‘মেয়রের গুলিতেই সাংবাদিক শিমুল নিহত’

Author Topic: ‘মেয়রের গুলিতেই সাংবাদিক শিমুল নিহত’  (Read 785 times)

Offline Md. Rasel Hossen

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 299
  • Test
    • View Profile
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মীরুর ছোড়া গুলিতেই সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল নিহত হয়েছেন। শনিবার শিমুলের জানাজাপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন একথা বলেন। এমপি বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জেনেছি, বাড়ি থেকে মীরু নিজে তার শটগান দিয়ে পরপর পাঁচটি গুলি করেন। যার একটি শিমুলের চোখ ও মাথায় লাগে।’ মেয়র মীরুকে দ্রুত গ্রেফতার, এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি জানান স্বপন।

শনিবার শিমুল ও তার নানী রোকেয়া বেগমকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানিয়েছেন স্বজন ও সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজারও মানুষ। শাহজাদপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও মাদলা-কাকিলামারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে মাদলা কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়। এদিন স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করেছেন শাহজাদপুরবাসী। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পৌর এলাকার সব দোকানপাট, কল-কারখানা, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল যান চলাচল। এমনকি রিকশা-ভ্যান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও চলাচল করেনি। এ সময় বিভিন্ন রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে হরতাল সমর্থকরা। ক্ষণে ক্ষণে খণ্ড খণ্ড মিছিলে শাহজাদপুর পরিণত হয় মিছিলের শহরে। সংবাদকর্মীদের বুকে ছিল কালো ব্যাজ। সাংবাদিক শিমুলকে হত্যা ও ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ এবং স্থানীয় সাংবাদিকরা এ হরতালের ডাক দিয়েছিলেন। এদিন শিমুল হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশেই।

শিমুল হত্যার ঘটনায় পুলিশ শনিবার ভোরে আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরা হলেন- ছয়আনি গ্রামের করিম বক্সের ছেলে এজাহারভুক্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা কেএম নাসির উদ্দিন, বাড়াবিল গ্রামের আলমগীর হোসেন, নলুয়া গ্রামের আশরাফ ভূঁইয়া, নাজমুল খাঁ ও শক্তিপুর গ্রামের জহির শেখ। শাহজাদপুর থানার ওসি রেজাউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মীরুর দুই ভাই হাসিবুল হক পিন্টু ও হাবিবুল হক মিন্টুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মীরু পলাতক রয়েছেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় শিমুল ও তার নানী রোকেয়ার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় শাহজাদপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। এর আগে সেখানে সংসদ সদস্য ও শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিবুর রহমান স্বপন, সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) আবুল হাসনাত, উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলিমুন রাজিব, ওসি রেজাউল হক, সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম, সমকালের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক তপন দাস, সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফজল এ খোদা লিটন ও শিমুলের ছোট ভাই আজাদ বক্তব্য দেন। পরে তারা (তপন দাস বাদে) জানাজায় শরিক হন। জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ হাজারও মানুষ অংশ নেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় জানাজা হয় মাদলায়।

গুলি করেন মেয়র : জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হাসিবুর রহমান স্বপন এমপি বলেন, শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনো দ্বন্দ্ব বা বিভেদ নেই। মেয়র নিজে ও তার দুই ভাই তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে পৌর শহরে সন্ত্রাস করছিলেন। স্থানীয়রা সেদিন মনিরামপুরে তার বাড়ির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ জানালে মেয়র ও তার ভাইয়েরা গুলি চালান। সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি শিমুল। এ সময় মেয়র পরপর পাঁচটি গুলি ছোড়েন। যার একটি শিমুলের চোখ ও মাথায় লাগে। স্বপন অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনেই গুলি চালিয়েছেন পৌর মেয়র। আবার পরদিন পুলিশের সহযোগিতা নিয়েই বাড়ি ছাড়েন ও অজ্ঞাত স্থানে চলে যান তিনি।

সাবেক এমপি চয়ন ইসলাম বলেন, শাহজাদপুরের রাজনীতি এতদিন সুস্থ ছিল। মেয়রের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণেই নিজেও বিতর্কিত হয়েছেন, দলকেও বিতর্কিত করেছেন। আওয়ামী লীগ কখনোই এর দায় নেবে না। তিনি মীরুকে দ্রুত গ্রেফতার করে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) আবুল হাসনাত বলেন, মেয়রকে বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি তার শটগান থেকে গুলি ছোড়েন। ৪৩ রাউন্ড গুলিসহ ওই শটগানটি জব্দ করা হয়েছে। শাহজাদপুর থানার ওসি রেজাউল হক মেয়রকে পালাতে সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

ভিডিও নিয়ে তোলপাড় : সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ছিল। লাঠি হাতে বেশ কয়েক যুবক দৌড়াচ্ছে। একপর্যায়ে ছয় রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় একজনকে গুলি করতে দেখা যায় (মুখের বেশিরভাগ অংশ বন্দুক ও হাতের আড়ালে)। এর পরপরই দেখা যায়, মেয়র মীরু বন্দুক হাতে হেঁটে যাচ্ছেন। ভিডিওতে থানা আওয়ামী লীগ সদস্য কেএম নাসিরকেও দেখা গেছে। ভিডিওতে পরের দিকে আহত সাংবাদিক শিমুলকে বহন করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কমল কুমার দেবনাথ বলেন, আমরা সব ধরনের প্রমাণ সংগ্রহে কাজ করছি। ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিও প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নজরে যা কিছু এসেছে তা আমরা তদন্ত সাপেক্ষে যাচাই-বাছাই করে দেখব। এরকম কোনো ভিডিও আমি দেখিনি।’

৩ দিনের শোক : ৩ দিনের শোক ঘোষণা করেছে সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাব। শুক্রবার রাতে প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফজল-এ-খোদা লিটন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে- প্রেস ক্লাবে ৩ দিন কালো পতাকা উত্তোলন, সাংবাদিকদের কালো ব্যাজ ধারণ ও প্রতিবাদ সমাবেশ।

গা ঢাকা দিয়েছেন মেয়র মীরু : শুক্রবার দুপুরে শিমুলের মৃত্যু সংবাদ শাহজাদপুরে ছড়িয়ে পড়লে মেয়র মীরু একটি প্রাইভেট গাড়িতে দ্রুত শাহজাদপুর ছাড়েন। ওই রাতে শিমুলের স্ত্রী মোছাম¥দ নুরুন্নাহার বাদী হয়ে মেয়র মীরুকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। শাহজাদপুর থানার ওসি রেজাউল হক বলেন, মেয়র যেখানেই পালান না কেন, তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এজন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। মীরু একস্থানে বেশি সময় থাকছেন না। তাই তাকে ফাইন্ড আউট করতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে।

শনিবার দুপুরে মেয়রের মনিরামপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, গেট বাইরে থেকে তালা দেয়া। খোঁজ নিয়ে জানা যায় বাড়িতে কেউ নেই।

মীরুর ফাঁসি চায় ছেলে ও স্ত্রী : শিমুলের ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সাদিক মীরুকে তার বাবার হত্যাকারী দাবি করে তাকে দ্রুত গ্রেফতার এবং তার ফাঁসির জোর দাবি করেছেন। স্ত্রী নুরুন্নাহারও একই দাবি করেন। সাংবাদিকের মামাতো ভাই ও এলাকাবাসীর দাবিও একই।

বিচার চায় সিপিজে আইএফজে : শিমুল হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিচার চেয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন অব জার্নালিস্ট (আইএফজে) ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংগঠন সিপিজে এক বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়ে দ্রুত বিচার দাবি করে। সংগঠনের এশিয়া প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর স্টিভেন বাটলার এক বিবৃতিতে বলেন, দ্রুত বিচার না হওয়ার কোনো অজুহাত দেখানো কাক্সিক্ষত নয়। আইএফজে সাধারণ সম্পাদক অ্যান্থনি বেলাঙ্গার এক বিবৃতিতে বলেন, ২০১৭ সালে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় নৃশংসতার শিকার হয়ে মারা যাওয়া প্রথম সাংবাদিক হলেন শিমুল। ২০১১ সাল থেকে এ ধরনের তালিকা তৈরির পর থেকে বিশ্বে তিনি ১০ম সাংবাদিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে। শনিবার সমিতির দফতর সম্পাদক মাহমুদুল হাসান নয়ন প্রেরিত এক বিবৃতিতে সভাপতি ফরহাদ উদ্দীন এবং সাধারণ সম্পাদক ফররুখ মাহমুদ এ দাবি জানান।

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে বৃহস্পতিবার শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে তুলে এনে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয় মেয়র মীরুর ভাই পিন্টু ও মিন্টু। এ নিয়ে বিজয়ের সমর্থক ও ছাত্রলীগকর্মীরা মেয়রের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় পৌর মেয়র ও তার ভাই শটগান দিয়ে গুলি ছোড়েন। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এদের একজন শিমুল। তাকে বগুড়া থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে শুক্রবার মারা যান। শিমুলের মৃত্যুর খবর শুনে ওইদিন সন্ধ্যায় মারা যান তার নানী রোকেয়া বেগম। শিমুলের বাবা-মার বিচ্ছেদের কারণে ৬ মাস বয়স থেকে শিমুলকে কোলেপিঠে মানুষ করেন নানী। তার সঙ্গে থেকেই সাংবাদিকতা করতেন শিমুল। শনিবার তাদের দাফনও করা হল একসঙ্গে।
Md. Rasel Hossen
Senior Lecturer in Physics
Department of Natural Sciences
Daffodil International University,
Sukrabad, Dhanmondi, Dhaka-1207, Bangladesh