণ জমিতেও তুলা আবাদ বাড়াতে পরিকল্পনা নেয়া হবে।
জেরিন টেক্সটাইলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন স্বল্পসময়ে আবাদযোগ্য জাত উদ্ভাবন ও কৃষককে আরো লাভজনক করে তুলতে বিপণন ব্যবস্থায় উন্নতি করতে হবে। দেশে ৬০ লাখ বেল তুলা আমদানিতে অন্তত ৩০০ কোটি ডলার ব্যয় করে। যদি এক-তৃতীয়াংশ আমদানি কমাতে পারি, তবে ১০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে।
নীলফামারী শিল্প ও বণিক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফরহানুল হক বলেন, তুলা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হলে সরকারিভাবে ভর্তুকি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ,নেদারল্যান্ডসের পিইউএমের জ্যেষ্ঠ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান স্থানীয় কৃষক প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।