বিদেশি উদ্যোক্তাদের না জানিয়েই ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনায় পরিবর্তন করা হয়েছে। আর এই পরিবর্তনে উদ্বেগ জানিয়ে বিদেশি উদ্যোক্তাদের পক্ষে চিঠি দিয়েছে সৌদিভিত্তিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। চিঠিতে বলা হয়েছে, আইডিবিসহ সৌদি আরব, কুয়েতের উদ্যোক্তাদের ৫২ শতাংশ শেয়ার থাকার পরও ব্যাংকটির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আইডিবির প্রেসিডেন্ট বন্দর এম এইচ হাজ্জার বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে স্বল্প সময়ের নোটিশ দেওয়ার কারণে বিদেশি পরিচালকেরা সভায় উপস্থিত হতে পারছেন না। তাঁদের না জানিয়েই ব্যাংকে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগেও কোনো ধরনের প্রচলিত নিয়ম মানা হয়নি। গত ২৪ জানুয়ারি এই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। খোঁজ নেব। তবে আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর বিদেশি কোনো পরিচালক সভায় আসেননি।’
আইডিবির প্রেসিডেন্ট চিঠিতে বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে স্বল্প সময়ের নোটিশে পরিচালনা পর্ষদের সভা ডাকা একটি সাধারণ চর্চায় পরিণত হয়েছে। এর ফলে বিদেশি পরিচালকেরা সভার নথিপত্র পর্যালোচনা এবং সভায় অংশ নিতে পারছেন না। অনেক সময় সভা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে সভার নথিপত্র দেওয়া হচ্ছে। এত কম সময়ের নোটিশে গুরুত্বপূর্ণ সভাটিতে আইডিবির প্রতিনিধি উপস্থিত হতে পারেননি। এ কারণেই সাম্প্রতিক পরিবর্তনে আইডিবির অবস্থান জানাতেই চিঠিটি দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে আইডিবির প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের ২০ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের শেয়ারের পরিমাণ ৫২ শতাংশ। পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, স্বতন্ত্র পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি শেয়ারধারীরা মনে করেন, তাঁদের হাত থেকে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় বিনিয়োগকারী ও স্বতন্ত্র পরিচালকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকে উচ্চপর্যায়ের এই সাম্প্রতিক পরিবর্তন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের না জানিয়ে এবং তাঁদের অমতে করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাতে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম কোনো বিষয় আমার নজরে আসেনি।’
দেশি-বিদেশি যৌথ উদ্যোগে দেশে ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ৭০ শতাংশ হলেও বর্তমানে তা ৫২ শতাংশে নেমে এসেছে।
গত বছর শেষে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক ১ কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। শাখা রয়েছে ৩১৮টি। ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ৬৮ হাজার কোটি ও ঋণের পরিমাণ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।