বাংলাদেশের জিনসের ইউরোপ বিজয়

Author Topic: বাংলাদেশের জিনসের ইউরোপ বিজয়  (Read 789 times)

Offline Bipasha Matin

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 300
  • Don't judge me, you can't handle half of what I've
    • View Profile


    প্রচ্ছদ
    অর্থনীতি
    পোশাক শিল্প

বাংলাদেশের জিনসের ইউরোপ বিজয়
শুভংকর কর্মকার | আপডেট: ০২:০৩, ডিসেম্বর ০২, ২০১৬ | প্রিন্ট সংস্করণ
১ Like

 
 
 
 
 
 

ইউরোপের বাজারের পাশাপাশি দেশের ভেতরেও পোশাকের বাজার জিনসের দখলে। তরুণ প্রজন্মের সবচেয়ে প্রিয় পোশাক জিনস। ছবিতে বাংলাদেশের মডেল (বাঁ থেকে) অর্ণব, তোর্সা, নীল ও মুন l সুমন ইউসুফ*যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিনস রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান চীন ও মেক্সিকোর পরেই * দেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া পোশাক জিনস

গত শতাব্দীর মাঝামাঝি আমেরিকা থেকে জিনস-বিপ্লবের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ এখন সেই বিপ্লবের সম্মুখসারিতে। সারা বিশ্বে জিনস বা ডেনিম পোশাক তৈরিতে বাংলাদেশ শীর্ষ তিন দেশের একটি। ইউরোপের বিশাল বাজারে জিনস রপ্তানিতে বাংলাদেশই শীর্ষে। শুধু বিদেশে রপ্তানিই নয়, অভ্যন্তরীণ বাজারেও এই পোশাকের একচ্ছত্র প্রভাব। বাংলাদেশে তারুণ্যের পোশাক হয়ে উঠেছে জিনস।

ডেনিম নামের বিশেষ কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাকের নাম জিনস। শুরুতে ডেনিম কাপড়ে তৈরি প্যান্টকে জিনস বলা হতো। এখন জিনস শব্দটি এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, অনেকে ডেনিম কাপড়কেই জিনস নামে চেনেন।

আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণে প্যান্টের পাশাপাশি ডেনিম কাপড় দিয়ে এখন ছেলে ও মেয়েদের শার্ট ও জ্যাকেট, পাঞ্জাবি, মেয়েদের টপস, বাচ্চাদের পোশাক তৈরি হচ্ছে সমানতালে। ফ্যাশনসচেতন মানুষের হাতব্যাগ, কাঁধে ঝোলানোর ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, এমনকি পায়ের জুতায়ও স্থান নিয়েছে ডেনিম কাপড়।

ইউরোপে রপ্তানিতে শীর্ষে

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে জিনস বা ডেনিম পোশাক রপ্তানিতে এখন শীর্ষ স্থানে বাংলাদেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম পোশাক রপ্তানিতে চীন ও মেক্সিকোর পর তৃতীয় অবস্থানটি বাংলাদেশের। বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কিংবা পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর কাছে পৃথকভাবে ডেনিম পোশাক রপ্তানির পরিসংখ্যান নেই। তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশই যায় ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে আমদানিকারকদের কাছ থেকেই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে তুরস্ককে পেছনে ফেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ডেনিম পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে পৌঁছায় বাংলাদেশ। সে বছর ৯৩ কোটি ৯০ লাখ ইউরোর (১ ইউরোয় ৮৬ টাকা) ডেনিম রপ্তানি করে বাংলাদেশ। পরের বছর ২৫ শতাংশ বেড়ে ডেনিম পোশাক রপ্তানি ১১৭ কোটি ৬১ লাখ ইউরোতে দাঁড়ায়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন—ছয় মাসে ৫৬ কোটি ইউরোর ডেনিম রপ্তানি হয়েছে।

ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে। গত বছর দেশটিতে ৪৩ কোটি ডলারের ডেনিম পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই আয় ২০১৪ সালের ৯২ কোটি ডলারের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেনিম রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের ডেনিম পোশাক।

জিনসে কেন বাংলাদেশ এগিয়ে

জিনসে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার মূলে রয়েছে ‘ওয়াশ’, যার মাধ্যমে ডেনিম কাপড়ের রঙে গাঢ় ও হালকা শেড আনা হয়। একাধিক পোশাকব্যবসায়ী বলেন, জিনস বা ডেনিম পোশাক তৈরিতে ওয়াশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টা এমন যে ওয়াশ ছাড়া জিনস একেবারেই মূল্যহীন।

ওয়াশ করতে বিশাল যন্ত্রের সাহায্যে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পোশাককে অনেকক্ষণ ধৌত করা হয়। যন্ত্রটি দেখতে অনেকটা ওয়াশিং মেশিনের মতো, তবে আকারে অনেক বড়। পরে সিরিশ কাগজ দিয়ে ঘসে ও লেজারের সাহায্যে ওয়াশের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

বাংলাদেশে শ্রম সস্তা। তা ছাড়া গ্যাসের দাম এখনো কম। জিনস ওয়াশে প্রচুর পানি লাগে, যা কিনা এখানে ‘পানির দরে’ পাওয়া যায়। সে জন্য বিদেশি ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যের জিনস তৈরি করতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার দিকে ছুটে আসছেন। এখানকার কারখানাগুলো বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিটি জিনস গড়ে চার থেকে নয় ডলারে তৈরি করে দেয়।

এখনো বড় বাজার পড়ে আছে

চট্টগ্রামের ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের মোস্তাফিজ উদ্দিন গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বের প্রতি তিনজন মানুষের একজন জিনস পরে। আর শীতপ্রধান দেশে জিনস ছাড়া তো উপায়ই নেই। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বের ডেনিমের বাজার ছয় হাজার কোটি ডলারের। সেখানে আমরা মাত্র ৩৫০ থেকে ৩৭০ কোটি ডলারের ডেনিম পোশাক রপ্তানি করি। ফলে রপ্তানি বাড়ানোর ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।’

বর্তমানে দেশের ৩০০ থেকে ৪০০ পোশাক কারখানায় ডেনিম পোশাক তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে ডেনিম কাপড় তৈরির মিল আছে ২৫টির বেশি। সেখানে মাসে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি গজ কাপড় তৈরি হচ্ছে। তারপরও চাহিদার ৪০-৫০ শতাংশ ডেনিম আমদানি করতে হয়। মূলত চীন, ভারত, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে ডেনিম আমদানি করা হয়। তবে ব্যবসায়ীরা জানালেন, দেশে নতুন তিন-চারটি ডেনিম মিল উৎপাদনে আসবে শিগগিরই।

শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলোর গন্তব্য বাংলাদেশ

জিনসে বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ডগুলো হলো লিভাই স্ট্রাউস, ডিজেল, র‍্যাংলার, রিপ্লে, হুগো বস, জি-স্টার, পেপে, টমি, জ্যাক অ্যান্ড জোনস, কেলভিন ক্লেইন, স্পিরিট। এসবের মধ্যে টমি, জি-স্টার, জ্যাক অ্যান্ড জোনস, কেলভিন ক্লেইন, স্পিরিট বাংলাদেশের কারখানা থেকে জিনস তৈরি করছে। পাশাপাশি ডেনিম কাপড়ের শার্ট, জ্যাকেট এবং বাচ্চাদের পোশাকও তৈরি হয়।

স্কয়ার ডেনিমের মহাব্যবস্থাপক সাঈদ আহমাদ চৌধুরী বলেন, ডেনিম কাপড়ের মান উন্নয়ন ঘটানোয় আগের চেয়ে ভালো করছে কারখানাগুলো। ফলে জি-স্টার, স্পিরিটের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এখন বাংলাদেশের ডেনিম দিয়েই জিনস তৈরি করছে। এত দিন তাদের পোশাক তৈরিতে অন্য দেশ থেকে কাপড় আসত।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, ‘একসময় ওভেন পোশাকে ভালো করলেও আমরা এখন নিট পোশাকে ভালো করছি। কারণ, পশ্চাৎমুখী সংযোগশিল্প অর্থাৎ নিটের কাপড় দেশেই হচ্ছে। এতে করে পোশাক তৈরির লিড টাইম কমে এসেছে। ডেনিমের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনাই হয়েছে।’

বিজিএমইএর সহসভাপতি বলেন, দেশে ডেনিম কাপড় উৎপাদনে মিলের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডেনিম পোশাক বা জিনসের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, দেশেই কাপড় পাওয়ায় দ্রুত পোশাক তৈরি করে পাঠানো যাচ্ছে। ক্রেতারা এটাই চান। অন্যদিকে ওয়াশের মাধ্যমে মূল্য সংযোজনের সুযোগ থাকায় দেশের উদ্যোক্তারাও জিনস তৈরিতে ঝুঁকছেন।

দেশের ভেতরে জিনসের বাজার

বিশ্ববাজারে গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জিনস জনপ্রিয় হলেও দেশের বাজারে পোশাকটি আশির দশকের গোড়ার দিকে তরুণদের হাতের নাগালে আসে। কারণ, তার আগে দেশের কারখানায় জিনস তৈরি হতো না, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। তাই দাম ছিল বেশি। মূলত রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোর কল্যাণেই দেশে জিনস সস্তা হয়।

দেশে কম মূল্যে জিনসের চাহিদার বড় অংশ জোগান দিচ্ছে বুড়িগঙ্গার পাশে কেরানীগঞ্জের ছোট ছোট কারখানা। এখানকার কারখানায় বিশ্বের নামীদামি ব্র্যান্ডের আদলে জিনস তৈরি হয়। ছোট ও বড়দের জিনসের পাইকারি দাম ১১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে তরুণদের জন্য ৪৫০ থেকে ৭৫০ টাকার জিনসই বেশি চলে। দেশের বাজারের ৭০ শতাংশ জিনস এখান থেকে সরবরাহ হয় বলে অনুমান কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির নেতাদের।

এ ছাড়া রপ্তানিমুখী কারখানার বাতিল ও ক্রয়াদেশের অতিরিক্ত জিনস বাজারে আসছে। নিউমার্কেট, বঙ্গবাজার, এলিফ্যান্ট রোডসহ বিভিন্ন জায়গায় এসব জিনস পাওয়া যায়। এ ছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ড শপগুলো জিনস তৈরি করছে। তাদের ক্রেতা মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকেরা।

দেশে জিনসের সবচেয়ে পরিচিত ব্র্যান্ড অকাল্ট। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মুশফিক হাসান বলেন, সব বয়সের মানুষ এখন জিনস পরছে। তরুণেরা সংখ্যায় বেশি। তাঁরা হাল ফ্যাশনের বিভিন্ন ধরনের ওয়াশের জিনস পরেন। বয়স্করা হালকা ওয়াশ ও নীল রঙের জিনস পরছেন। তিনি বলেন, তরুণেরাই ফ্যাশন নিয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

মুশফিক হাসান বলেন, ‘জিনসের ট্রেন্ডে উন্নত দেশ থেকে আমরা কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই; বরং আশপাশের দেশ থেকে এগিয়ে।’

আরেক ব্র্যান্ড শপ ফ্রিল্যান্ডের পরিচালন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ পাভেল প্রথম আলোকে বলেন, বিক্রির দিক দিয়ে বিভিন্ন পোশাকের মধ্যে জিনসের অবস্থান এক নম্বরে। তিনি জানান, ফ্রিল্যান্ডের নিজস্ব কারখানায় জিনস ছাড়াও ডেনিম কাপড়ের জ্যাকেট, শার্ট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, পাঞ্জাবি তৈরি হয়।
Sabiha Matin Bipasha

Senior Lecturer
Department of Business Administration
Faculty of Business & Economics
Daffodil International University