উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ দরকার। স্থানীয় বিনিয়োগ না হলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। এক দশক ধরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারতের শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে। তাই বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ আছে।
গতকাল সোমবার আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজসভায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ কথা বলেন।
রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এই মধ্যাহ্নভোজসভায় ্বিশেষ বক্তা ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ফারুক সোবহান এবং সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যামচেমের সভাপতি নুরুল ইসলাম। এবারের সভার বিষয় বৈশ্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশের পরিবর্তনের মধ্যে বাংলাদেশ।
এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ভালো। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়ার প্রবৃদ্ধি আরও ভালো। এমনকি চীন ও ভারতও ভালো করছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে আরও বিনিয়োগ দরকার।
বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও কী পরিমাণ অর্থ এ দেশ থেকে রেমিট্যান্স হিসেবে চলে যাচ্ছে—এই প্রশ্ন তোলেন মির্জ্জা আজিজ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক বিদেশি কাজ করেন। কী পরিমাণ অর্থ তাঁরা দেশে পাঠান, কতসংখ্যক বিদেশি কাজ করেন, এর কোনো হিসাব নেই। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এ বিষয়ে কাজ করতে পারে। তাঁর মতে, বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। কেননা, বাংলাদেশে মাথাপিছু রেমিট্যান্স শ্রীলঙ্কার চেয়ে কম। শুধু দক্ষতার কারণেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না।
বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন ও ব্রেক্সিট প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন মির্জ্জা আজিজ। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কেমন—এর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সব রাগ যেন চীনের ওপর। এই রাগ যদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে; তবে বিশ্ববাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে। তাঁর রাগ দেখে বোঝা যায় না, ভবিষ্যতে কখন কী করবেন তিনি। ব্রেক্সিটের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পাউন্ডের বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হয়েছে। এর ফলে পাউন্ডের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে শ্রমিকের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। এতে মূল্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থেকে কম দামে বেশি পণ্য বিক্রি করতে হবে।
মোহাম্মদ জমির মনে করেন, সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। আবার বিদেশি বিনিয়োগ ছাড়া সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক মনমানসিকতা বদলাতে হবে। ব্যবসা করার পরিবেশ ও প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।
রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য আনার সুপারিশ করে মোহাম্মদ জমির আরও বলেন, বাংলাদেশকে এখন উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে অশুল্ক ও আধা শুল্ক বাধাগুলো দূর করতে হবে।
ফারুক সোবহান বলেন, বিনিয়োগ বাড়লে বাণিজ্যও বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সড়ক, রেল, বন্দরসহ অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। এ ছাড়া শ্লথগতির আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ হলো কোরিয়ান ইপিজেড। এ থেকে বাংলাদেশ শিক্ষা নিতে পারে।
ফারুক সোবহান মনে করেন, গত ১৭ বছরে কোনো গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া যায়নি। অর্থনীতির জন্য জ্বালানি দরকার। এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা পেতে কূটনৈতিক চ্যানেলে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উচিত।