অভিবাসন বা নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বাংলাদেশিদের প্রথম পছন্দ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা কানাডা। তবে বর্তমানের নতুন আইন ও বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কানাডা হতে পারে প্রথম ও একমাত্র পছন্দ।
কারণ, ২০১৬ ও ২০১৭ সালকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য নিজের দরজা খুলে দিয়েছে কানাডা সরকার। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ও বিভিন্ন প্রোগ্রামে এই অভিবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
লেখাপড়ায় স্নাতক ডিগ্রি, কাজের অভিজ্ঞতা থাকে এবং সেইসঙ্গে ইংরেজিতে মোটামুটি দক্ষতা থাকে, তবে যে কেউ পরিবারসহ মাত্র ছয়-সাত মাসের মধ্যে আবেদন করে কানাডায় স্থায়ী হতে পারেন।
তবে সে ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। কেননা, এই কাজে কিছু আইনগত বিষয় থাকায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তায় আবেদন করলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। তাই যাঁরা ২০১৬ সালের প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারেননি, তাঁরা দেরি না করে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারেন।
এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম :
কানাডায় অভিবাসনের জন্য সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন ৪৭৫ কম্প্রিহেনসিভ র্যাংকিং সিস্টেম (সিআরএস) পয়েন্ট প্রয়োজন, যা ইতিহাসে সবচেয়ে কম। সুতরাং যাঁদের ভালো IELTS স্কোর আছে এবং সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরাই আবেদন করতে পারবেন এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে। এটিই কানাডায় অভিবাসনের সবচেয়ে দ্রুত এবং আকর্ষণীয় প্রোগ্রাম, কারণ এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো কোটা বা সংখ্যা নির্ধারিত নেই।
যেহেতু নতুন বছরের শুরুতেই আবার ড্র হবে, তাই আবেদন করার এখনই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
প্রভিনশনাল প্রোগ্রাম :
কানাডার মোট ১১টি প্রদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রক্রিয়াও হাতে নিতে পারেন। দেশটির ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এসব প্রোগ্রাম ঘোষণা করে। প্রভিনশনাল প্রোগ্রামে আবেদনকারীর যোগ্যতাও অনেক কম প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে অনেক শর্তই শিথিলযোগ্য, আবার কিছু কিছু নতুন শর্তও আরোপ করা হয়। এখন ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রভিনশিয়াল প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এ ছাড়া খুব দ্রুত উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত নোভা স্কশিয়া এবং অন্টারিও প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম।
ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রভিনশিয়াল প্রোগ্রাম :
IELTS-এ ৫ দশমিক ৫ স্কোরসহ দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা শুধু স্নাতক ডিগ্রি থাকলেই কানাডার অন্যতম সুন্দর এই প্রদেশে আবেদন করতে পারবেন।
এই প্রোগ্রামটি চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। এগুলো হলো : এক্সপ্রেস এন্ট্রি ব্রিটিশ কলম্বিয়া—স্কিলড ওয়ার্কার, ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট এবং স্কিল ইমিগ্রেশন : স্কিলড ওয়ার্কার ও এন্ট্রি লেভেল সেমি স্কিলড।
এ দুটি প্রধান ক্যাটাগরি বাদ দিলে যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাঁরা বিভিন্ন ইনভেস্টর প্রোগ্রামের মাধ্যমেও পরিবারসহ কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেন।
এ ছাড়া স্টুডেন্ট ভিসা, ভিজিটর ভিসা ও সুপার ভিসার মাধ্যমে কানাডায় স্বল্প মেয়াদে যাওয়া যায়।
কেয়ারগিভার প্রোগ্রাম :
চাকরিসহ কানাডায় অভিবাসনের সবচেয়ে সহজ ও ভালো উপায় হচ্ছে কেয়ারগিভার প্রোগ্রাম। বাংলাদেশ থেকে এই প্রোগ্রামে আবেদন করে অতিদ্রুত কানাডায় স্থায়ী হওয়া যায়। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে পরিবারসহ কানাডায় স্থায়ী হওয়া সম্ভব।
এ ক্ষেত্রে শুধু প্রশিক্ষিত নার্সরা আবেদন করতে পারবেন। অন্যসব প্রচলিত প্রোগ্রামের মতো ৬৭ পয়েন্ট বা ১২০০ সিএসআর পয়েন্টের প্রয়োজন নেই। নার্সিংয়ে যাঁদের ডিপ্লোমা বা বিএসসি (নার্স) ডিগ্রি এবং ন্যূনতম IELTS-এ ৫ পয়েন্ট আছে, তাঁরাই সরাসরি আবেদন করে চাকরিসহ কানাডায় যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। শিশুদের শিক্ষা ও যত্ন বা বয়স্কদের সেবা দেওয়াই মূলত এদের প্রধান কাজ।
এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স হতে হবে ২১ থেকে ৫৩ বছরের মধ্যে। কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে দুই বছর। এটিই কানাডার সর্বশেষ আগে এলে আগে পাবেন পদ্ধতির ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম।
এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং সাউথ এশিয়ান ল ইয়ার্স ফোরামের বর্তমান সভাপতি ড. শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজুর সঙ্গে।
